আরো প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি চায় সংসদীয় কমিটি, আমলাদের অদক্ষতার সমালোচনা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

এমপিওখাতের উদ্বৃত্ত টাকা দিয়ে আরও কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির সুপারিশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এমপিওভুক্তির নীতিমালা সংশোধন করে পশ্চাৎপদ জনপদের সংসদীয় আসনগুলোতে আরও দুটি করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।এমপিওভুক্তির (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) বিদ্যমান নীতিমালায় ত্রুটি থাকার অভিযোগ তুলে সংসদীয় কমিটিতে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া এমপিওভুক্তির জন্য গঠিত যাচাই-বাছাই কমিটির প্রধান অতিরিক্ত সচিব মো. জাবেদ আহমেদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কয়েকজন সদস্য। জাবেদ আহমেদ জামাত-শিবিরকর্মীদের সাথে শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও সভা করেছেন বলে আলোচনায় উঠে আসে।  আমলাদের অদক্ষতায় দায় কেন রাজনৈতিক দলের ঘাড়ে বর্তাবে সে বিষয়েও আলোচনা হয় প্রায় আড়াইঘন্টাব্যাপী আলোচনায়। একাধিক সদস্য দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।   

রোববার (২৪ নভেম্বর) জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ৭ম বৈঠকে এ মন্তব্য করা হয়।  কমিটির সভাপতি ডা: মো. আফছারুল আমীন এতে সভাপতিত্ব করেন। সভায় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো সংশোধন নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। 

কমিটির সদস্য হিসেবে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মো. আব্দুল কুদ্দুস, ফজলে হোসেন বাদশা,  মোঃ আবদুস সোবহান মিয়া এবং মাহী বদরুদ্দোজা চৌধুরী বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপুমনি ও সিনিয়র সচিব মো: সোহরাব হোসাইন দেশের বাইরে রয়েছেন। 

জানা গেছে, বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮’ নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এ সময় নীতিমালায় নানা ধরনের ত্রুটি থাকার অভিযোগ করা হয়। এতে বলা হয় যে দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা ও ভৌগলিক অবস্থানের প্রেক্ষাপটে এই নীতিমালা সঠিক হয়নি। এই নীতিমালায় দেশের অনুন্নত অঞ্চল ও উন্নত অঞ্চলকে সঠিকভাবে বিবেচনায় নেয়া হয়নি। কারণ, একটি অনুন্নত অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা আর পাশের হার কখনো উন্নত অঞ্চলের মত হবে না। নীতিমালার ত্রুটির কারণে কোন কোন এলাকার বেশি সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছে বিপরীতে কোন কোন এলাকার কোন প্রতিষ্ঠানই এমপিওভুক্ত হতে পারেনি বলে বৈঠকে অভিযোগ তোলা হয়।

কমিটির সভাপতি মো. আফছারুল আমীন বলেন, আর্থ-সামাজিক  ও ভৌগলিক বিবেচনায় পশ্চাৎপদ জনপদের সংসদীয় আসনগুলোতে কমপক্ষে আরও দুটি করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির পক্ষে কমিটির সদস্যরা মত প্রকাশ করেন। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদীয় কমিটির সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, এমপিওভুক্তি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। দেশের আর্থসামাজিক ও ভৌগলিক প্রেক্ষাপটে এই নীতিমালাটি সঠিক নয় বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে। কারণ, একটি একটি দরিদ্র ও উন্নত এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ও পাশের হার একই ধরনের হওয়ার সম্ভাবনা কম। এ জন্য আমরা এই নীতিমালা পর্যালোচনা করতে বলেছি। তিনি বলেন, যেসব এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তুলনামুলকভাবে এমপিওবঞ্চিত হয়েছে আমরা সেখানকার যোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে নতুন করে এমপিওভুক্তির জন্য বলেছি। বলতে পারেন একপ্রকার চাপ দিয়েছি।

বৈঠকে জানানো হয়, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির লক্ষ্যে অর্থ বিভাগ হতে ৮৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৬৫৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। এ বাবদ বার্ষিক ব্যয় প্রায় ৪৫৬ কোটি ৩২ লাখ ১৮ হাজার টাকা। এ ব্যয়ের পর আরও প্রায় ৪০৮ কোটি ৬৭ লাখ ৮১ হাজার টাকা অবশিষ্ট থাকবে। অবশিষ্ট টাকা দিয়ে সংশোধিত নীতিমালার আলোকে যাচাই-বাছাই করে চলতি অর্থ বছরে আরও কিছু যোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা সম্ভব হবে।

সভায় শিক্ষার গুণগত মান এবং এসডিজি-৪ অর্জনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গৃহিত পদক্ষেপ জানানো হয়। কমিটি সদস্যরা এর ওপর বিস্তারিত আলোচনা করেন।

এছাড়া বৈঠকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। স্থায়ী কমিটির সদস্যরা মতামত-সুপারিশের প্রেক্ষিতে নীতিমালা সংশোধন করার জন্য কমিটি সুপারিশ করে।

এদিকে বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, নতুন এমপিওভুক্ত (ভোক, বিএম ও কৃষি) ৫২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য তাদের ১৯ কোটি ৪৩ লাখ ৭৮ হাজার ৭০০ টাকা দরকার। আর মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন (নতুন ও বিদ্যমানসহ) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য চলতি অর্থ বছরে ৫৪৪ কোটি ৫৭ লাখ ২৭ হাজার ৮২০ টাকা প্রয়োজন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.005079984664917