দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম কঠিন আইনি পদক্ষেপ নেয়ার মাধ্যমে ঘোড়াঘাট উপজেলাকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক, ভূমি দখল ও পুকুর দখল প্রতিরোধ এবং বালু মহাল রক্ষার চেষ্টা করছিলেন। ইউএনও ওয়াহিদা খানমের এসব কাজে বাধার সৃষ্টি করে স্থানীয় যুবলীগ ও ২নং পালশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মইনুল ইসলাম মাস্টার এবং তার বাহিনী। মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) ভোরের কাগজ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, সর্বশেষ ডুগডুগি হাটে হাতেম আলীর পাকা দোকান ভেঙে দখলের প্রতিকার করতে যাওয়ায় মইনুল মাস্টার চরমভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে ইউএনওর ওপর হামলার পরিকল্পনা করে। তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিতে থাকে। হুমকিতে ভীত না হয়ে উল্টো মইনুল মাস্টারকে ডুগডুগির হাটে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার নোটিস দেন। ওই নোটিস জারির রাতেই ওয়াহিদা খানমের ওপর ন্যক্কারজনক হামলা হয়। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, ঘোড়াঘাট উপজেলার অপরাধ সিন্ডিকেটের প্রধান আওয়ামী লীগ নেতা মইনুল মাস্টার। তার নির্দেশেই ঘোড়াঘাট উপজেলায় সব অপকর্ম চলে। সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে অপহরণ চাঁদাবাজি, ছিনতাই, জমি দখল, সরকারি কাজে বাধা প্রদান, আসামি ছিনতাইসহ ৮টি মামলা রয়েছে।
সূত্র জানায়, ঘোড়াঘাট উপজেলার ডুগডুগি হাটে হাতেম আলীর পাকা দোকান ঘর ভেঙে দিয়ে দখল নেয় মইনুল মাস্টার। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর পক্ষ থেকে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের কাছে গত ২৭ আগস্ট একটি অভিযোগ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ সেপ্টেম্বর ইউএনও ওয়াহিদা খানম স্বাক্ষরিত একটি নোটিস মইনুল মাস্টারকে পাঠানো হয়।
নোটিসে বলা হয়, ২ সেপ্টেম্বর অভিযোগ তদন্তে ইউএনও সরেজমিন ঘটনাস্থলে যাবেন এবং মইনুল মাস্টারকেও সেখানে উপস্থিত থাকতে বলা হয়। নোটিস পেয়ে মইনুল মাস্টার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান রাফে খন্দকার শাহেন শাহের কাছে যান।
এরপর শাহেনশাহ ও মইনুল মাস্টার ইউএনওর কাছে গিয়ে এ ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলেন। কিন্তু ওয়াহিদা খানম তাদের সেই নির্দেশ মানেননি। উল্টো মইনুল মাস্টারকে যথাসময়ে ডুগডুগি হাটে উপস্থিত থাকার মৌখিক নির্দেশ দেন। সেদিন দিনগত রাতেই সন্ত্রাসীদের হামলায় গুরুতর আহত হন ওয়াহিদা খানম। এরপর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন মইনুল মাস্টার ও তার সহযোগীরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মইনুল মাস্টার হাকিমপুর উপজেলার বাওনা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কৃষি) হিসেবে কর্মরত। সম্প্রতি তিনি উপজেলার ২নং পালশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ঘোড়াঘাট থানার অফিসার ইনর্চাজ আমিরুল ইসলাম জানান, তার বিরুদ্ধে ২০০৬ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ঘোড়াঘাট, নবাবগঞ্জ ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সবুজবাগ থানায় মোট ৭ মামলা রয়েছে। ২০০৬ সালে ঘোড়াঘাট থানার মামলা নং-১, ২০১১ সালে ঘোড়াঘাট থানায় মামলা নং-২৩, ২০১৬ সালে নবাবগঞ্জ থানার মামলা নং-১, ডিএমপি ঢাকা সবুজবাগ থানার মামলা নং-৮, ঘোড়াঘাট থানার মামলা নং-২৬, ঘোড়াঘাট থানার মামলা নং-২৭ ও সর্বশেষ ঘোড়াঘাট থানার মামলা নং-২৩। এর মধ্যে মামলা নং-১, ২ ও ৩নং মামলা বিচারাধীন এবং বাকিগুলো তদন্তাধীন।