ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারি টাকার অপচয় ও ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার সাবেক শিক্ষা কর্মকর্তা ফরিদউদ্দিন আহাম্মদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের একজন উপসহকারী পরিচালক সরেজমিন পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন। সূত্র জানিয়েছে, তদন্তে ফরিদউদ্দিনের অনেক অপকর্মের তথ্য খুঁজে পেয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
খোঁজ নিয়ে ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিশুদের জন্য বিদ্যালয় নেই এমন ১৫০০ গ্রামে ২০১২ সালে বিদ্যালয় নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। সেই লক্ষ্যে ফরিদগঞ্জে বিদ্যালয়বিহীন গ্রাম আছে কি না, এই তথ্য জানতে চায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। কিন্তু উপজেলার ত্রিদোনা গ্রামে ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকা সত্ত্বেও সেখানে নতুন বিদ্যালয় নির্মাণের উদ্যোগ নেয় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ। স্থানীয় একটি চক্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফরিদউদ্দিন আহাম্মদ ১৫০০ বিদ্যালয় প্রকল্পভুক্ত করে আগের বিদ্যালয় লাগোয়া নতুন বিদ্যালয় (ত্রিদোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়) নির্মাণের জন্য দরপত্রসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রমে হাত দেন। পরে সেখানে প্রায় ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন একটি ভবন নির্মাণ করেন ও শিক্ষার্থী না থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ দেন। এতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়াসহ নানা ক্ষতির মুখে পড়ে আগে প্রতিষ্ঠিত ত্রিদোনা প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ ঘটনায় বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মো. ওয়ালী উল্লাহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেন। কিন্তু উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ভুল তথ্য দিয়ে সংশ্লিষ্টদের বিভ্রান্ত করেন। সবশেষে তিনি দুদকে ন্যায়বিচার চেয়ে একটি আবেদন করেন।
ওয়ালী উল্লাহ বলেন, ‘প্রয়োজনীয় শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক থাকার পরও কী করে আমাদের গ্রামকে বিদ্যালয়বিহীন গ্রাম হিসেবে চিহ্নিত করা হলো সেই জন্যই অনেকের কাছে ন্যায়বিচার চেয়েছিলাম। এই বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া আমাদের সহযোগিতার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফরিদউদ্দিন আহাম্মদ এ নিয়ে বিভিন্ন বিভ্রান্তিমূলক তথ্য সরবরাহ করেন।’
এ বিষয় অতিসম্প্রতি দুদক কুমিল্লা অঞ্চলের উপসহকারী পরিচালক মোস্তফা বোরহান উদ্দিন সরেজমিন তদন্ত করেন। তিনি ত্রিদোনা গ্রাম, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় এবং উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহ করেন। ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী ড. জিয়াউল ইসলাম মজমুদার বলেন, ‘দুদকের এই কর্মকর্তা তদন্তকালে যেসব তথ্য চেয়েছেন তা আমার কার্যালয় থেকে সরবরাহ করা হয়েছে।’ মোস্তফা বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘তদন্তকালে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত যা পেয়েছি তা নিয়ে প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করা হবে।’
ফরিদগঞ্জ উপজেলা সাবেক শিক্ষা কর্মকর্তা ফরিদউদ্দিন আহাম্মদ বর্তমানে শরীয়তপুর সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পদে কর্মরত। এ ব্যাপারে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর বিরুদ্ধে এর আগে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।