ইডেন কলেজ হলে ছাত্রলীগ নেত্রীদের ‘সিট বাণিজ্য’

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

কোনো প্রকার নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে দীর্ঘদিন ধরে ঐতিহ্যবাহী ইডেন মহিলা কলেজের সিট বাণিজ্য করে আসছেন ছাত্রলীগ নেত্রীরা। এদের মধ্যে অনেকের নেই ছাত্রত্ব, নেই কমিটির মেয়াদ তারপরেও আবাসিক ছাত্রীনিবাসে সিট পেতে হলে এসব নেত্রী এক কালীন ৭ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। শনিবার (৫ অক্টোবর) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন মো. বিল্লাল হোসেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অনেক শিক্ষার্থীদের প্রতি মাসে সিট ভাড়া গুনতে হয় ২ হাজার টাকার মতো। কলেজের বাইরের শিক্ষার্থীরা এবং যাদের শিক্ষাজীবন শেষ তাদেরকে মাসিক ভাড়ার বিনিময়ে ছাত্রীনিবাসে থাকার সুযোগ করে দেন ছাত্রলীগ নেত্রীরা।

এছাড়াও সাধারণ ছাত্রীরা দলীয় কোনো মিছিল মিটিং না যেতে চাইলে তাদেরকে করা হয় মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন। তাঁদের নির্যাতনের কারণে নিজ সংগঠনের নেত্রীরাও অতিষ্ঠ। ছাত্রলীগ এসব নেত্রীদের সিট বাণিজ্যে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে কলেজ প্রশাসন। তাদের কাছে পাওয়া যায় দায় সাড়া বক্তব্য।

ঢাকার প্রাচীন এই ইডেন মহিলা কলেজে আবাসিক হলের সংখ্যা ছয়টি। হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) ছাত্রীনিবাস, খোদেজা খাতুন ছাত্রীনিবাস, রাজিয়া ছাত্রীনিবাস, হাসনা বেগম ছাত্রীনিবাস, জেবুন্নেছা ছাত্রীনিবাস এবং শহীদ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রীনিবাস।

এই আবাসিক ছাত্রীনিবাসগুলোতে আসনসংখ্যা তিন হাজার ৩১০, যার বিপরীতে থাকছেন প্রায় আট হাজার শিক্ষার্থী। আসনসংখ্যার বাইরে ও ভিতরে সকল শিক্ষার্থীরা বেশির ভাগ ছাত্রলীগ নেত্রীদের এককালীন ও মাসিক চাঁদা দিয়ে থাকতে হয়।

জানা গেছে, কলেজের ছাত্রীনিবাসগুলোতে সবচেয়ে বেশি সিট বাণিজ্যের শিকার হন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা। কলেজ ছাত্রলীগের নেত্রীদের কয়েকজন এই বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছেন বিভিন্ন কর্মীদের মাধ্যমে। মাসিক ও এককালীন টাকা নেত্রীদের রুমে গিয়ে দিয়ে আসতে হয়।

এ নিয়ে একাধিকবার পত্র-পত্রিকায় খবর প্রচার হলেও কলেজ প্রশাসন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ছাত্রীনিবাসের সিট বাণিজ্য নিয়ে শিক্ষার্থীরা নেত্রীদের অত্যাচারের ভয়ে কিছু বলে না।

বিশেষ করে ছয়টি ছাত্রীনিবাসে পত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সিট বেপরোয়া সিট বাণিজ্য করেন ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক তাসলিমা আক্তার, যুগ্ম আহ্বায়ক শাহানাজ আক্তার, নাসিমা আক্তার, মাহবুবা নাসরিন রূপা, আঞ্জুমান আরা অণু, জান্নাত আরা জান্নাত, রিভা আক্তার, পাপিয়া আক্তার প্রিয়া, বিপাশা হায়াত রনি, বিথি আক্তার, ইতি আক্তার।

এদেরকে ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটি সোহাগ-জাকির তাসলিমাকে আহ্বায়ক করে ১৬ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে তিন মাসের জন্য কমিটি দিয়েছিলেন।

শহীদ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রীনিবাসের এক শিক্ষার্থী জানান, আমাদের হলে ৩০২, ৩০৩, ৩০৮, ৩০৯, ৩১০, ৩২০, ৩২১ কক্ষগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন তাসলিমা আপু। আর বাকি আঞ্জুমান আরা অণু ও অন্য নেত্রীর। যেখানে রুমের সিট খালি হয় জানলেই নতুন কাউকে উঠিয়ে উঠিয়ে তারা টাকা নেন।

