ইংলিশ ভার্সনের পাঠ্যবইয়ে ভুল থেকেই গেল

বিভাষ বাড়ৈ |

নির্বাচনী ডামাডোলের মধ্যেও এবার সরকারী ঘোষণা অনুসারে বছরের প্রথম দিনই নতুন ঝকঝকে পাঠ্যবই হাতে পেয়েছে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সকল শিক্ষার্থী। তবে নির্দিষ্ট সময়ে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি শিক্ষার্থী নতুন বই হাতে পেলেও ভুল আর অনুবাদের ভয়াবহ অসঙ্গতিতে ভরাই রয়ে গেল সকল শ্রেণীর ইংলিশ ভার্সনের বই। গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে গত শিক্ষাবর্ষে ইংলিশ ভার্সনের বইয়ের ভুলের চিত্র বেরিয়ে আসলেও নতুন পাঠ্যবইয়েও রয়ে গেছে সেই সঙ্কট। বাংলা বইয়ের মূল লেখার সঙ্গে ইংলিশ ভার্সনের বইয়ে আছে অসঙ্গতি। ফলে এবারও নিম্নমানের অনুবাদ আর ভুলে ভরা বইয়ের খেসারত দিতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

এদিকে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর বইয়েও আছে ভুল। উচ্চ মাধ্যমিকের বইয়ের ভুলের কারণে ইংলিশ ভার্সনের শিক্ষার্থীরা বিশ^বিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে। একদিকে নেই ইংলিশ ভার্সনের শিক্ষক অন্যদিকে এমন ভুলে ভরা পাঠ্যবইয়ের কারণে সঙ্কটের মুখে পড়েছে প্রথম শ্রেণী থেকে শুরু করে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত ইংলিশ ভার্সনের প্রতিটি শিক্ষার্থী। সকল শ্রেণীর ইংলিশ ভার্সনের বই ছেয়ে গেছে ভুল ও অনুবাদের অসঙ্গতিতে। প্রায় প্রতিটি বইয়েই কোন না কোন অধ্যায়ে খুঁজে পাওয়া যায় না বাংলা মাধ্যমের বিষয়গুলো। অথচ ইংরেজী ভার্সনের শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলা ভার্সনের বই নির্ভুল ও হুবহু অনুবাদ করার নিয়ম।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে বাংলা মাধ্যম ও ইংরেজী মাধ্যমের বইয়ের পাঠ্যক্রমের ভয়াবহ তফাত, ইংরেজী ভার্সনের বইয়ের অনুবাদের ঘাপলা, ভুল আর নানা অসঙ্গতি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইংরেজী ভার্সনের শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলা ভার্সনের বই নির্ভুল ও হুবহু অনুবাদ করার নিয়ম রয়েছে। সেভাবেই হচ্ছে বলে দাবিও করে আসছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। কিন্তু বাস্তবে ইংরেজী ভার্সনের বইয়ে প্রচুর ভুল থাকছে। অনুবাদেও থাকছে ত্রুটি। আবার কোন কোন গুরুত্বপূর্ণ অংশ অনুবাদই হচ্ছে না।

সরকারী বিধিবিধান বলছে, পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয় বাংলা ভার্সনের বই থেকেই। পরে বাংলা ভার্সনের প্রশ্নপত্র অনুবাদ করা হয় ইংরেজী ভার্সনের শিক্ষার্থীদের জন্য। কিন্তু প্রথম শ্রেণী থেকে এইচএসসি এমনকি বিশ^বিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাতেও দেখা গেছে, বাংলা ভার্সনের বইয়ে আছে অথচ ইংরেজী ভার্সনের বইয়ে নেই এমন অনেক অংশ থেকেই পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন প্রণয়ন করা হচ্ছে। ফলে ইংরেজী ভার্সনের শিক্ষার্থীরা এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছে না।

