নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বেশকিছু কমিটির কার্যক্রম চালু রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) মতামত জানতে চেয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অভিনব ও অপ্রয়োজনীয় আখ্যা দিয়ে এর মধ্যে ১৫টি কমিটি বাতিলের সুপারিশ করে ইউজিসি। ওই সুপারিশ প্রতিবেদন পাঠানোর পর এক বছর পেরিয়ে গেলেও কমিটিগুলো বাতিল করেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, গত বছরের শুরুর দিকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯টি কমিটি বাতিলের বিষয়ে মতামত জানাতে ইউজিসিকে চিঠি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কমিটিগুলো হলো— প্রোগ্রাম রিভিউ কমিটি, প্রশাসনিক পদোন্নতি কমিটি, শিক্ষক পদোন্নতি কমিটি, লাইব্রেরি কমিটি, শিক্ষক অনুসন্ধান কমিটি, ডিগ্রি পর্যালোচনা কমিটি, ছাত্র ভর্তি কমিটি, নিড অ্যাসেসমেন্ট কমিটি, টেকনিক্যাল কমিটি, ক্রয় কমিটি, শিক্ষক ছুটি কমিটি, একাডেমিক রিভিউ কমিটি, কনফারেন্স ট্রাভেল ও রিসার্চ গ্র্যান্ট কমিটি, আইন ও সাংবিধানিক কমিটি, ছাত্র বৃত্তি কমিটি, ক্যাম্পাস উন্নয়ন কমিটি, অডিট কমিটি, ইন্টারন্যাশনাল প্রমোশন অ্যান্ড অ্যাফিলিয়েশন কমিটি ও অন্যান্য কমিটি।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১১ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এক প্রতিবেদন পাঠায় ইউজিসি। প্রতিবেদনে ডিগ্রি পর্যালোচনা, ছাত্র ভর্তি, লাইব্রেরি ও ক্রয়সংক্রান্ত কমিটি ছাড়া বাকি ১৫টিই বাতিলের সুপারিশ করে ইউজিসি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও অপ্রয়োজনীয় হওয়ায় এগুলো বাতিলের সুপারিশ করেছিল ইউজিসি। ওই সুপারিশ প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর পেরিয়ে গেছে এক বছরেরও বেশি সময়। এর পরও কমিটিগুলো বাতিল করেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি কমিটি বাতিল বিষয়ে মতামত চেয়ে ইউজিসিকে চিঠি দেয়া হয়। এরই ভিত্তিতে পর্যালোচনা করে ১৯ কমিটির মধ্যে ১৫টি বাতিলের সুপারিশ করা হয়। কমিটির প্রয়োজনীয়তার বিষয়েও মতামত দেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে আর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
সুপারিশ প্রতিবেদনে প্রতিটি কমিটির বিষয়ে পৃথক মতামত দিয়েছিল ইউজিসি। বাতিলের জন্য সুপারিশকৃত কমিটির মধ্যে রয়েছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছুটি কমিটি। উপ-উপাচার্যের সভাপতিত্বে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ মনোনীত চারজন সদস্য, রেজিস্ট্রার, অনুষদের ডিন ও বিভাগ বা প্রোগ্রামের প্রধানরা এ কমিটির সদস্য। এ কমিটির বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের অধীনে প্রণীত চাকরি প্রবিধানমালা অনুযায়ী যেকোনো শিক্ষক বিভাগীয় প্রধান ও ডিনের মাধ্যমে ছুটির আবেদন করবেন এবং রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন হবে। শিক্ষকদের ছুটি অনুমোদনের বিষয়টি একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের রুটিনকাজের মধ্যেই পড়ে।
বাতিলের সুপারিশ করা আরেকটি কমিটি হলো শিক্ষক অনুসন্ধান কমিটি। বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্যকে সভাপতি করে গঠিত কমিটিতে উপ-উপাচার্য, বোর্ড অব ট্রাস্টিজ মনোনীত চারজন সদস্য, রেজিস্ট্রার, অনুষদের ডিন ও বিভাগ বা প্রোগ্রামের প্রধানরা এ কমিটির সদস্য। ইউজিসির মতে, এটি একটি অভিনব কমিটি। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শিক্ষক অনুসন্ধান করা হয়। তাই শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ ও উপযুক্ত প্রণোদনা থাকলে এ ধরনের কোনো কমিটির প্রয়োজন নেই।
প্রোগ্রাম রিভিউ কমিটি প্রসঙ্গে ইউজিসি বলছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে পাঠ্যক্রম কমিটি রয়েছে। কমিটির গঠন ও দায়িত্বও বর্ণিত হয়েছে। পাঠ্যক্রম কমিটির সঙ্গে সাদৃশ্য থাকায় প্রোগ্রাম রিভিউ কমিটি বাতিল করা যেতে পারে।
শিক্ষক পদোন্নতি কমিটি বিষয়ে বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগ কমিটি রয়েছে। অতএব সমান্তরালভাবে শিক্ষক পদোন্নতি কমিটি থাকা সমীচীন নয়। নীতিমালা অনুযায়ী পদোন্নতির যোগ্য হলে নিয়োগ কমিটির মাধ্যমে পদোন্নতি সম্পন্ন করা যায়। কাজেই শিক্ষক পদোন্নতি কমিটি বাতিল করা যায়।
আইন ও সাংবিধানিক কমিটিকে অপ্রয়োজনীয় উল্লেখ করে বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর ৩৭ ধারা অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, গবেষণা, প্রশাসনিক, আর্থিক ও অন্যান্য কার্যাদি সম্পর্কিত বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সংবিধি প্রণয়নপূর্বক বোর্ড অব ট্রাস্টিজ ও সরকারের মাধ্যমে চ্যান্সেলরের অনুমোদন গ্রহণ করবে। অথচ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় অদ্যাবধি একটি সংবিধি প্রণয়নপূর্বক চ্যান্সেলরের অনুমোদন গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ প্রযোজ্য। তাই আইন ও সাংবিধানিক কমিটির প্রয়োজনীয়তা নেই।
অন্যান্য কমিটি বিষয়ে ইউজিসি বলছে, ‘অন্যান্য কমিটি (ক)-এর মধ্যে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতীয়মান। এছাড়া অনেক কমিটির নামে অসংখ্য কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, যা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে সাংঘর্ষিক।
এ প্রসঙ্গে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি চিঠি দেয়া হয়েছিল। চিঠিতে কমিটিগুলো কেন বাতিল করা হবে না, সে বিষয়ে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ কমিটিগুলোর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জবাব দেয়। এরপর মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উপসচিব জিন্নাত রেহানা বলেন, ইউজিসির মতামত আমরা পেয়েছি। এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।
সৌজন্যে: বণিক বার্তা