আলোচিত পাঁচ আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকায় ছিল শিক্ষার্থীরা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপিসহ দলটির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট রাজপথে বড় আন্দোলন করেছে ২০১৩-১৪ খ্রিষ্টাব্দে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির এটিই ছিল সর্বশেষ বৃহত্ আন্দোলন। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনের পর থেকে রাজনৈতিক অঙ্গন দৃশ্যত শান্ত। এরপর ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে থেকে পর্যায়ক্রমে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের ফির ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রত্যাহার, সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কার, সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর করা, নিরাপদ সড়কের দাবিতে এবং সর্বশেষ ধর্ষণ ও নারী-নির্যাতনবিরোধী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকায়, এমনকি নেতৃত্বেও ছিল সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিশেষত, বামপন্থি কয়েকটি ছাত্রসংগঠন ছিল মুখ্য ভূমিকায়। গত পাঁচ বছরে ইস্যুভিত্তিক এই পাঁচটি আন্দোলন গোটা দেশকে নাড়া দিয়ে গেছে। তবে এসব আন্দোলনে মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবেও নেতৃত্বে ছিল না। বুধবার (২১ অক্টোবর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শামছুদ্দীন আহমেদ।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়ও স্থান করে নেওয়া স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের এসব আন্দোলনকে অনেকেই ‘সামাজিক আন্দোলন’ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। কারো কারো মতে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের ফির ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার, সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কার এবং সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে যে আন্দোলনগুলো হয়েছে, সেটি শিক্ষার্থীদেরই স্বার্থসংশ্লিষ্ট। তবে নিরাপদ সড়ক ও ধর্ষণ কিংবা নারী নির্যাতনবিরোধী আন্দোলন দেশের সর্বস্তরের নাগরিকসংশ্লিষ্ট। সাধারণ মানুষের হিস্যা সম্পর্কিত আন্দোলনে অতীতে রাজনৈতিক দলগুলোকেই মূল নেতৃত্বে দেখা গেলেও বর্তমানে ব্যতিক্রম চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে। রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, ব্যতিক্রম এই দৃশ্যপট সামগ্রিক রাজনীতির রসায়নেরই প্রতিফলন।

ইতিহাসবিদ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন গতকাল মঙ্গলবার সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ইতিহাসে যত আন্দোলন-সংগ্রাম, সবগুলোতেই শিক্ষার্থীরা সব সময় অগ্রণী ভূমিকায় ছিল। তরুণদের ভূমিকা প্রগতিশীল। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের সমান্তরালে আন্দোলন করেছে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু যত দিন বেঁচে ছিলেন, তত দিন দেশে রাজনীতি ছিল। ’৭৫-এর পর রাজনীতি হয়ে গেছে ক্ষমতাকেন্দ্রিক। আর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা রাজনীতিকে বিকৃত করেছেন। সামগ্রিক বিবেচনায় বর্তমানে দেশে রাজনীতি আছে বলে মনে করি না।

সৈয়দ আনোয়ার আরো বলেন, তরুণদের মধ্যে প্রতিবাদী মনোভাব রয়েছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলো তরুণদের সেই প্রতিবাদী কণ্ঠকেও নষ্ট করে ফেলছে। ক্ষমতাসীনদের যে ছাত্রসংগঠন রয়েছে, সেটি ক্ষমতার সুযোগ-সুবিধায় বেশি মনোযোগী। সরকারবিরোধী ছাত্রসংগঠনগুলো বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনে সোচ্চার থাকছে। মোট কথা, তরুণেরাই পথ দেখান, ভবিষ্যতেও দেখাবেন।

গত পাঁচ বছরে যে পাঁচটি আন্দোলন দেশ জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে মূলধারার রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর ভূমিকা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, দলগুলো যার যার রাজনৈতিক অবস্থান বিবেচনায় সুবিধামতো অবস্থান নিয়েছে। ডান-বাম কিংবা ডান-বাম মিশ্রিত কোনো কোনো দল কেন্দ্রীয়ভাবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেছে। এই দলগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে এবং তাদের অঙ্গ-সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো বিচ্ছিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের দাবির সমান্তরালে সংক্ষিপ্ত কর্মসূচিও পালন করেছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি টানা পাঁচ দিন দেশব্যাপী বিক্ষোভ করেন। ঐ সময় অন্তত তিন দিন রাজধানী প্রায় অচল হয়ে পড়ে। এ নিয়ে সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়। এরপর ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিলে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে রাস্তায় নামেন শিক্ষার্থীরা। উত্তাল হয়ে ওঠে সারা দেশ। শেষ পর্যন্ত সরকার এই দাবিও মেনে নেয়।

২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ জুলাই জাবালে নূরের দুটি বাসের রেষারেষির মধ্যে একটি বাস বিমানবন্দর সড়কের এমইএস এলাকায় রাস্তার পাশে দাঁড়ানো কয়েক শিক্ষার্থীর ওপর উঠে যায়। এতে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর টানা পাঁচ দিন সড়কে বিক্ষোভ করে নিজেদের দাবি বাস্তবায়নে সরকারের প্রতিশ্রুতি আদায় করে শিক্ষার্থীরা। এরপর গত বছরের জুলাইয়ে সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে আবারও রাস্তায় নেমে আসেন চাকরিপ্রার্থী ও শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও ধর্ষণের প্রতিবাদে লাগাতার গণজমায়েত কর্মসূচির মাধ্যমে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের দাবি আদায় করে নেয় সাধারণ শিক্ষার্থীসহ বাম ছাত্রসংগঠনগুলো। এই আন্দোলনে নেতৃত্বে ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফেডারেশন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টসহ কয়েকটি প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা?

কারো কারো মতে, শিক্ষার্থীদের এসব আন্দোলন থেকে সরকারবিরোধী কোনো কোনো দল রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ারও চেষ্টা করেছে। তবে পাঁচটি আন্দোলনের চারটিতেই সরকার শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ায় বিরোধী শক্তি আর সুবিধা নিতে পারেনি। একইভাবে সরকারও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দীর্ঘায়িত হতে দেয়নি। রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত আন্দোলনগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর নির্ভর না করে শিক্ষার্থীরাই নেতৃত্বের জায়গায় থাকার বিষয়টি একটি বার্তা হয়ে থাকবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার - dainik shiksha তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার - dainik shiksha স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন - dainik shiksha নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0041170120239258