আবাসন সংকটে ২৮ হাজার শিক্ষার্থী

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি |

কিশোরগঞ্জ শহরের প্রধান চারটি কলেজের হাজার হাজার শিক্ষার্থী তীব্র আবাসন সংকটে। বিশেষ করে কলেজ এলাকার বাইরের জেলা-উপজেলা থেকে আসা ২৮ হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন বিপর্যস্ত। এদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থীদের চলতে হচ্ছে নিরাপত্তাহীনতা ও শঙ্কার ভেতর দিয়ে। 

কলেজগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজে রয়েছেন ২৫ হাজার শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ১০ হাজারের মতো শিক্ষার্থী স্থানীয় কিংবা আশপাশের উপজেলার। বাকি প্রায় ১৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী দূর-দূরান্ত এলাকার। এই ১৫ হাজারের ৮ হাজার ছাত্রী। এদের আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে অথবা মেস ভাড়া করে থাকতে হচ্ছে। অথচ কলেজটিতে মাত্র তিনটি ছাত্রাবাস রয়েছে।

এর মধ্যে ছাত্রীদের জন্য খালেদা জিয়া মহিলা হোস্টেলে সর্বোচ্চ ৩২০ শিক্ষার্থী অবস্থান করতে পারে। অন্যদিকে ছাত্রদের জন্য ওয়াসিমউদ্দিন মুসলিম হোস্টেলে গাদাগাদি করে সর্বোচ্চ ৪৫০ জন, ওসমান গনি ছাত্রাবাসে ৪১০ জন থাকতে পারে। প্রাপ্ত হিসাবে মাত্র ১১৮০ জন ছাত্র-ছাত্রীর আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। 

কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। এ কলেজে দুটি ছাত্রীনিবাসে সর্বোচ্চ ৪২০ জন শিক্ষার্থীর আবাসন সুবিধা রয়েছে। বাকিদের প্রায় অর্ধেক স্থানীয় বা আশপাশের হলেও অন্যদের থাকতে হচ্ছে মেসে কিংবা আত্মীয়স্বজনের বাসায়। 

এ ছাড়া পৌর মহিলা কলেজের আট হাজার শিক্ষার্থীকে মেসে কিংবা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে থাকতে হচ্ছে। একটি মাত্র ছাত্রীনিবাসে শতাধিক শিক্ষার্থী থাকতে পারেন। ওয়ালী নেওয়াজ খান কলেজে প্রায় ৯ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ২৮ হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে বাইরে মেস ভাড়া করে থাকতে হচ্ছে। 

গুরুদয়াল সরকারি কলেজের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসরাম চুন্নু জানান, হাওর অধ্যুষিত কিশোরগঞ্জের ইটনা, অষ্টগ্রাম, মিঠামইন, নিকলী, বাজিতপুর, তাড়াইলসহ আশপাশের ২৫টি উপজেলার বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য গুরুদয়াল সরকারি কলেজ ও সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তি হন।

জেলা শহরের বাইরে থেকে আসা প্রায় ২৮ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন ব্যবস্থা নেই। ফলে এসব শিক্ষার্থীকে মেসে ও আত্মীয়স্বজনের বাসাবাড়িতে থেকে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হচ্ছে। মেসে থেকে পড়াশোনা করতে গিয়ে তাদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। 

চারটি কলেজের ছাত্রাবাসে গিয়ে দেখা গেছে, এখানে শয্যাসংখ্যার কোনো বালাই নেই। গাদাগাদি করে ফ্লোরে অসংখ্য শিক্ষার্থী যেন হাটবাজারে বসে আছে। যেখানে ৪২০ জন শিক্ষার্থীর থাকার কথা, সেখানে রয়েছে ৭৫০ জন। দীর্ঘদিন ধরে পুরাতন ভবনের কোনো সংস্কার করা হয়নি। ভবনগুলোর দেয়ালে ফাটল, মঝেতে ফাটল, ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে বিছানায়। বাথরুমের জন্য দীর্ঘ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। 

সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী নাদিরা বলেন, একটি কক্ষে পাঁচ-সাতজনকে থাকতে হচ্ছে। এতে ঠিকমতো লেখাপড়া হচ্ছে না। শহরের হারুয়া, ফিশারি সড়ক, লিঙ্ক রোড, পৌর কার্যালয়ের সামনের সড়ক এলাকার বিভিন্ন ছাত্র মেসে গিয়ে দেখা গেছে, ৩ হাজার থেকে ৩৫০০ টাকার একটি কক্ষে চারজন শিক্ষার্থীকে থাকতে হচ্ছে। 

গুরুদয়াল কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী রেবেকা আক্তার জানান, মেসে তারা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে থাকেন। কলেজের ছাত্রীনিবাস না থাকায় বাধ্য হয়ে তাদের মেসে থাকতে হচ্ছে। 

একই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী শামীমা আক্তার জানান, স্থানীয় বখাটেদের উৎপাতে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে মেসে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হচ্ছে। প্রায় সময়ই চোরেরা মোবাইলসহ এটা-সেটা নিয়ে যায়। তাছাড়া বাইরে থাকতে গিয়ে প্রতিমাসে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে। নিম্নবিত্ত অভিভাবকদের জন্য এ খরচ বহন করা কঠিন। 

সরকারি গুরুদয়াল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ইমান আলী জানান, কিশোরগঞ্জকে বর্তমানে শিক্ষা শহর বলা হয়। সবগুলো কলেজে অনার্স ও মাস্টারসসহ বিবিএ, এমবিএ চালু রয়েছে। তবে ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসন সংকট খুবই ভয়াবহ। তিনি বলেন, গুরুদয়াল সরকারি কলেজে দুটি নতুন হোস্টেল হচ্ছে। এতেও আবাসন সংকট কাটবে না। আরও কয়েকটি ভবন নির্মাণ হলে আবাসন সংকট থেকে শিক্ষার্থীরা রক্ষা পেতে পারে। 

পৌর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ শরীফ সাদী বলেন, শহরের কলেজগুলোতেই মেধাবীরা ভর্তি হতে চায়। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের আত্মীয়বাড়ি, মেসে থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা বাস্তবে কঠিন। প্রতিটি কলেজে তিনটি করে ছাত্রীনিবাস নির্মাণ করা হলে অবস্থার উত্তরণ ঘটতে পারে। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0054769515991211