গত দুই বছরের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি ও বিশ^বিদ্যালয়ের পরীক্ষায় এমন অসংখ্য প্রশ্ন তৈরি হয়েছে যা বাংলা ভার্সনে থাকলেও ইংরেজী ভার্সনের বইয়ে নেই। আবার ইংরেজী ভার্সনের কোন কোন পরীক্ষাতে প্রায় অর্ধশতাধিক ভুলের নজিরও আছে। কিন্তু নতুন বইয়েও রয়ে গেছে সেই একই সঙ্কট।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে বইয়ের বিভিন্ন অধ্যায় পর্যালোচনা করেও পাওয়া গেছে নানা অসঙ্গতি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবই ছাপে এনসিটিবি নিজেই। কিন্তু পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা মাধ্যমের শিশুদের জন্য বাংলাদেশ ও বিশ^ পরিচয় বইয়ের সঙ্গে গরমিল পাওয়া গেছে ইংলিশ ভার্সনের বইয়ের। ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’ নামের অধ্যায়ে বাংলা মাধ্যমের বইয়ে যে তথ্য দেয়া আছে তার হদিস মিলছে না ইংলিশ ভার্সনের বইয়ে।

বাংলা মাধ্যমের বইয়ের লেখার হবহু অনুবাদ করার কথা থাকলেও ইংলিশ ভার্সনের শিশুদের বইয়ে পুরোপুুরি বাদ দেয়া হয়েছে অধ্যায়ের অনেক তথ্যই। ঘটেছে তথ্য বিকৃতিও। শ্রেণীকক্ষে শিক্ষক বাংলা মাধ্যমের বই অনুসারে মুুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতে গেলে শিক্ষাবর্ষের শেষের দিকে ভিকারুন নিসা নূন স্কুলের ইংরেজী ভার্সনের শিশুরা বলে, ‘স্যার আমাদের বইয়ে যে এ বিষয় নেই’। পরে উপায় না দেখে শিক্ষক ইংলিশ ভার্সনের প্রত্যেক শিশুর বইয়েও পাতায় পাতায় হাতে লিখে দেন সঠিক তথ্যগুলো। কিন্তু এমন হাতে লিখে দেয়ার মতো অবস্থাই বা দেশের কতটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আছে সেই প্রশ্ন শিশুদের।

শিক্ষার্থী অভিভাবকরা আশা করেছিলেন, নতুন বইয়ের ভুল সংশোধন হবে। কিন্তু তা হয়নি। নবম দশম শ্রেণীর জীববিজ্ঞান। এটির ইংরেজী ভার্সন বই বায়োলজি। জীববিজ্ঞানের ‘গ্যাসীয় বিনিময়’ অধ্যায়ের শ্বসনতন্ত্রের অংশে গলবিলের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এখানে তিনটি পৃথক বাক্য রয়েছে। তৃতীয় বাক্যটিতে আলাজিহ্বার পরিচয় দেয়া হয়েছে। কিন্তু ইংরেজী ভার্সনের বইয়ে তৃতীয় বাক্যটি নেই। অথচ এবারের এসএসসির প্রশ্নটি এসেছে তৃতীয় বাক্যটির ‘আলাজিহ্বা’ নিয়েই। ফলে ইংরেজী ভার্সনের শিক্ষার্থীরা এর উত্তর দিতে পারেনি।

একই বইয়ের চতুর্দশ অধ্যায়ের শেষ দিকে মৎস্য উন্নয়ন বিষয়ে বলা হয়েছে ‘মাগুর, কমন কার্প, লইট্টা এবং তেলাপিয়া মাছে স্যামন মাছের বৃদ্ধি হরমোনের জিন স্থানান্তরের মাধ্যমে কৌলিগত পরিবর্তনের প্রক্রিয়ায় এসব মাছের আকার প্রায় ৬০ ভাগ বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এই অংশটি ইংরেজী ভার্সনের বইয়ের জন্য অনুবাদ করা হয়নি। তবে এবারের এসএসসির নৈর্ব্যক্তিক অংশের প্রশ্ন এই বাক্যটি থেকেই করা হয়েছে। ফলে উত্তর লিখতে পারেনি পরীক্ষার্থীরা। এছাড়া এই বইয়ে ‘পরিবেশ সুরক্ষার’ ইংরেজী অনুবাদ করা হয়েছে ‘ইন ইমপ্রুভমেন্ট অব ফিশিং’।

