ঈদের আগে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতার দাবি

মো. আবুল হোসেন |

২০০৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ঈদ বোনাসের প্রচলন শুরু হয়েছে ২৫ শতাংশ দিয়ে। এখনো পর্যন্ত সেই ২৫ শতাংশের কোনো পরিবর্তন কিংবা পরিবর্ধন কিছুই হলো না। পরিবর্তনের কোনো পরিকল্পনাও নেই। বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য আশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। ঈদ বোনাসের বৈষম্য চিরতরে দূর করবেন। 

বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থায় উৎসব ভাতার পরিবর্তন প্রয়োজন। সরকারির মতো উৎসব ভাতা দিয়ে বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থাকে বর্তমান সময়ে বৈষম্যহীন করা অতীব জরুরি। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের ধারায়। বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় বাংলাদেশ এখন দ্বিতীয়। সে দিক বিবেচনায় এনে বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থাকে গতিশীল করার পদক্ষেপ গ্রহণ করার জোর দাবি জানাচ্ছি। 

আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক, তা আজ মেনে নিতে বড়ই কষ্ট হয়। উৎসব ভাতার পাহাড় সমান বৈষম্য এখনো বিদ্যমান বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায়। সত্যিই তা বেদনাদায়ক ঘটনা। 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে যে শ্রম ও মেধা দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। 

আমরা স্বাধীন হয়েছি সত্য; কিন্তু স্বাধীনতার পূর্ণ সুযোগ-সুবিধা আজও আমরা বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা পেলাম না। 

শিক্ষাব্যবস্থায় এমন বৈষম্য রেখে উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব নয়।  সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থা এক লেভেলে আনা অতীব জরুরি। শিক্ষাব্যবস্থার গতি সঞ্চার করতে বৈষম্য দূরীকরণ প্রয়োজন। 

একদিকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা শুধু পিছিয়েই যাচ্ছে। বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা আজ বৈষম্যের যাঁতাকলে পড়ে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। কেউ নেই দেখভাল করার জন্য। শিক্ষাব্যবস্থার জন্য বৈষম্যহীন পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। 

বাংলাদেশের প্রতিটি পেশায় উৎসব ভাতা প্রদান করা হয় মূল স্কেলের সমান টাকা। আর বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দেয়া হয় মূল স্কেলের ২৫ শতাংশ। সরকারি অনুদানের অংশ এবং মূল স্কেলের ২৫ শতাংশ মিলে যে টাকা পাওয়া যায় তা দিয়ে ঈদের পূর্ণাঙ্গ আনন্দ উপভোগ করা সম্ভব হয় না।

স্বাভাবিকভাবেই বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা যে সামান্য সরকারি অংশ বা অনুদান পায় তা দিয়ে সংসারের ভরনপোষণ করাই কঠিন হয়ে পড়ে। বর্তমান সময়ে সরকার বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট দিচ্ছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট দিয়ে তা থেকে আবার অবসর ও কল্যাণ তহবিল নামে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ হারে কর্তন করা হচ্ছে। এই কর্তনের ফলে অবসর ও কল্যাণ তহবিলে পূর্বের ৬ শতাংশ এবং বর্তমানে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তন মিলে মোট ১০ শতাংশ হারে কর্তন করা হচ্ছে মূল স্কেল থেকে। এতে অনেক শিক্ষকই বর্ধিত কর্তনের ফলে সংসারের ভরণপোষণ করতেই  বিপাকে পড়েছে। সংসারের খরচ জোগার করতে খাচ্ছে হিমসিম। বেশির ভাগ টাকাই কেটে রাখা হয় অবসর ও কল্যাণ তহবিলের নামে।
 
অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয় বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জীবন। তারপর আবার আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে ঈদ। কিন্তু সেই ঈদ ও কাটে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের হতাশায়। যে সামান্য ঈদ বোনাস দেয়া হয় তা দিয়ে সংসারের ভরণপোষণ করবে নাকি ঈদ আনন্দের জোগাড় করবে। অবশেষে ধার-দেনা করে মেটাতে হয় ঈদের বাজার সদাই। এই হলো বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাস্তব জীবনের কাহিনী।

একদিকে সংসারের ভরণপোষণ অন্যদিকে এ সামান্য সরকারি অংশ বা অনুদান এবং মূল স্কেলের ২৫ শতাংশ ঈদ বোনাস দিয়ে কোনটা সামাল দিবে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক সমাজ।

সারাবিশ্বে শিক্ষকদের দেয়া হয় সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা। আমাদের সরকারি শিক্ষকদের বেতন দেয়া হয়। কিন্তু বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দেয়া হয় সরকারি অংশ বা অনুদান। শিক্ষকদের মর্যাদা এক হওয়া প্রয়োজন । সরকারি এবং বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থায় যতদিন বৈষম্য  থাকবে ততদিন শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন সম্ভব নয়।

যেহেতু সরকারি এবং বেসরকারি শিক্ষকরা একই পাঠক্রমে পাঠদান করান এবং সরকারির চাইতে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থা অগ্রগামী তাহলে কেন এই বৈষম্য? শ্রম মেধায় কোনো অংশেই বেসরকারি শিক্ষকরা সরকারি শিক্ষকদের চেয়ে পিছিয়ে নেই।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট বিনীত প্রার্থনা, সরকারি নিয়মে ঈদ বোনাসের ঘোষণা দিয়ে চিরতরে সব বৈষম্য দূর করে জাতিকে বৈষম্যহীন শিক্ষাব্যবস্থা উপহার দিন। বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা চিরদিন আপনার পাশে থাকবে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

লেখক : সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (নজরুল)।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0059521198272705