ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদনে ২৩ সুপারিশআসন কমানো জরুরি কলেজে পাস কোর্সে

মুসতাক আহমদ |

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিভিন্ন কলেজে পাস কোর্সে লেখাপড়ায় ছাত্রছাত্রীদের দারুণ অনীহা আছে। শিক্ষার্থী ভর্তি না হওয়ায় অধিকাংশ কলেজে আসন থাকছে। এ কারণে কলেজে পাসকোর্সের সিট কমানো প্রয়োজন। ডিগ্রি কোর্সের পরিবর্তে দেশের কর্মক্ষেত্রের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়ে গ্রাজুয়েট তৈরি করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বৃহস্পতিবার এটি রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। চলতি সংসদ অধিবেশনে এটি উপস্থাপনের কথা আছে। প্রতিবেদনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস বন্ধে বিশেষ নজরদারি পদ্ধতি প্রবর্তনের সুপারিশ করা হয়। এ লক্ষ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মতো উন্নত প্রযুক্তি, কঠিন নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষা করে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা দরকার।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, অ্যাপেক্সবডি হিসেবে ইউজিসি দেশের উচ্চশিক্ষা পরিস্থিতি সারা বছর পরিবীক্ষণ ও পর্যবেক্ষণ করে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে উচ্চশিক্ষা পরিস্থিতির ওপর একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে উচ্চশিক্ষায় বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। প্রায় ৪ মিলিয়ন ছাত্রছাত্রী উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে।

একটি জাতি এগিয়ে যাওয়ার এটা বড় নিদর্শন। তবে এই এগিয়ে যাওয়ার পথে আরও কী কী প্রতিবন্ধকতা দূর করা দরকার সেটাই এবারের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে মানসম্মত শিক্ষক সংকটের দিকটি বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

৪৯৫ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে দেশের উচ্চশিক্ষার সমস্যা, সীমাবদ্ধতা, সংকট, সম্ভাবনাসহ বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, শিক্ষকদের জন্য পৃথক বেতন স্কেল নেই। উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নে পৃথক বেতন স্কেল ও অন্য সুযোগ-সুবিধা দেয়া দরকার।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, সার্বিকভাবে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক সংকট প্রকট। অনেক নতুন ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক নেই। পাঠদান করেন জুনিয়র শিক্ষকরা। সরকারি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্যান্য সরকারি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষিত শিক্ষক-শিক্ষিকার অভাব দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে জাতীয়, উন্মুক্ত ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিষয়ক নতুন সরকারি ও অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক উচ্চতর ডিগ্রিধারী শিক্ষক সংকট বিরাজ করছে। এই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধানত প্রভাষক ও জুনিয়র শিক্ষকদের দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

শিক্ষক সংকটের বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর পদগুলোতে স্থায়ীভাবে শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিতকরণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। অভিজ্ঞ শিক্ষকরা যেন অপেক্ষাকৃত নবীন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদানে আগ্রহী হন, সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতিমালা তৈরির তাগিদ দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে জঙ্গি সৃষ্টির কারণ হিসেবে প্রতি সেমিস্টারে দু’টি করে কোর্স নেয়ার সুযোগকে দায়ী করা হয়। বলা হয়, ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টারে কমপক্ষে তিনটি কোর্স নেয়া বাধ্যতামূলক করা দরকার। এছাড়া কোনো শিক্ষক, কর্মচারী, শিক্ষার্থী যাতে সংবিধানের মূলনীতির পরিপন্থী কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়ার সুপারিশ করা হয়। এতে বলা হয়, দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পক্ষে প্রয়োজনীয় উচ্চডিগ্রি সম্পন্ন জনবল তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষকদেরকে বর্তমানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে। ফলে উচ্চতর গবেষণা পরিচালনা করার জন্য যে সময়ের প্রয়োজন তা তারা পাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে দেশে দক্ষ শিক্ষক তৈরির লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে প্রধানত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিশ্বমানের একটি গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় অতিসত্বর স্থাপন করা উচিত। এই বিশ্ববিদ্যালয় শুধু স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করবে। পাশাপাশি দেশের আর্থ-সামাজিক জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা করবে, যাতে গবেষণালব্ধ ফলাফল দেশের সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখতে পারে। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের জন্য এখনও সার্ভিস রুল প্রণীত হয়নি। ফলে শিক্ষকদেরকে চাকরির স্থায়িত্ব নিয়ে অনিশ্চয়তায় থাকতে হয়। আর এসব কারণে মেধাবী ও দক্ষ শিক্ষকরা সুযোগ পেলেই দেশ ত্যাগ, অথবা অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে যাচ্ছে। এতে উচ্চশিক্ষিত শিক্ষকের অভাব দেখা দিচ্ছে উচ্চ শিক্ষাস্তরে। এতে বলা হয়, বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই। নেই গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত ল্যাবরেটরি। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা কার্যক্রম কিছুটা বাড়লেও আশানুরূপ হয়নি। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইতিমধ্যে গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। তবে তা আরও বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। ২০২১, ২০৩০ এবং ২০৪১ সালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর বিকল্প নেই। সুপারিশে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আধুনিক ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানে যাতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষকরা যৌথভাবে গবেষণা পরিচালনা করতে পারেন, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। এছাড়া অভিন্ন শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা এবং প্রণীত ‘স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান ফর হায়ার এডুকেশন ২০১৮-২০৩০’ বাস্তবায়ন করা গেলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা কার্যক্রমে আরও গতিশীলতা আসবে বলে মনে করে ইউজিসি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভালো দিক হল সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই প্রকৌশল ও প্রযুক্তি শিক্ষার দিকে ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বিজ্ঞান শিক্ষার দিকে আগ্রহ কম বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এমন প্রবণতা ভবিষ্যতে নতুন নতুন উদ্ভাবনের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।

 

সূত্র: যুগান্তর


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0065138339996338