এই বইটি বাংলা থেকে ইংরেজীতে অনুবাদ করেছেন রজত কান্তি সোম, গুল আনার আহমেদ এবং কাজী নেয়ামুল হক। এর মধ্যে গুল আনার আহমেদ বাংলা ভার্সনের বইটিরও লেখক। এছাড়া রসায়নের ‘ক’ সেটের বাংলা ৬ নম্বর প্রশ্নের অনুবাদ ভুল হয়েছে। গত বছরও জেএসসির সৃজনশীল এ প্রশ্নপত্রের বহু নির্বাচনী (মাল্টিপল চয়েস) অংশের প্রশ্নে একাধিক ভুল ধরা পড়ে।

সঙ্কট আছে উচ্চ মাধ্যমিকেও। এ স্তরের শিক্ষার্থীরা তাদের নতুন শিক্ষাবর্ষের সরকারী অনুমোদনপ্রাপ্ত বইয়ের ভুল সংশোধন চান। গেল বছর এসএসসি পরীক্ষাতে জিপিএ-৫ পেয়ে দেশের একটি নামী কলেজে ইংরেজী ভার্সনে ভর্তি হয়েছেন গিলবার্ট পিটার হালদার। ইংরেজী মাধ্যমের বইয়ের কথা তুলে ধরে পিটার তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, রাজধানীর একটি স্বনামধন্য বিদ্যালয়ের ইংরেজী ভার্সনের ছাত্র হিসেবে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলাম। বাংলা মাধ্যম ও ইংরেজী মাধ্যমের পাশাপাশি যে ‘ইংরেজী ভার্সন’ নামক আরেকটি মাধ্যম রয়েছে, তা কারও অজানা নয়। কিন্তু এ মাধ্যমে আমাদের প্রতি যে অবহেলার সৃষ্টি হয়েছে, তা অনেকেরই অজানা। ইংরেজী ভার্সনের বই থেকে শুরু করে এসএসসির প্রশ্নপত্রে প্রতিটি স্তরেই অবহেলার শিকার হচ্ছি আমরা।

অথচ বাংলা মাধ্যমের বইগুলোর সম্পূর্ণ ইংরেজী সংস্করণ হলো ইংরেজী ভার্সনের বই। প্রাথমিক থেকে প্রতিটি শ্রেণীতে কোন না কোন বই আছে যা বাংলা মাধ্যমের বই থেকে ভিন্ন। বাংলা মাধ্যমের বিশাল বিশাল চাপ্টার আমাদের ইংরেজী ভার্সনের অনেক বইয়ে শেষ করা হয়েছে কয়েকটি লাইনের মধ্যেই। কিন্তু পরীক্ষায় গিয়ে দেখছি প্রশ্ন এসেছে বাংলা মাধ্যমের বই থেকে।

এ শিক্ষার্থী বলছে, অবহেলার শিকড় ছড়িয়েছে পাবলিক পরীক্ষাতেও। কিন্তু প্রশ্নপত্রের ভুলের জন্য কি আমরা ইংরেজী ভার্সনের শিক্ষার্থীরা ‘অটো নম্বর’ টাই? পাইনা। অবহেলা তুলে ধরতে গণমাধ্যমও তেমন ভূমিকা রাখছে না। ইংরেজী ভার্সনের শিক্ষার্থীরা কি শিক্ষার্থী নয়?

