ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোতে ভয়

শরীফুল আলম সুমন    |

ঈদের ছুটির পর এখনো খোলেনি রাজধানী ঢাকার নামি-দামি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো। স্কলাসটিকার পাঁচটি ক্যাম্পাসে এক দফা সময় পিছিয়ে  বুধবার(২০জুলাই) স্কুল খোলার কথা ছিল। শেষ পর্যন্ত সেই ঘোষণাও ঠিক থাকেনি। আবার ১০ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

আর যেসব স্কুল খুলেছে সেগুলোতে অর্ধেক শিক্ষার্থীরও উপস্থিতি নেই। যদিও অনেক স্কুলেই ক্লাস হয়েছে পুলিশি নিরাপত্তায়। এর বাইরে অনেক স্কুল কর্তৃপক্ষ পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছে। গুলশানে জঙ্গি হামলার ঘটনা পরম্পরায় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোর কর্তৃপক্ষ। চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন অভিভাবকরাও।

গুলশানে সাম্প্রতিক হামলায় নিহত দুই জঙ্গি স্কলাসটিকা স্কুল ও টার্কিশ হোপ স্কুলের শিক্ষার্থী ছিল। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষার্থীদের জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ার এ ঘটনায় অভিভাবকদের মনে আতঙ্ক ভর করেছে। তা ছাড়া ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে লেখাপড়া চলে বিদেশি কারিকুলামে। অনেক প্রতিষ্ঠানেই আবার বিদেশি শিক্ষক-শিক্ষার্থী রয়েছে। ফলে জঙ্গি টার্গেটের আশঙ্কা থেকেও অভিভাবকরা উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন।

জানা যায়, ঈদের ছুটির পর স্কলাসটিকা স্কুল, ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড স্কুলসহ বেশির ভাগ নামি-দামি স্কুলই খোলার তারিখ ছিল ১৮ জুলাইয়ের মধ্যে। কিন্তু এই সময়ে স্কুল না খুলে তা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেউ ১০ দিন, কেউ সাত দিন আবার কেউ পরবর্তী তারিখ এখনো জানায়নি।।

তবে স্কুল খোলার পরিবর্তিত তারিখ ঘোষণা করা হলেও ওই দিনের আগে আবারও অভিভাবকদের এসএমএসের মাধ্যমে খোলার তারিখ নিশ্চিত করবে স্কুল কর্তৃপক্ষ। কারণ অনেক স্কুল কর্তৃপক্ষ এখনো নিশ্চিত নয় যে ওই দিনই স্কুল খুলবে কি না।

স্কলাসটিকা স্কুলের গুলশানের জুনিয়র শাখায় গতকাল দুপুরে গিয়ে দেখা যায় সুনসান নীরবতা। শুধু গেটের বাইরে একজন সিকিউরিটি গার্ড রয়েছেন। ভেতরে আরো একজন গার্ড রয়েছেন বলে জানা গেল। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দুজন পুলিশ সদস্যও এই স্কুলের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিলেন

তবে গত সোমবার থেকে স্কুলের শিক্ষক ও স্টাফরা নিয়মিত আসতেন। গতকাল তাঁরাও স্কুলে আসেননি। সিকিউরিটি গার্ড মো. বাদল বিকেল ৩টার দিকে বলেন, আজ (গতকাল) সারা দিনে কেউ আসেননি। পুলিশরাও চলে গেছে। দিনে আমরা দুইজন ডিউটি করি আর রাতে তিনজন।

স্কলাসটিকা স্কুলের উত্তরা শাখার ভাইস প্রিন্সিপাল সাফকাত ইয়াসমীন বলেন উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমরা স্কুল খোলার সময় আরো ১০ দিন পিছিয়েছি। অভিভাবকদের এসএমএসের মাধ্যমে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে। গতকাল খুলেছে বারিধারায় অবস্থিত সিডনি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। প্রতিষ্ঠানের ভাইস প্রিন্সিপাল কাজী নাসরিন সিদ্দিকা বললেন, ‘ভয়ে ভয়েই স্কুল খোলা ছিল। উপস্থিতি ছিল মাত্র ৩০ শতাংশ।

প্যারেন্টসও ভীত ছিল। তবে আমরা নিরাপত্তার জন্য আগেই পুলিশের কাছে আবেদন করেছিলাম। স্কুল খোলার সময় পুলিশি পাহারা ছিল। স্কুলে আমাদের নিজস্ব সিকিউরিটিও বাড়ানো হয়েছে। অভিভাবকদের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। বাচ্চাদের ব্যাগও চেক করা হচ্ছে। এ ছাড়া আমাদের গেটের সামনের কিছুটা অংশ খোলা ছিল। সেগুলো দেয়াল দিয়ে আটকানো হচ্ছে। বড় গেটের শুধু পকেট গেট দিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রবেশ করছে। সিসি ক্যামেরার সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে।

ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের অভিভাবকদের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট আমিনা রত্না বলেন, আমার বাচ্চা ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড স্কুলে (ইএসএস) পড়ে। ১৮ জুলাই স্কুলটি খোলার কথা ছিল। কিন্তু এখন জানানো হয়েছে ২৫ জুলাই খুলবে। তবে সেদিনও স্কুল খুলবে কি না তা অনিশ্চিত। এত দিন স্কুল বন্ধ থাকলে তো পড়ালেখার অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। আমরা চাই স্কুল খুলুক। সরকার আমাদের নিরাপত্তা দিক

ইএসএসের ভাইস প্রিন্সিপাল কাজী মাহিনু আহাদ বলেন, স্কুল খোলার এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পরিবর্তিত তারিখ অভিভাবকদের জানিয়ে দেওয়া হবে।

ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোর মধ্যে সবার আগে খুলেছে ম্যাপল লিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। গত ১৩ জুলাই এই স্কুলে ক্লাস শুরু হয়েছে। নাম প্রকাশ না করে এই স্কুলের একজন অভিভাবক  বলেন, যেহেতু স্কুল খুলেছে তাই বাচ্চাদের পাঠাচ্ছি। কিন্তু আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না। মনে সব সময় একটা ভয় কাজ করছে। স্কুল তো অবশ্যই খোলা থাকা দরকার। কিন্তু সরকার যেন যথাযথ নিরাপত্তা দেয়, সেটাই আমাদের দাবি।

জানা যায়, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোর নিরাপত্তায় এত দিন যেসব ফাঁকফোকর ছিল তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষই নিজ উদ্যোগে সমাধানের চেষ্টা করছে। কোনো কোনো স্কুলের সীমানা প্রাচীর এমনিতেই উঁচু থাকার পরও তার ওপরে তারকাঁটা লাগানো হচ্ছে। স্কুলের পুরোটাই সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হচ্ছে।

সিকিউরিটি গার্ডের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। অনেক স্কুলেই বাচ্চাদের সঙ্গে অভিভাবকরা গেটের ভেতরে ঢুকতে পারতেন। এখন তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আবার যেসব স্কুলে গেটের ভেতরে অভিভাবকদের ওয়েটিং রুম ছিল তা সরানো হচ্ছে। সব মিলিয়ে স্কুল খোলা রাখতে পুলিশি নিরাপত্তা চাওয়ার পাশাপাশি কর্তৃপক্ষও নিজ উদ্যোগে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0057289600372314