তিনি বলেন, আমি যখন প্রথম হোস্টেলে উঠলাম তখন আমার রুমমেটদেরও এক বছর হয়েছিল। ওদের ৭ হাজার করে দিতে হয়েছে আর আমার ১৫ হাজার। আমার বান্ধবীরা ৪ জন আর আমার ১৫ হাজারসহ মোট ৪৩ হাজার দিয়ে আসতে হয়েছে নেত্রীর রুমে। কোন মাসে টাকা কম দিলে পরের মাসে সেটা পরিশোধ করতে হয়।

রাজিয়া ছাত্রীনিবাসের এক শিক্ষার্থী জানান, মাহবুবা, বিপাশা, বিধি আপু আমাদের হোস্টেলের অনেক মেয়েদের কাছ থেকে সিট বাবত টাকা নেয়। কেউ না দিতে চাইলে তাকে বের কওে দেওয়ার হুমকি দেয় এবং অনেক বকা দেয়।

খোদেজা খাতুন ছাত্রীনিবাসের এক শিক্ষার্থী জানান, যারা নেত্রীদের রেফারেন্সে হলে উঠে তাদের বছরে ৫ হাজার টাকা করে দিলেই চলত। আমি রোজার আগে ৭ হাজার টাকা দিয়েছি। গতকাল পাপিয়া আক্তার প্রিয়া আপু আমাদের রুমে এসে টাকা চেয়েছে বলছে, না দিতে পারলে হোস্টেল ছেড়ে চলে যেতে।

ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ নেত্রী বর্তমান বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি, নিশাত সাদিয়া খান মিলি বলেন, সকল সংগঠনের কিছু ভুল-ত্রুটি আছে। কলেজে সিট বাণিজ্যের সঙ্গে সবার সম্পৃক্ততা নেই। তবে কিছু লোকের থাকতে পারে, সেটা সম্পর্কে আমরা কিছু বলতে পারছি না।

ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের আহবায়ক তাসলিমা আক্তার বলেন, কলেজের ছাত্রীনিবাস থেকে ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে কেউ যদি কোন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে সিট বাবদ টাকা নেয় সেটা তার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার, আমরা এটার সঙ্গে জড়িত না। আমি কলেজ প্রশাসনকে বলেছি কেউ যদি ছাত্রলীগের পরিচয়ে কোনো সিট দাবি করে তাহলে কলেজ প্রশাসন যেন তাদেরকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয়।

বহিরাগতদের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা যারা ছাত্রলীগ নেত্রী আমার কোনো বান্ধবী যদি দুই এক বছরের জন্য থাকতে চায় সে ক্ষেত্রে দিতে হয়, কিন্তু এটার বিনিময়ে কোনো টাকা নেয়া হয় না। জোর করে কোনো মেয়েকে কোনো প্রোগ্রামে নেয়া হয় না, ছাত্রদল থাকা অবস্থায় প্রায় মেয়েকে জোর করে প্রোগ্রামে নিয়ে যেত; আমাদের সময় সেটা হয় না।

হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা) হোস্টেল সুপার মোছাম্মৎ আসমা পারভিন বলেন, এসব ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনো মেয়ে অভিযোগ করেনি, আমরা বৈধভাবে ইন্টারভিউ নিয়ে হলে উঠাই। আগে হয়তো কিছুটা এমন ছিল কিন্তু এখনকার মেয়েরা অনেক শান্ত।

শহীদ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রীনিবাসের সহকারী হোস্টেল সুপার মোছা. আসমা আক্তার বলেন, আসলে প্রায় সময় পত্র-পত্রিকায় নিউজ আসে যে, হলে বিভিন্ন মেয়েদের থেকে টাকা নেয়া হয়। বিষয়টি আমার জানা নেই। আমরা খোঁজখবর নিয়ে দেখব।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ইডেন কলেজের সিট বাণিজ্যের সঙ্গে ছাত্রলীগের কেউ জড়িত থাকলে অবশ্যই সংগঠন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে।

হলের সিট বাণিজ্য নিয়ে ইডেন মহিলা কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. শামসুন নাহারের সঙ্গে কথা বলার জন্য অধ্যক্ষের কার্যলয়ে দুইদিন যাওয়ার পর কার্যালয় থেকে এ প্রতিবেদককে জানানো হয়, এই বিষয়ে অধ্যক্ষ কোনো কথা বলবেন না।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0041649341583252