আমেরিকায় থেকেও সরকারিকরণ, নিয়মিত এমপিও!

বোরহান হাসান নাঈম |

২০১১ খ্রিস্টাব্দের জুন থেকে সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন প্রভাষক মো: আইবুর রহমান। ডিভি লটারি জিতে আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে তার কলেজটি সরকারিকরণ হয় এবং তিনি এডহক নিয়োগ পান। শুধু তা-ই নয়। এই দীর্ঘ সময় প্রবাসে থাকলেও নিয়মিত এমপিও পেয়েছেন রাজবাড়ীর পাংশা সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনার প্রভাষক আইবুর। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সরকারি কলেজ শাখার কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, কলেজ গভর্নিংবডি, ব্যাংক কর্মকর্তা ও অধ্যক্ষ মোহা: আতাউল হক খান চৌধুরীর সহায়তায় সব অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন আইবুর। কয়েকদফায় প্রায় ২০ লাখ টাকা লেনদেন হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

জানা যায়, গত ২৯ সেপ্টেম্বর কয়েকদিনের জন্য দেশে ফিরেছেন আইবুর। পরদিনই প্রভাষক হিসেবে কলেজে যোগদান করেছেন। ১ অক্টোবর কলেজের অধ্যক্ষ আতাউল হকের কক্ষে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে অংশ নিয়েছেন আইবুর। ছিলেন কলেজের উপাধ্যক্ষও। কথিত লিয়েন, শিক্ষাছুটিসহ বিভিন্ন ধরণের ছুটি ও এমপিও সংক্রান্ত নানারকম কাগজ তৈরি করেছেন এই তিনজন।

শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মতে, স্কুল-কলেজ সরকারি করতে হলে প্রতিষ্ঠানটির সরেজমিন পরিদর্শন বাধ্যতামূলক। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ২০১৩ খ্রিস্টাব্দের ১৯ নভেম্বর পাংশা কলেজ পরিদর্শন করেন অধিদপ্তরের বেসরকারি কলেজ শাখার তৎকালীন উপ-পরিচালক মো: মেজবাহ উদ্দিন, সরকারি কলেজ শাখার সহকারী পরিচালক মো: তাজিব উদ্দিন ও মাদরাসা শাখার সহকারি পরিচালক মোহাম্মদ নাসির হোসেন। কর্তৃপক্ষের কলেজ পরিদর্শনের দিনেও আইবুর রহমান আমেরিকাতে ছিলেন। যদিও সরেজমিন পরিদর্শনের দিন সরকারিকরণের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষক-কর্মচারীকে নিজ নিজ শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদসহ উপস্থিত থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

ভাগ্যবান আইবুর:  ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে তৃতীয় বিভাগে এসএসসি পাস করেন আইবুর। ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে এমকম পাস করেন তিনি। বেসরকারি পাংশা কলেজে যোগদান করেন ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দের জুনে তিনি এমপিওভুক্ত হন।  ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরে কলেজটি সরকারিকরণ করা হয়। একই বছরে তার অনুপস্থিতিতেই ব্যবস্থাপনা বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে তার পদটি সৃজন করা হয়। গত ১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় কলেজটির অন্যান্য শিক্ষক কর্মচারীর সঙ্গে আইবুরের পদটি সৃজনের প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপনে আইবুরের সিরিয়াল ৩৩।  কাগজপত্রে আইবুর রহমানকে ২০১১ খ্রিস্টাব্দের ১২ জুন থেকে ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের ১১ জুন পর্যন্ত শিক্ষাছুটিতে দেখানো হয়। বাকী বছরগুলোর তথ্য নেই অধিদপ্তরের নথিতে।সরকারি কলেজের শিক্ষক হিসেবে অবসরে গেলে কোটি টাকা পাবেন পেনশনসহ অন্যান্য বেনিফিট। আজীবন পেনশন ভাতা পাবেন। 

কলেজের অধ্যক্ষ আতাউল হক খান চৌধুরী দাবি করেছেন, আইবুর ২০১১ থেকে ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর অর্থাৎ সরকারিকরণের প্রজ্ঞাপন জারি পর্যন্ত শিক্ষাছুটিতে ছিলেন। বেসরকারি আমলের গভর্নিংবডি তাকে শিক্ষাছুটি দিয়েছে। এরপর কলেজটি সরকারিকরণ হলে তিনি একবার দেশে ফেরেন এবং কলেজ অধ্যক্ষের নিয়ন্ত্রনে থাকা অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের অনুমোদনক্রমে আরও তিন বছর তার কোর্স শেষ করার জন্য ছুটি বাড়িয়ে নেন। ২০১১ থেকে অদ্যাবধি আইবুরের এমপিও বহাল থাকলেও প্রথমে অধ্যক্ষ আতাউল হক তা দৈনিক শিক্ষার কাছে অস্বীকার করেন।

৩রা অক্টোবর রাতে দৈনিক শিক্ষার প্রশ্নের জবাবে আতাউল বলেন, ‘এমপিও চালু থাকা অবৈধ নয়।’ তবে, দৈনিক শিক্ষার হাতে থাকা নথিতে অধ্যক্ষের দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি। গত আগস্ট মাসেও আইবুরের নামে এমপিও গেছে। সেপ্টেম্বর মাসের বেতনের চেক ছাড় হয়েছে গতকাল ৩রা অক্টোবর। 

অনুপস্থিত আইবুরের জন্য কীভাবে পদসৃজন করা হলো?  দৈনিক শিক্ষার এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ বলেন, “বিষয়টির সঙ্গে যুক্ত মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।”  

কলেজ সরকারিকরণ ও শিক্ষকদের আত্তীকরণ ও এডহক নিয়োগের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষা অধিদপ্তরের সরকারি কলেজ শাখার উপপরিচালক প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য ছুটিতে থাকায় তার মতামত পাওয়া যায়নি। তবে, সহকারি পরিচালক একেএম মাসুদ পাংশা কলেজে পদ সৃজন ও এডহক নিয়োগের বিষয়টি দেখভাল করতেন বলে জানা যায়। সিঙ্গাপুরে অবস্থান করায় মাসুদের মতামত পাওয়া যায়নি।   

জানতে চাইলে অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ শামছুল হুদা দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, একজন এমপিওভুক্ত শিক্ষক কোনও অবস্থাতেই ৭ বছর ছুটি পেতে পারেন না। এই সময়ে তার জন্য পদসৃষ্টি, এডহক নিয়োগ এবং নিয়মিত এমপিওর টাকা পাঠানো এ সবই বিধিবর্হিভুত হয়েছে। অভিযোগটি গুরুতর।  তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

আইবুরের মতামত জানার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। 

কে এই অধ্যক্ষ আতাউল

১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজের প্রভাষক হিসেবে যোগদানের কয়েক মাসের মধ্যেই শিক্ষা প্রশাসনের সবচাইতে লোভনীয় ‘পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর’ বা ডিআইএতে পদায়ন বাগান আতাউল। চাকরিজীবনে ১৫ বছরই কাটিয়েছেন ডিআইএতে! সরকারি হওয়ার পর থেকেই পাংশা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে রয়েছেন তিনি। সম্প্রতি অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। শিক্ষা প্রশাসনের সবাই তাকে বিএনপি মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলামের আত্মীয় হিসেবে জানেন। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.004065990447998