হঠাৎ করে গতকাল সোমবার থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করল ভারত। দিনভর নানা গুঞ্জনের পর রাতে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য শাখা এক আদেশে বহির্বিশ্বে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গতকাল এই প্রজ্ঞাপন প্রচার করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশের বাজারে পেঁয়াজের সংকট সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। কারণ, কয়েক দিন ধরে বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। এদিকে, সরবরাহ বাড়াতে বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য এরই মধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এলসি খুলেছে। তবে এই পেঁয়াজ আসতে কিছুটা সময় লাগবে। সংশ্নিষ্ট সূত্র থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এর আগে গত বছর ২৯ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ভারত এবং ওই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয় গত ১৫ মার্চ। গত বছর কয়েক দফা পেঁয়াজের নূ্যনতম রপ্তানি মূল্য বাড়ায় ভারত। রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর বাংলাদেশের বাজারে দফায় দফায় দাম বাড়ে। গত বছর সেপ্টেম্বরে দেশের বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ২৫০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন মিরাজ শামস।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, ভারতে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার ফলে বেনাপোল, হিলি ও ভোমরা স্থলবন্দরের সীমান্তের ওপারে শত শত ট্রাকবোঝাই পেঁয়াজ আটকা পড়েছে বলে জানিয়েছেন ভারতের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও বাংলাদেশের আমদানিকারকরা।
রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা ভারত যাতে তুলে নেয়, সে বিষয়ে অনুরোধ জানানো হবে। এ ছাড়া বিকল্প বাজার থেকে আমদানির জন্য এরই মধ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পেঁয়াজের আমদানি শুল্ক্ক প্রত্যাহারের বিষয়ে এনবিআরের অপারগতার বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এ সিদ্ধান্ত এনবিআর যখন দিয়েছে, তখন ভারতের নিষেধাজ্ঞা ছিল না। এখন পরিস্থিতি বুঝে এনবিআর হয়তো বিবেচনা করবে।
রাজধানীর শ্যামবাজারের পেঁয়াজ আমদানিকারক মো. মাজেদ বলেন, এখন চীন, মিয়ানমার, মিসর ও তুরস্ক বা অন্য কোনো বিকল্প দেশ থেকে আমদানি করা হবে। মিয়ানমার ছাড়া অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আনতে এক মাস সময় লাগবে। তবে মিয়ানমার থেকে টেকনাফ বন্দর চালু হলে এক সপ্তাহে আনা যাবে। এ বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। তিনি আরও বলেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করলেও ৫০ হাজার টনের বেশি এলসি খোলা আছে। ওই পেঁয়াজের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি ভারত। আমদানি পর্যায়ে থাকা পেঁয়াজ দেশে এলে এর মধ্যে বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে বাজার স্বাভাবিক রাখা যাবে।
হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক মোবারক হোসেন বলেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় হিলি বন্দরের ওপারে প্রায় ৯০০ টন পেঁয়াজবোঝাই ট্রাক আটকা পড়েছে। এ ছাড়া আমদনি পর্যায়ে তাদের বন্দরের আরও ১৫ থেকে ২০ হাজার টন পেঁয়াজ আছে। হঠাৎ করে এই পেঁয়াজ না এলে বাজারে বড় সংকট তৈরি হবে। তিনি আরও বলেন, দেশি মজুদ পেঁয়াজ সঠিকভাব বাজারে সরবরাহ হলে দাম এখনই বৃদ্ধি পাওয়ার কথা নয়। এবার যাতে গত বছরের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়, এ জন্য পেঁয়াজের পাইকারি মোকামগুলোতে তদারকি জোরদার করা উচিত।
গতকাল দিনের বেলা রাজধানীর খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ ও আমদানি করা পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে পাইকারি বাজারের চিত্র ছিল ভিন্ন। গতকাল সকালে দেশি পেঁয়াজ ৫২ থেকে ৫৪ টাকা ও আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ ৩৮ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়। বিকেলে কেজিতে আবার দাম বেড়ে দেশি পেঁয়াজ ৫৮ থেকে ৬০ ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৪২ থেকে ৪৫ টাকায় উঠেছে। শ্যামবাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী রাকিব হোসেন বলেন, সকাল থেকে পাইকারি আড়তে পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল ছিল। হঠাৎ করে ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় বাজারে প্রভাব পড়েছে।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের পেঁয়াজের উৎপাদন ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ে করা সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ পাঁচ লাখ ২৫ হাজার টন মজুদ রয়েছে। আগামী মার্চ-এপ্রিলে নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ আসার আগপর্যন্ত স্থানীয় চাহিদা মেটাতে আরও ছয় লাখ টন পেঁয়াজের প্রয়োজন। যদিও ফেব্রুয়ারি থেকে আগাম পেঁয়াজ বাজারে আসবে। এর আগে চার মাসের পেঁয়াজের ঘাটতি মেটাতে আমদানি করতে হবে। এ অবস্থায় ভারতের বিকল্প দেশ থেকে আমদানির বিষয়টি বিবেচনা করার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
পেঁয়াজের আমদানি শুল্ক্ক প্রত্যাহারের সুপারিশ নাকচ করল এনবিআর :পেঁয়াজের আমদানি শুল্ক্ক প্রত্যাহারের সুপারিশ নাকচ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যের মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক্ক প্রত্যাহারের সুপারিশ করে। তার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার এনবিআর পেঁয়াজচাষিদের স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি তুলে ধরে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক্ক প্রত্যাহারে অপারগতা প্রকাশ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে।
এমন সময়ে এনবিআর পেঁয়াজের শুল্ক্ক প্রত্যাহারের অপারগতা প্রকাশ করেছে, যখন বাংলাদেশের পেঁয়াজ আমদানির সবচেয়ে বড় উৎস দেশ ভারত পণ্যটির রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবসায়ীরা এনবিআরকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার প্রস্তাব করেছেন।