কেবল এ শিক্ষার্থীই নয়। গেল বছর দেশের অন্যতম প্রতিষ্ঠান নটরডেম কলেজ থেকে সর্বোচ্চ মেধার পরিচয় দিয়ে জিপিএ-৫ নিয়ে ইংরেজী ভার্সনের অসংখ্য শিক্ষার্থী বের হলেও বিশ^বিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে অধিকাংশই।

অথচ বাংলা মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা ঠিকই ভর্তি পরীক্ষায় সাফল্য পেয়েছে। কেবল নটরডেম নয়, একই অবস্থা রাজউক উত্তরা মডেল, মতিঝিল আইডিয়াল, রেসিডেন্সিয়াল মডেল, ভিকারুন নিসা নূন, ঢাকা কলেজসহ ইংরেজী ভার্সন থাকা প্রতিটি কলেজের ইংরেজী ভার্সনের শিক্ষার্থীরাই বিশ^বিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাতে ব্যর্থ হয়েছে।

অথচ ভাল করেছে বাংলা মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা। বাংলা মাধ্যমের বই পড়ে পরীক্ষায় সাফল্য পেলেও কেবল বইয়ের ভুলের কারণে ব্যর্থ হয়েছে ইংরেজী ভার্সনের শিক্ষার্থীরা।

প্রায় প্রতিটি শিক্ষার্থীই বলছে, ভর্তি পরীক্ষায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় থেকে যেসব প্রশ্ন এসেছে তার অধিকাংশই তাদের অধ্যায়ে নেই। একই অধ্যায়ে বাংলা মাধ্যমের বইয়ে সেই প্রশ্নের উত্তর আছে ঠিকভাবেই। এক্ষেত্রে এনসিটিবির অনুমোদন ছাড়া বাজারে অসংখ্য ভুলে ভরা বই থাকাকেও দায়ী করছেন শিক্ষার্থীরা। নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাদের বাংলা মাধ্যমের রসায়ন প্রথমপত্র বইয়ের প্রথম অধ্যায় বিস্তৃত অন্তত ৬ থেকে ৭ পৃষ্ঠাজুড়ে। শিক্ষার্থীদের জন্য আছে বিষয় উপযোগী ছবিও।

এনসিটিবির অনুমোদন নিয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম অনুসারে বাংলা মাধ্যমের একটি রসায়ন বই প্রকাশ করেছে লেকচার পাবলিকেশনস। বইয়ের লেখক সঞ্জিত কুমার গুহ। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটিতেই ইংলিশ ভার্সনের শিক্ষার্থীরা যে ক্যামেস্ট্রি বই পড়ছে তার প্রকাশক এ্যাবাকাস পাবলিকেশন। বইয়ের লেখক ড. মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম ও ড. গাজী মোঃ আহসানুল কবীর । নিয়ম অনুসারে বাংলা মাধ্যমের বইয়ের কেবল অনুবাদ করার কথা থাকলেও বিশাল ও গুরুত্বপূর্ণ এ অধ্যায় ইংলিশ ভার্সনের এ বইয়ে শেষ করা হয়েছে এক পৃষ্ঠার মধ্যেই! যেখানে নেই বাংলা মাধ্যমের বইয়ের ৫ ভাগও। কোনমতে নামকাওয়াস্তে শেষ করা হয়েছে বইটি।

এ বই পড়ে বিশ^বিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় এসে ভাল করতে পারেনি ইংলিশ ভার্সনের শিক্ষার্থীরা। তারা প্রায় প্রত্যেকেই একই সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেছেন, বিষয় ভিত্তিক প্রশ্ন আসলেও তা তাদের কাছে পুরোপুুরি অপরিচিত লেগেছে। কখনই বইতে এসব বিষয় তারা পাননি। কিন্তু বাংলা মাধ্যমের বন্ধুরা বলেছে এগুলো হুবহু তাদের বইতে আছে। ফলে তারা পরীক্ষায় ভাল করলেও আমরা ফেল করেছি।

রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ থেকে পাস করেও আশানুরূপ কোন বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেনি অনেকেই। প্রতিষ্ঠানটির সাবেক শিক্ষার্থী রাব্বি বলছিলেন, ইংরেজী ভার্সনের শিক্ষার্থীরা নিম্নমানের অনুবাদ করা বই পড়তে বাধ্য হচ্ছে বছরের পর বছর। তাড়াহুড়ো করার কারণে প্রতিবছরই পাঠ্যবইয়ের ইংরেজী ভার্সনে ভুল থাকে। অসংখ্য বানান ভুল এবং বাক্যগঠনে অসঙ্গতিও আছে এসব বইয়ে। আবার কোন কোন গুরুত্বপূর্ণ অংশ অনুবাদই হয় না।

