আরেকদফা কঠোর লক ডাউনের প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক |

নতুন করে ১৫ থেকে ২০ দিনের কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নের প্রস্তাব এসেছে একটি আলোচনা সভা থেকে। ব্যবসায়ী, কূটনীতিক, আমলা ও উন্নয়ন গবেষকদের এই আলোচনায় করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণে সরকারের সঙ্গে বেসরকারি খাতের সমন্বয় জোরদারেরও পরামর্শ এসেছে।

বৃহস্পতিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘রিসার্জেন্ট বাংলাদেশ: রোডম্যাপ টু রিকভারি’ শিরোনামের এই সংলাপে উন্নয়ন গবেষক আহসান এইচ মনসুর, এমসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির, ডিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, সাবেক মুখ্য সচিব আব্দুল করিম ও সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানসহ আরও কয়েকজন অংশগ্রহণ করেন। শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহও আলোচনায় অংশ নেন।

নতুন করে লকডাউনের প্রস্তাব করে নিহাদ কবির বলেন, “আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশের অর্থনীতির এখন যে সক্ষমতা রয়েছে তাতে আমরা ১৫ থেকে ২০ দিনের জন্য যদি একটা কঠোর লকডাউন দিতে পারি তাহলে পরবর্তীতে আমাদের অর্থনীতি পূনরুদ্ধারে ততটাই উপকার হবে।” [inside-ad]

এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, “এই মুহূর্তে সামনে এগিয়ে যেতে বড় ধরনের বিপদের সম্মুখীন না হতে চাইলে কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে সাধারণ ছুটির মতো বিভ্রান্তিকর কোনো তথ্য না দিয়ে একেবারে কঠিন একটা লকডাউন দিতে হবে।

“তারপর একটা পরিকল্পনা গ্রহণ করে সে অনুযায়ী ধাপে ধাপে সকল ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানসহ আমাদের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো খুলতে হবে।”

নিহাদ কবির বলেন, “আমরা এটাকে শুধু অর্থনীতির চোখে দেখছি না। আমরা ব্যবসায়ী সম্প্রদায় প্রথম থেকেই বলে আসছি যে, সবার আগে আমাদের দেশের সকল নাগরিকের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় যারা আছেন তাদের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। এটা করার পর আমরা আমাদের ব্যবসার দিকে তাকাব।

“এটা যদি আমরা করি তাহলে হয়ত ভবিষ্যতে আমরা বড় ধরনের বিপর্যয় এড়াতে পারব।”

অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, এই মুহূর্তে স্বল্প মেয়াদি লাভের কৌশল অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সহায়ক হবে না, বরং তাতে ‘বিরাট ক্ষতি’ হয়ে যেতে পারে।

“স্বল্প মেয়াদে অর্থনৈতিক লাভের জন্য যদি আমরা করোনাভাইরাস বাড়তে দেই তাহলে পরবর্তীতে মাসের পর মাস আমাদের ভুগতে হবে। এটা ব্যবসায়ী সমাজকেও বুঝতে হবে।”

ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান মনসুর বলেন, ‘এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে শিগগির সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের অন্যান্যা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বাংলাদেশ সময়মতো খুলতে পারবে না। আমরা যদি সংক্রমণ বন্ধ করতে না পারি তাহলে চীন থেকে যেসব ব্যবসায়ী অন্য দেশে বিনিয়োগের দেশ খুঁজছে, তখন সেসব ব্যবসায়ী বাংলাদেশে আসবে না। পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে উল্টো আমাদের দেশ থেকে চীনা ও জাপানিরা চলে যেতে পারে।”

পরিস্থিতির উত্তরণে নতুন করে লকডাউন দেওয়ার প্রস্তাব করে তিনি বলেন, “আরও কিছু দিনের জন্য যদি একটা কঠোর লকডাউন করা হয় তাহলে ভবিষ্যতে অনেক বেশি লাভ হতে পারে। লকডাউন দিলে কঠোর লকডাউন দিতে হবে। যদি আবার একটা লকডাউনের ঘোষণা দিয়ে এরমধ্যে বাস ট্রেন কিংবা সাধারণ মানুষের যাতায়াত অব্যাহত থাকে তাহলে কিন্তু হবে না।

“তা না হলে আমরা এমন এক দিকে যাচ্ছি যেখানে সবাই (বিনিয়োগ ও ব্যবসা) আমাদের দিকে না এসে অন্যদিকে চলে যাবে।”

তবে ভবিষ্যতের যে কোনো সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে নিতে হবে বলে মনে করেন আহসান এইচ মনসুর।

তিনি বলেন, “আমরা যদি সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নিতে না পারি তাহলে গত চার মাসে আমরা যেসব ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেগুলোর পুনরাবৃত্তি হবে। সমন্বয়ের অভাবেই আজ আমরা এই অবস্থায় চলে এসেছি। তবে ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে।”

“জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সামাজিক প্রতিশ্রুতির মাধ্যমেই এই ভয়ঙ্কর অবস্থা থেকে বের হওয়া সম্ভব।”

শ্রীলঙ্কায় দায়িত্ব পালনের সুবাদে সেখানকার পরিস্থিতি দেখার অভিজ্ঞতা থেকে সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহও।

তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কায় কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সরকারি-বেসরকারি খাত সমন্বিতভাবে কাজ করেছে।

“কিন্তু আমাদের দেশে বিশেষ করে সরকারি অধিদপ্তরগুলোর মধ্যেও সমন্বয় নেই।”

উদাহরণ দিয়ে এই রাষ্ট্রদূত বলেন, গত ১১ এপ্রিল শ্রীলঙ্কা লকডাউন তুলে দেওয়ার পর দেশটির বাসগুলোতে ব্যাপকভাবে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হয়।

সিপিডির ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “এর আগে আসলে লকডাউন দেওয়া হয়নি, তা ছিল সাধারণ ছুটি। এখন নতুন করে লকডাউন দিতে হলে প্রান্তিক ও দরিদ্র মানুষের কাছে কীভাবে খাবার পৌঁছাবেন তার একটা পরিকল্পনা করে যাওয়া দরকার।”

বৈষম্য যাতে আরও বেড়ে না যায় তাও পরিকল্পনায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, “প্রান্তিক ও সাধারণ মানুষকে বাঁচানোর জন্যই লকডাউন খুলেছে সরকার। কিন্তু এতে যদি ক্ষতি হয় বা অর্থনীতিকে আগের অবস্থায় নিয়ে যেতে সবাইকে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।”

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, সংলাপ, গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান (বিল্ড) এবং পলিসি এক্সচেঞ্জ এই সংলাপ আয়োজনে সহযোগিতা করে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0055320262908936