ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল এখনও বন্ধ

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক |

জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার কথা ছিল ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোতে। এরপর প্রায় এক মাস কেটে গেছে। এই সময়ে স্কলাসটিকাসহ প্রায় সব ইংরেজি মাধ্যম স্কুল এখনও খোলেনি। নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে তারা শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের অফিস খোলা থাকলেও ক্লাস হচ্ছে না। এতে বিপাকে পড়েছেন এসব স্কুলে অধ্যয়নরত হাজার হাজার শিক্ষার্থী। সন্তানের পড়ালেখা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন অভিভাবকরা।

তারা বলেন, নিরাপত্তার কথা বলে আর কত দিন স্কুল বন্ধ রাখবে কর্তৃপক্ষ। তাহলে কী ইংরেজি মাধ্যম স্কুল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেল! এমন প্রশ্নও রেখেছেন অনেক অভিভাবক।

এদিকে শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ জানিয়েছেন, ইংরেজি মাধ্যম স্কুল বন্ধ রাখার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। অন্য সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানে চলছে সেখানে ওই সব প্রতিষ্ঠান বন্ধের কোনো কারণ নেই। প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে তারা প্রতারণা করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে স্কলাসটিকা, হার্ডস, ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড, হোপ ইন্টারন্যাশনালসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কয়েকদফা খোলার তারিখ দিয়েও এখন পর্যন্ত খুলেনি। এ কারণ হিসেবে স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছে, সম্প্রতি গুলশানে জঙ্গি হামলার পর নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে এসেছে। এজন্য স্কুলের সিকিউরিটিসহ আরও কিছু বিষয় রিভিউ (পুনর্মূল্যায়ণ) হচ্ছে। সেগুলো ঠিক হওয়ার পর স্কুল খোলা হবে। সেগুলো ঠিক করতে আরো কত দিন লাগবে এমন প্রশ্নের পর সুনির্দিষ্ট তারিখ বলতে পারছেন না কর্তাব্যক্তিরা।

স্কলাসটিকা স্কুলের উত্তরা শাখার ভাইস প্রিন্সিপাল সাফকাত ইয়াসমীন বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমরা সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ক্লাস শুরু করবো। এর আগে গেল মাসের ২১ তারিখ তিনি জানিয়েছিলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে দুই দফা স্কুল খোলার তারিখ পিছানো হয়েছে। ১০দিন পর অর্থাৎ ৩১শে জুলাই ক্লাস শুরু হবে। সেই ১০দিন দুই দিন আগে শেষ হলেও গতকাল পর্যন্ত স্কুল খুলেনি। কিন্তু কেন? এমন প্রশ্নে তিনি কর্পোরেট অফিসে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
এদিকে অনেক অভিভাবক সন্তানদের স্কুলে নিলেও একাডেমিক কার্যক্রম না থাকায় ফিরিয়ে নিয়ে আসছেন।

কয়েকজন অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিডনি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল, সানিডেল স্কুলসহ কয়েকটি স্কুল ঈদের পর ক্যাম্পাস খুলছে। তবে গতকাল পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। তাদের দাবি, ইংলিশ মিডিয়ামগুলো একসঙ্গে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। স্বনামধন্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এখনও খুলেনি। তাই আমরাও ক্লাস শুরু করতে পারিনি। ধানমন্ডি এলাকায় দুটি স্কুলে গেল সপ্তাহ ক্লাস শুরু করেও একদিন পর বন্ধ করে দেয়া হয়।

এ বিষয়ে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের অভিভাবকদের সমন্বয়ক এডভোকেট আমিনা রত্না বলেন, আমার সন্তান ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড স্কুলে পড়ে। গত মাসের ১৮ তারিখের পর ২৫ তারিখ স্কুল খোলার কথা থাকলেও এখনও খোলা হয়নি। এক গুলশান হামলায় আমার সন্তানের শিক্ষাজীবন নষ্ট হওয়ার উপক্রম। এক মাসের আগে নতুন বছরের শুরু হলেও গতকাল পর্যন্ত স্কুলই খুলতে পারেনি। সিলেবাস হাতে পায়নি। তিনি জানান, কয়েকটি স্কুল খুলেছে বলে আমি শুনেছি। কিন্তু সেখানে ক্লাস হচ্ছে না। তাহলে খোলা আর বন্ধের মধ্যে পার্থক্য কী? তিনি বলেন, সরকার আমাদের নিরাপত্তা বিষয়টি না দেখলে ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, তারা কেন স্কুল খুলছে না সেটি আমি বলতে পারবো না। এ বিষয়ে তারাই জবাব দেবে। নিরাপত্তার অজুহাত মানতে নারাজ তিনি। নাহিদ বলেন, সোমবার সারা দেশে কয়েক লাখ শিক্ষার্থী মানববন্ধন করেছে। তারা ক্লাস পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। তাদের সমস্যা না হলে শুধু ইংরেজি মাধ্যমে সমস্যা হবে কেন?

তিনি বলেন, কেউ যদি অনিরাপত্তা বোধ করেন, তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিতে পারেন। আমি যতদূর জানি এ ধরনের সহযোগিতা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী করছে। তাহলে তাদের তো সমস্যা থাকার কথা নয়। তিনি বলেন, কাউকে জিম্মি করে নিরাপত্তার কথা বলবেন সেটি মানা যাবে না।

বারিধারায় অবস্থিত সিডনি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপাল কাজী নাসরিন সিদ্দিকা বলেন, ভয়ে ভয়ে স্কুল খুলেছি। কিন্তু উপস্থিতি একেবারে কম। নামিদামি কয়েকটি স্কুল এখনও না খোলার কারণে আমরাও ক্লাস শুরু করতে পারিনি। তিনি বলেন, যখন নিরাপত্তাহীতায় ভুগেছি তখনও পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছি। তারা ফোর্স পাঠিয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের নিজস্ব সিকিউরিটিও বাড়ানো হয়েছে। অভিভাবকদের ভেতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। বাচ্চাদের ব্যাগও চেক করা হচ্ছে। সিসি ক্যামেরার সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। তারপরও অভিভাবকরা ভীতসন্ত্রস্ত।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0056500434875488