ইতিহাসের ছাত্র মুশফিকের আরেক ইতিহাস

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে তো বটেই, টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান হিসেবে দুটি ডাবল সেঞ্চুরি করে ইতিহাসে নাম লিখিয়ে ফেললেন মুশফিক।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। ইতিহাসের ছাত্র মুশফিকুর রহিম এখন একই বিদ্যাপীঠ থেকে এম.ফিল করছেন। তাঁর ইচ্ছে ভবিষ্যতে পিএইচডিও করবেন। পিএইচডির বিষয় অনেকটা ঠিক হয়ে আছে। মুশফিক গবেষণা করতে চান উপমহাদেশের ক্রিকেট ইতিহাস নিয়ে।

ইতিহাস শাস্ত্রে ভালো দখল আছে। মুশফিক ২২ গজেও ইতিহাস রচনা করতে সিদ্ধহস্ত। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন। ২০১৩ সালের মার্চে গল টেস্টের পর আবারও ‘ডাবলে’র দেখা পেলেন মুশফিক। আজ ঢাকা টেস্টে করা এই ডাবল সেঞ্চুরিটার তাৎপর্য অন্যরকম। মুশফিক বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবেই শুধু নন, টেস্টে ক্রিকেটে প্রথম উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান হিসেবে দুটি ডাবল সেঞ্চুরি করলেন। স্বীকৃত উইকেটকিপার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে মাত্র আটজনের আছে টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড। এ তালিকায় আছেন ইমতিয়াজ আহমেদ, অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, কুমার সাঙ্গাকারা, মহেন্দ্র সিং ধোনি, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, তসলিম আরিফ, ব্রেন্ডন কুরুপ্পু ও মুশফিক। আজ আরেকটি ডাবল সেঞ্চুরি করে মুশফিক নিজেকে নিয়ে গেলেন এই তালিকার সবার ওপরে । এখানে সাঙ্গাকারাকে নিয়ে একটা বিভ্রান্তি হতে পারে। লঙ্কান এই তারকার ১১টি দুইশোর্ধ ইনিংস থাকলেও দলে উইকেটরক্ষক–ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় মাত্র একটিই ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন তিনি।

মুশফিকের ডাবল সেঞ্চুরিটা হলোও একটু নাটুকে কায়দায়। চা বিরতির আগের ওভারের দ্বিতীয় বলে তাঁর বিপক্ষে কট বিহাইন্ডের আবেদন করে জিম্বাবুয়ে। মুশফিকের উইকেটটি পেতে রিভিউ পর্যন্ত নেয় জিম্বাবুইয়ানরা। টিভি আম্পায়ার রড টাকার আল্ট্রাএজ দেখে-টেখে জানিয়ে দিলেন,মুশফিক এগিয়ে যেতে পারেন। যখন এগিয়ে যাবেন, তখনই আবার চা বিরতি। যেন রোমাঞ্চকর, মজার কোনো নাটক-সিনেমা দেখতে বসেছেন। যখনই নায়কের বড় কোনো চাওয়া পূরণ হতে যাচ্ছে , তখনই শুরু বিজ্ঞাপন-বিরতি। এই বিরতি যেন শেষ হতে চায় না। ২০ মিনিটের চা বিরতিটাই আজ ২০ ঘণ্টা মনে হলো।

সেই অপেক্ষা শেষ হলো, চা বিরতির ৪ ওভার পর। চা বিরতির পর মুশফিক মাঠে পা রাখতেই দর্শকদের করতালি। এক রান করে যখন ‘মুশি’ এগিয়ে যাচ্ছেন ডাবলের দিকে, দর্শকেরা দারুণ খুশি! সেই খুশি দ্বিগুণ হয়ে গেল যখন মুশি সিকান্দার রাজাকে পুল করে এক রান নিয়ে পূর্ণ করলেন ডাবল সেঞ্চুরি। দুই হাত ওপরের দিকে উঁচিয়ে, শূন্যে চুমু ছুড়ে, ‘হৃদয় চিহ্ন’ এঁকে , সবুজ ঘাসে কপাল ছুঁইয়ে মুশফিক স্মরণীয় করে রাখলেন তাঁর অনন্য অর্জন।

২০০৫ সালের মে মাসে লর্ডসে অভিষেকের পর ১৩ বছরের ক্যারিয়ারে কখনো মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে তিন অঙ্ক ছোঁয়া হয়নি মুশফিকের। ঢাকার টেস্টের আগে যে পাঁচটি সেঞ্চুরি পেয়েছেন, চারটিই বিদেশে, প্রতিকূল কন্ডিশনে। এই চার সেঞ্চুরি দুটি আবার ১৫০ পেরোনো। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই টেস্ট দিয়ে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে প্রথম তিন অঙ্কের দেখা পেয়েছেন। সেই তিন অঙ্ক এমনই উজ্জ্বল, এমনই জ্বলজ্বলে টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে যেটির মহিমা অন্যরকম।

কাল সকালে দলের ঘোরতর বিপর্যয়ে ব্যাটিংয়ে নেমেছেন। ৫৬৪ মিনিট উইকেটে থেকে, ৪০৭ বল খেলে ডাবল সেঞ্চুরি করে দলকে নিয়ে গেছেন ভালো অবস্থানে। মুশফিক যখন ডাবল সেঞ্চুরি করছেন ড্রেসিংরুমে তখন দেখা গেল সাকিব আল হাসানকে। টেস্টে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ ২১৭ রানের রেকর্ডটা এই বাঁহাতি অলরাউন্ডারের। ‘দর্শক’ হিসেবে মাঠে আসা সাকিব নিজ চোখেই দেখলেন রেকর্ডটা কীভাবে নিজের করে নিচ্ছেন, কীভাবে ইতিহাসের পর ইতিহাস লিখে চলেছেন ইতিহাসের ছাত্র মুশফিক!

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028948783874512