অনলাইনে ক্লাস গ্রহণ, ভর্তি ও পরীক্ষা সংক্রান্ত ইউজিসির নির্দেশনা মানছে না ড্যাফোডিলসহ বেশকিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। করোনা পরিস্থিতির কারণে যেসব শিক্ষার্থী সেমিস্টার ফি পরিশোধ করতে পারেননি তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে বকেয়া অর্থ পরিশোধ করতে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে এসব প্রতিষ্ঠান।
আর যারা টাকা দিতে পারেননি তাদের পরীক্ষার ফল আটকে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি আটকে দেয়া হয়েছে শিক্ষার্থীর পরবর্তী সেমিস্টারে ভর্তি। আবার টাকা ছাড়া পরের সেমিস্টারে ভর্তিও নেয়া হচ্ছে না। এখানেই শেষ নয়, বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতনভাতা পরিশোধ করছে না। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় আংশিক বেতন দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) ভুক্তভোগীদের দায়ের করা আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক অভিযোগ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
কমিশনের একজন কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্নভাবে আমরা শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অন্য জনবলের কাছ থেকে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে অভিযোগ পাচ্ছি। এসব প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থী ভর্তি, পরীক্ষা গ্রহণ এবং শিক্ষক-কর্মকর্তা- কর্মচারীদের বেতনভাতা দেয়ার ক্ষেত্রেও নানা কৌশল অবলম্বন করছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান বেতনভাতা দিচ্ছে না। কথা ছিল যে, জুলাই মাসে সেমিস্টার শুরু করবে তারা।
কিন্তু কেউ কেউ তিন সেমিস্টার ধরে কার্যক্রম চালাচ্ছে। শিক্ষার্থীদেরও নানা কষ্টের কথা শুনছি। অথচ অনলাইন কার্যক্রমের অনুমতি সম্পর্কিত সার্কুলারে সুস্পষ্টভাবে করণীয় উল্লেখ আছে। তারা নির্দেশনা প্রতিপালনের অঙ্গীকারও করেছিল। তিনি বলেন, আমরা ভুক্তভোগীদের কাছে লিখিত অভিযোগ চেয়েছি। এর আলোকে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।
ইউজিসি সূত্র জানায়, নির্দেশনা অমান্য করছে যারা তাদের মধ্যে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি, প্রয়াত আলিমুল্লার মিয়া প্রতিষ্ঠিত আইইউবিএটি, সবুর খানের ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি এবং প্রাইম ইউনিভার্সিটি, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অফ হেলথ সায়েন্স অন্যতম। টিউশন ফি জমা না দিলে আগামী মাস থেকে ক্লাস করতে দেয়া হবে না বলে এসব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে।
অথচ নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি ও পরবর্তী সেমিস্টার শুরু সংক্রান্ত ৭ মে জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়, চলমান সেমিস্টারে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরবর্তী সেমিস্টারে কোর্স রেজিস্ট্রেশন ও ক্লাস করার সুযোগ দিতে হবে। হাতেগোনা ৭-৮টি বাদে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ পেয়েছে ইউজিসি। এছাড়া বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে এপ্রিল থেকে শিক্ষক ও জনবলকে বেতনভাতা না দেয়া এবং আংশিক দেয়ার অভিযোগ আছে।
শিক্ষার্থীরা যদি একেবারে টিউশন ফি দেয়া বন্ধ করে দেয় তবে তো প্রতিষ্ঠান চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। কেননা এ অর্থে বাড়িভাড়া, শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন দিতে হয়। তবে এক্ষেত্রে শিক্ষার্থী ও প্রতিষ্ঠান উভয়কে সহনীয় হতে হবে। যতটা মানবিক হওয়া যায় সেই আহ্বান থাকবে। এরপরও যদি কেউ তার ব্যতিক্রম করে, তাদের চিহ্নিত করে ইউজিসি ব্যবস্থা নেবে। আমাদের কাছে এ ধরনের অভিযোগ এলে সতর্ক ছাড়া আর কিছু করার থাকে না।’
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ইউজিসি পরিচালক ড. ফখরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত নতুন নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে- ‘সাধারণ নির্দেশনাবলীর অনুচ্ছেদ ৪, ৫, ৬ ও ৭ এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালনা অথবা পরিচালনার নিমিত্ত অন্য কোনো নির্দেশনা প্রদান করে থাকলে প্রমাণক/ডকুমেন্টসহ তা private.ugc-gmail.com এ প্রেরণ করার জন্য অনুরোধ করা হল।’