করোনাকালে (কোভিড-১৯) দেশের প্রতিটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলকে আগামী তিন সেশন ফি না বাড়ানোসহ ১৪ দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ইংলিস স্কুল প্যারেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিইএসপিএ)।
একইসঙ্গে প্রত্যেক স্কুলের প্রিন্সিপালের নেতৃত্বে প্যারেন্টস টির্চাস অ্যাসোসিয়েশন (পিটিএ) গঠন এবং প্যারেন্টস ফোরামের প্রতিনিধি নিশ্চিতের ও দাবি জানানো হয়েছে।
শনিবার (২৫ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে বিইএসপিএর আয়োজিত ‘কোভিডের সময়কালে বাংলাদেশের ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক রাউন্ডটেবিলে এ দাবি জানানো হয়।
বিইএসপিএর আহ্বায়ক প্রফেসর মাসুদ এ খানের সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. হাবিব ই-মিল্লাত৷
বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যাঞ্চলর প্রফেসর ডা. আবদুল হান্নান চৌধুরী, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ডা. আবদুল মান্নান চৌধুরী৷
এছাড়া বিইএসপিএর সহযোগী আহ্বায়ক কামরুজ্জামান ভূঁইয়া কামরুল, আরিফুর রহমান চৌধুরী, মো. জহিরুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক রবিউল আলম, সদস্য সচিব সালমা মমজাত লিজা, পারভীন সুলতানা৷
রাউন্ডটেবিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ডা. হাবিব ই- মিল্লাত বলেন, কোভিড-১৯ আমাদের বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অনেক মানুষ নিজের ব্যবসা, চাকরি হারিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। অনিবার্য পরিণতি, অনিশ্চিত আগামীর মুখে দাঁড়িয়ে মানুষ যখন অসহায়, ঠিক তখনি জীবনের নিরাপত্তার ঝুঁকি মাথায় রেখে একটি যুগপৎ উপলব্ধির সামাজিক আন্দোলনে আমাদের নামতে হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা ভেবেছিলাম করোনা মানুষকে মানবিক করে তুলেছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলো অভিভাবকদের অবদানকে অস্বীকার করে, তাদের অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা থেকে বিরত রাখছে। শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসে এক্সেস না দিয়ে, রিপোর্ট কার্ড না দিয়ে, বেতনের জন্য পড়া বন্ধ রাখতে বলে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। আমরা এর স্থায়ী সমাধান চাই। আমরা চাই স্কুল যেন বাচ্চাদের দায়িত্ব নেয়। পাশাপাশি স্কুলের ভাড়া অন্যান্য খরচের বিষয়ে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ভূমিকা আশা করছি। আমরা একটি গ্রহণযোগ্য এ মানসম্পন্ন ইংরেজি শিক্ষা ব্যবস্থা প্রত্যাশা করি। একইসঙ্গে বিইএসপিএর দাবির সঙ্গে একমত প্রকাশ করছি।
বিইএসপিএর ১৪ দফা দাবিগুলো: প্রত্যেক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে প্যারেন্টস ফোরাম গঠনে স্কুল কর্তৃপক্ষকে সহযোগী ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রতিটি স্কুলে প্রিন্সিপালের নেতৃত্বে পিটিএ গঠন এবং প্যারেন্টস ফোরামে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। অভিভাবক প্রতিনিধিত্ব শক্তিশালী করতে দুইজন পুরুষ ও একজন নারী অভিভাবক নিশ্চিত করতে হবে। ম্যানেজমেন্ট কমিটিতে প্যারেন্টস ফোরামের নির্বাচিত অভিভাবকে প্রতিনিধি হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। প্রত্যেক স্কুলকে গ্রেডিংয়ের আওতায় আনতে হবে। পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংবলিত ওয়েবসিট থাকতে হবে। স্কুলগুলোতে দক্ষ প্রশিক্ষিত শিক্ষকদের নিয়োগ এবং পাঠদানের নিশ্চিত করতে হবে।
এছাড়া কোভিডের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে আগামী ৩ সেশন (২০২০-২১, ২০২১-২২, ২০২২-২৩) টিউশন ফি, সেশন চার্জ অথবা কোনো ধরনের চার্জ না বাড়ানো। আগামী ২০২৩-২৪ সেশন থেকে এডমিশন ফি, টিউশন ফি এবং অন্যান্য চার্জ নির্ধারণের ক্ষেত্রে হোল স্কুল ইভেলুশন রিপোর্ট বিবেচনার দাবি। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ গেজেট ২০১৭ এর ১৯ এর ১ ধারা অনুযায়ী যেকোনো ফি বা চার্জ ৫ শতাংশের বেশি বাড়ানো যাবে না।
অভিভাবক ফোরামের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে আগামী ৩ বছর (২০২০-২৩) টিউশন ফি বা এডমিশন ফি পুনঃনির্ধারনের দাবি। স্কুল মালিক কর্তৃপক্ষের অতি মুনাফার মানসিকতা পরিহার করে অভিভাবক ফোরামের প্রতিনিধির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলচনার মাধ্যমে অনলাইন ক্লাসের জন্য অভিভাবকদের যৌক্তিক দাবি টিউশন ফির হার নির্ধারণ করতে হবে। একই স্কুলে একাধিক সন্তানের জন্য টিউশন ফি ৩০/৫০ শতাংশ মওকুফ করতে হবে এবং ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোতে সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের রেগুলারিটি কমিশনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ এবং শিক্ষামান সু-নিশ্চিত করার জোর দাবি জানানো হয়েছে।