আয়-ব্যয়ের হিসেব নেই, সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা অতিরিক্ত পরিশোধ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধা বোর্ডের জন্মলগ্ন থেকে শিক্ষকদের জমানো ও সরকারের দেয়া কোটি কোটি টাকা লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের ৫ সদস্যের একটি তদন্ত দল প্রথমবারের মতো কল্যাণ ট্রাস্টে সংঘটিত দুর্নীতির তদন্ত করে ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে। ১৯৯০ থেকে ২০০২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া লুটপাটে জড়িত অনেক শিক্ষক নেতা ও কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য-সচিব এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা। ১৯৯৭ থেকে ২০০১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য-সচিব ছিলেন অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ।

শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র জাতীয় পত্রিকা দৈনিকশিক্ষাডটকমের আর্কাইভে সংরক্ষিত মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হচ্ছে। আজ পড়ুন চতুর্থ ও শেষ পর্ব:

৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা অতিরিক্ত পরিশোধ:

১৫ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ জুনের আগে যেসব শিক্ষক-কর্মচারী অবসর অথবা পদত্যাগ অথবা মৃত্যুবরণ করেছেন সেসব শিক্ষককে কল্যাণ ট্র্যাস্ট কর্তৃপক্ষ যে পদ্ধতিতে হিসেব কষে কল্যাণ ভাতা প্রদান করেছেন তা বিধিসম্মত হয়নি।

কল্যান ট্রাস্ট কর্তৃক প্রদত্ত পদ্ধতি ও প্রকৃত প্রাপ্য পদ্ধতির পার্থক্য হওয়ার কারণে সর্বমোট ৫ কোটি ৬০ লাখ ৬৮ হাজার ২৯৬ টাকা অতিরিক্ত প্রদান করা হয়েছে বলেও মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। 

এক আবেদনে দুইবার টাকা পরিশোধ:

কল্যাণ সুবিধার টাকা অতিরিক্ত পরিশোধের প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত দল। আরও শত শত চেকে লাখ লাখ টাকা ডাবল পেমেন্ট হয়েছে। বরিশাল ও খুলনা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকরা এই ডাবল টাকা পেয়েছেন বলে জানা যায়। প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোট কতগুলো এবং কত টাকার ডাবল চেক ইস্যু ও পরিশোধিত হয়েছে তা নির্ণয়পূর্বক আদায় করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘একই শিক্ষক কর্মচারীর একাধিক আবেদনপত্র গ্রহণ এবং এন্ট্রির বিষয়টি ট্রাস্টি বোর্ডের সভাতেও আলোচিত হয়েছে। কাজেই প্রাক্তন সদস্য সচিব কাজী ফারুক আহমদ এই অনিয়মের জন্য দায়ী।’

ক্যাশবই ও আয়-ব্যয় হিসাব সংরক্ষণ করেননি:  

রেকর্ডপত্র যাচাইয়ে তদন্ত দল দেখতে পান কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান এবং সদস্য-সচিব ট্রাস্টের দৈনন্দিন ও মাসিক আয়-ব্যয়ের জন্য কোনও ক্যাশ বই এবং আয়-ব্যয় হিসাব সংরক্ষণ করেননি। প্রাপ্তি ও পরিশোধ সংক্রান্ত কোনও হিসাবও সংরক্ষণ করেননি। হিসাবের বার্ষিক বিবরণী ও স্থিতিপত্র প্রণয়নপূর্বক সরকারের নিকট পেশ করা হয়নি। ফলে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট আইন ১৯৯০ এর ১২(১) ধারার বিধান লঙ্ঘন করা হয়েছে। কোনোরূপ বিধিসম্মত হিসাব না রাখার কারণে ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রাক্তন সদস্য সচিব কাজী ফারুক আহমেদ প্রাপ্ত টাকা ও পরিশোধিত টাকা দায়িত্ব হস্তান্তরকালে উদ্বৃত্ত (ব্যাংক সনদসহ) ইত্যাদি বিশদ বর্ণনাপূর্বক দায়িত্ব হস্তান্তর করেননি।

এ অনিয়মের জন্য প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রাক্তন সদস্য-সচিব দায়ী। এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।

৩ কোটি ৬৫ লাখ ৮৫ হাজার ২২৬ টাকার চেক বাতিল ও তামাদিকরণ প্রসঙ্গে:

তদন্ত দল দেখতে পায় মোট ১৩৯৬টি চেকে টাকার পরিমাণ ৩ কোটি ৬৫ লাখ ৮৫ হাজার ২২৬। এই টাকা যথাসময়ে বিলি না করে এমনকি পরবর্তী সদস্য-সচিব (প্রফেসর মো. শরীফুল ইসলামকে) হস্তান্তর না করে চেকগুলো ভাইস চেয়ারম্যান অর্থাৎ মাউশি অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালকগণ ও সদস্য-সচিবের স্বাক্ষরিত। চেকগুলো লেখা ও বিলি-বন্টনের পারিশ্রমিকও পরিশোধ হয়েছে। চেকগুলো বিলি বা হস্তান্তর না করায় অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের ক্ষতি করা হয়েছে।

আরো পড়ুন: কল্যাণ ট্রাস্টের প্রাথমিক তহবিলের এক কোটি টাকার হদিস নেই

                    কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা: কোন শিক্ষক নেতা কত মেরেছেন

                     কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা লুটকারী সদস্য-সচিবের বাসায় চেক!


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0059008598327637