রাজউক উত্তরা স্কুল এ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণীর ইংরেজী ভার্সনের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক সৌরভ বিশ^াস বলছিলেন, আসলে ইংরেজী ভার্সন পাঠ্যবইয়ে ভুলের কথা এখন সর্বজনবিদিত। নিম্নমানের অনুবাদ, তাড়াহুড়ো করার কারণে প্রতিবছরই পাঠ্যবইয়ের ইংরেজী ভার্সনে ভুল থাকে। অসংখ্য বানান ভুল এবং বাক্যগঠনে অসঙ্গতির প্রমাণ মিলেছে প্রতিবছরই। অথচ যারা এসব অনুবাদ করেন তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। প্রশ্নপত্রের এসব ভুলের জন্য ইংরেজী ভার্সনের শিক্ষার্থীরা তো ‘অটো নম্বর’ পাবে না। কর্তৃপক্ষের ভুলে কেন শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে প্রশ্ন ভুক্তভোগী এ অভিভাবকের।

জানা গেছে, পাঠ্যবইয়ের ভুলের সঙ্গে ইংলিশ ভার্সনের প্রশ্নের ভুল গত দু’বছরেই ঘটেছে বহুবার। যা ব্যাপক সমালোচনারও জন্ম দিয়েছে। প্রায় প্রতিটি পরীক্ষাতেই প্রশ্নপত্রের ভুলের শিকার হচ্ছেন ইংলিশ ভার্সনের শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি সন্তোষজনক নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এনসিটিবির সাবেক প্রধান সম্পাদক ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বর্তমান বিদ্যালয় পরিদর্শক অধ্যাপক প্রীতিশ কুমার সরকার বলছিলেন, আসলে প্রথমে লেখা হয় বাংলা মাধ্যমের বই। এরপর ছাপার জন্য যখন বাই যন্ত্রস্থ করা হয় তখন কিছুটা তারাহুড়ো করেই ইংলিশ ভার্সনের কাজ করা হয়। ফলে ভুল-ত্রুটি হয়ে যায়। তবে আমি মনে করি, প্রতিবেদন প্রকাশের পর নয় তার আগেই বিষয়টির সংশোধন করা সমীচীন ছিল। কিন্তু তারপরেও হলো না বিষয়টি সমীচীন হয়নি।

কিন্তু এর দায় দায়িত্ব নেবে কে? ভুল থাকার বিষয়টি স্বীকার করলেও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (টেক্সট) অধ্যাপক ড. মিয়া ইনামূল হক রতন সিদ্দিকী বলছিলেন, হ্যাঁ ভুল আছে এটা ঠিক। তবে গত বছর গণমাধ্যম বিশেষ করে পত্রিকার প্রতিবেদনে বিশেষভাবে উঠে এসেছিল ভুলগুলো। কিন্তু ততক্ষণে নতুন বইয়ের ছাপার কাজ প্রায় হয়ে গেছে। ফলে এ বছরের বইয়ের ভুল সংশোধন করা সম্ভব হয়নি। আগামী শিক্ষা বর্ষেই শিক্ষার্থীরা পাবে সংশোধন করা নতুন বই। আমরা নতুন বইয়ের কাজ শুরু করলেই এ কাজে হাত দেব।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলছিলেন, সুনির্দিষ্ট তথ্য অনুসারে আমরা কাজ করছি। অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব। আমরা নতুন বই পর্যালোচনা করে আগামী বছরের বই প্রস্তুত করব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইংলিশ ভার্সনের বইয়ের এ সমস্যাটি আজকের নয় এ সমস্যাটি বহুদিনের।

 

সূত্র: জনকণ্ঠ


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার - dainik shiksha তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার - dainik shiksha স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন - dainik shiksha নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025579929351807