ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে কার্ডিওলজি বিভাগের এক চিকিৎসক এবং চারজন নার্সের নভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এ অবস্থায় ওই হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। শনিবার (১৮ এপ্রিল) বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, চিকিৎসক আক্রান্তের কথা সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করলেও সিসিইউ বন্ধের কথা অস্বীকার করেছেন ইউনাইটেড হাসপাতালের চিফ অফ কমিউনিকেশনস অ্যান্ড বিজনেস ডা. সেগুফা আনোয়ার। সিসিইউ বন্ধের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, “তাই নাকি? জানি না তো, কখন থেকে?”
একজন চিকিৎসক এবং চারজন নার্স আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ডা. সেগুফা আনোয়ার বলেন, “সো হোয়াট? উই হ্যাভ সো মেনি ডক্টরস, নার্সেস। একজন ডক্টর আক্রান্ত হতেই পারে, সে বাসায় থাকতেই পারে। সে ১৪ দিন বাসায় থাকার পর আবার এসে কাজে যোগ দিতে পারে। কিন্তু কোনো বিভাগ বন্ধ হবে কেন?”
পরে তিনি বলেন, ওই চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন কয়েকদিন হয়ে গেছে।
“ওই ঘটনার পর তার পরিবারের সবাইকে এনে আমার টেস্ট করিয়েছি। সবার নেগেটিভ এসেছে। আমরা এটা দায়িত্ব মনে করি। আমাদের স্টাফদের কারও হলে তার সমস্ত ফ্যামিলি মেম্বারকে আমরা এনে টেস্ট করি। সেই স্টাফকে বাসায় রাখি। প্রতিদিন তার বাড়িতে রান্না করা খাবার পাঠাই, শুকনো খাবার পাঠাই।”
এরপর তিনি বলেন, “সব বিভাগেই কাজ চলছে। কোভিডের জন্য অন্য সেবা দেয়া তো বন্ধ করা যাবে না। সবই চলছে অল্প পরিসরে, লকডাউন চলছে বলে মানুষ আসছে না।”
হাসপাতালের অন্তত দুজন চিকিৎসক বলেছেন, সিসিইউতে থাকা এক রোগীর মাধ্যমেই তাদের সহকর্মী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা চেপে রাখে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই দুই চিকিৎসক বলেন, গত ৬ এপ্রিল হৃদরোগের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালের বহির্বিভাগে আসেন এক রোগী। প্রাথমিকভাবে তাকে কোভিড-১৯ রোগী মনে হলে সেদিনই তার নমুনা আইইডিসিআরে পাঠানো হয়। পরদিন ৭ এপ্রিল তার করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিশ্চিত হলে মঙ্গলবারই তাকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
একজন চিকিৎসক বলেন, “ওই রোগী করোনা আক্রান্ত সন্দেহ করলেও নিশ্চিত না হয়ে তাকে অন্য হাসপাতালে পাঠাতে পারছিলাম না। এ কারণে সেদিন সিসিইউতে ভর্তি রাখা হয়।
“উনার কিছু সিম্পটম ছিল। কিন্তু পেশেন্টকে অ্যাসেস করতেও কিছুটা সময় লাগে। এছাড়া ওই রোগীর কার্ডিওলজিক্যাল সমস্যা থাকায় তার ইকোকার্ডিওগ্রাম করা জরুরি ছিল। এ কারণে তাকে ভর্তি করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পাশাপাশি ইকো কার্ডিওগ্রাম করা হয়।”
“ইকো কার্ডিওগ্রাম করেছিলেন যে চিকিৎসক, তিনি নিজের পরীক্ষা করাতে চাইলেও হাসপাতাল থেকে নিরুৎসাহিত করা হয়। এমনকি এ বিষয়ে কোনো কথা বাইরে না বলতেও সবাইকে নিষেধ করে দেয়া হয়,” বলেন তিনি।
১২ এপ্রিল ওই চিকিৎসকের নমুনা আইইডিসিআরে পাঠানো হয়। ১৩ এপ্রিল ওই চিকিৎসকের নভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ে। ওই চিকিৎসকের সঙ্গে ওই রোগীকে দেখেছেন এমন দুজন নার্সেরও করোনা ভাইরাস পজেটিভ এসেছে বলে জানান ওই দুই চিকিৎসক।
তারা বলেন, এর আগে জরুরি বিভাগের দুজন নার্সের করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়লেও তাও প্রকাশ করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।