কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা সরকারি বরাদ্দসহ স্কুলের প্রায় আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। তদন্ত কর্মকর্তাকে সহযোগীতা না করে উল্টো আইনি নোটিশও পাঠিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষক। অভিযোগের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় এবং তদন্ত কর্মকর্তাকে অসহযোগীতা করায় অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার নেয়ান সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) মুঠোফোনে তদন্ত কর্মকর্তা ও কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিইও) শামসুল আলম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এ আগে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২২ জানুয়ারি দৈনিক শিক্ষা ডটকমে ‘প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ আমলে নেয় সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন। পরে দীর্ঘসময় তদন্ত করে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক উৎপলকান্তি সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পায় তদন্তকারী কর্মকর্তা উলিপুর উপজেলার বিদায়ী নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল কাদের।
পরে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসককে পাঠানো ইউএনও আব্দুল কাদের স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হযরত আলীর অভিযোগের আলোকে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক করা তদন্তে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আত্মসাতের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।
এর আগে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হযরত আলীর অভিযোগের ভিত্তিতে উপ-পরিচালকের কার্যালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের রংপুর অঞ্চলিক কার্যালয়ের দাপ্তরিক নির্দেশনায় গত ৩ সেপ্টেম্বর তদন্ত কাজ শুরু করেন ডিইও শামসুল আলম। তদন্ত কর্মকর্তা (ডিইও) অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে প্রায় ৩ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এসময় তিনি অভিযোগের বিপরীতে প্রধান শিক্ষককে প্রয়োজনীয় সব তথ্য প্রমাণ সরবরাহের নির্দেশনা দেন।
তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, প্রাথমিক তদন্তে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কিছু অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেছে। তদন্ত কাজের শুরুতে প্রধান শিক্ষক তাৎক্ষণিক কোনও কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। তার কাছে অভিযোগের বিপরীতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাইলে তিনি দুই দফা সময় আবেদন করেন। কিন্তু পুনঃনির্ধারিত সময়ে তিনি কাগজপত্র জমা না দিয়ে উল্টো তদন্তকারী কর্মকর্তাকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন।
ডিইও আরও বলেন, ‘এটা ওই প্রধান শিক্ষকের চরম ধৃষ্টতার শামিল। তার বিরুদ্ধে আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতসহ দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও তিনি তদন্তকারী কর্মকর্তাকে তদন্তে সহযোগীতা না করে সরকারি আদেশ অমান্য ও সরকারি কর্মকর্তাকে অবজ্ঞা করেছেন। এজন্য তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে।’
এর আগে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হযরত আলীর অভিযোগের ভিত্তিতে উলিপুর উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটিকে অসহযোগীতা করেন এই প্রধান শিক্ষক। সেই তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে ৫ নং আইন (দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪) অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক বরাবর প্রতিবেদন পাঠিয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের একটি দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য দৈনিক শিক্ষা ডটকমে জানিয়েছে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হলে নিজের বিরুদ্ধে আরোপিত অভিযোগ ভূয়া, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি সরকার।
গত বছরের অক্টোবর মাসে ম্যানেজিং কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একটি পর্যবেক্ষণ ও নিরীক্ষণ কমিটি করে দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের যাবতীয় আয়-ব্যয়ের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। নিরীক্ষণ কমিটি তদন্ত করে প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি সরকার ও সাবেক সভাপতি খোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের অনুকূলে সরকারি বরাদ্দ ও বিদ্যালয়ের নিজস্ব আয়ের প্রায় আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনে। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বর্তমান সভাপতি কার্যকর কোনও ব্যবস্থা না নিলে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও নিরীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক হযরত আলী উপজেলা প্রশাসন এবং উপ-পরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, রংপুর অঞ্চল বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন।