আমেরিকায় থেকে আত্তীকৃত হওয়া সেই শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সুদূর যুক্তরাষ্ট্র থেকেও দীর্ঘ সাত বছর এমপিও ভোগ! কলেজ সরকারি হলে মার্কিন মুলুকে থেকেই আত্তীকরণ! শুনতে অসম্ভব লাগলেও এর সবই সম্ভব হয়েছে রাজবাড়ীর পাংশা সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনার শিক্ষক আইবুর রহমানের বেলায়। আর এই অসম্ভবকে সম্ভব করতে ঘুষ খেয়ে পেছন থেকে সাহায্য করেছেন কলেজটির অধ্যক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মোহা. আতাউল হক খান চৌধুরী। এমপিওর টাকা তুলতে আমেরিকায় শিক্ষক আইবুরের স্বাক্ষর করা চেকও নিজের কাছে রেখেছিলেন অধ্যক্ষ আতাউল। কিন্তু দৈনিক শিক্ষা ডটকমের অনুসন্ধানে ধরা পড়েছেন আইবুর-আতাউল দুইজনই। 

২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবরে দৈনিক শিক্ষাডটকমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে শিক্ষা প্রশাসন। হয় তদন্ত। প্রমাণ মেলে অভিযোগের। দেড় বছর পর আমেরিকায় থেকে আত্তীকৃত হওয়া প্রভাষক আইবুর রহমানের অ্যাডহক নিয়োগ বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তার নিয়োগ বাতিলের জন্য সুস্পষ্ট তথ্য চাওয়া হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কাছে। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

যদিও আমেরিকায় থাকা শিক্ষককে অবৈধভাবে বছরের বছর এমপিও বাবদ টাকা আত্মসাৎ করতে যিনি 'কলকাঠি' নেড়েছন, সেই আতাউল হক খান চৌধুরী। শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা মোহা. আতাউল হক খান চৌধুরীর চাকরি জীবনের বেশিরভাগ সময়ই কেটেছে ডিআইএতে। তাকে নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন দেখতে চোখ রাখুন দৈনিক শিক্ষাডটকমে।

২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিলে বিদেশে থেকে এমপিও ভোগ করায় সরকারের যে পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে সে পরিমাণ টাকা আইবুরকে ফেরত দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একইসাথে আমেরিকায় বসে আত্তীকৃত হওয়া ও অ্যাডহক নিয়োগ পাওয়ার ব্যাখ্যা চেয়ে শোকজ করেছিল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। অধ্যক্ষ আতাউলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশও দেয়া হয়। আইবুরের দীর্ঘ অনুপস্থিতিকে বৈধতা দেয়ায় কলেজর পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয় উপাধ্যক্ষ এ কে এম শফিকুল মোরশেদকেও। 

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানায়, আমেরিকায় বসে আত্তীকৃত হওয়া ও অ্যাডহক নিয়োগ পাওয়ার ব্যাখ্যা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দেননি আইবুর রহমান। শোকজের কোন জবাব দেননি তিনি। তাই, তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে তার অ্যাডহক নিয়োগ বাতিল করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গত ২২ মার্চ আইবুর রহমানের অ্যাডহক নিয়োগ বাতিলের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কাছে। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে তার অ্যাডহক নিয়োগ বাতিল করা হবে কিনা সে বিষয়ে তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে।

২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৬ অক্টোবর 'আমেরিকায় থেকেও সরকারিকরণ, নিয়মিত এমপিও!' শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হয় দৈনিক শিক্ষাডটকমে। অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটিতে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। দৈনিক শিক্ষাডটকমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ডিভি লটারি জিতে ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে আমেরিকায় পাড়ি জমান পাংশা কলেজের সহকারী অধ্যাপক আইবুর রহমান। আমেরিকায় বসেই ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ৫ বছরের বেশি সময় এমপিও ভোগ করেছেন তিনি। কলেজটি সরকারি হলে অ্যাডহক নিয়োগ পেতেও ছাড় দেননি আইবুর। অধ্যক্ষ আতাউল হক খান চৌধুরীকে ডলারে ঘূষ খাইয়ে অ্যাডহক নিয়োগও বাগান আইবুর।

দৈনিক শিক্ষাডটকমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিষয়টি নজরে আসে শিক্ষা প্রশাসনের। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতে তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় শিক্ষা অধিদপ্তর। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সহকারী অধ্যাপক আইবুর ও অধ্যক্ষ আতাউল হক চৌধুরী বিরুদ্ধে শুরু হয় বিভাগীয় ব্যবস্থার প্রক্রিয়া। 

২০১৮ খিষ্টাব্দের ৩ অক্টোবর অধ্যক্ষ আতাউল হক খান চৌধুরীর সাথে কথা হয়েছিল দৈনিকশিক্ষা ডটকমের পক্ষ থেকে। তখন তিনি দাবি করেন, 'আইবুর ২০১১ থেকে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর অর্থাৎ পাংশা কলেজ সরকারিকরণের প্রজ্ঞাপন জারি পর্যন্ত শিক্ষাছুটিতে ছিলেন। বেসরকারি আমলের গভর্নিং বডি তাকে শিক্ষাছুটি দিয়েছে। এরপর কলেজটি সরকারিকরণ হলে তিনি একবার দেশে ফেরেন এবং কলেজ অধ্যক্ষের নিয়ন্ত্রণে থাকা অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের অনুমোদনক্রমে আরও তিন বছর তার কোর্স শেষ করার জন্য ছুটি বাড়িয়ে নেন।'

২০১১ খিষ্টাব্দ থেকে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইবুরের এমপিও বহাল থাকলেও প্রথমে অধ্যক্ষ আতাউল হক তা দৈনিক শিক্ষাডটকমের কাছে অস্বীকার করেন। পরে প্রমাণ উল্লেখ করে ছোড়া এক প্রশ্নের জবাবে আতাউল বলেছিলেন, ‘এমপিও চালু থাকা অবৈধ নয়।’ তবে, বিধি বিধানে অধ্যক্ষের এ দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি। 

২০১১ খিষ্টাব্দ থেকে ২০১৮ খিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষক আইবুরের এমপিও চালু থাকার ব্যাপারে অধ্যক্ষ আতাউল বলেছিলেন, 'বিষয়টির সঙ্গে যুক্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।'


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003018856048584