সারাবছর এই একটি দিনেই বাবাদের যত কদর! ফেসবুকে বাবার একটি ছবি দিয়ে আবেগঘন স্ট্যাটাস, যত বেশি লাইক তত বেশি হিট! বাবা দিবস ঘিরে কমন বাঙালির এই কমন সংস্কৃতি অবশ্য এখানে নেই। গতকাল ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক জেসন হোল্ডার এসেও বক্তব্যের শেষে ফাদার'স ডের শুভেচ্ছা জানালেন। মাশরাফির কাছেও এ দিবসের দু-একটি মাহাত্ম্যের কথা শুনতে চেয়েছিল টেলিভিশন ক্যামেরা। সবাইকে দিবসটির শুভেচ্ছা জানিয়ে মাশরাফির সরল উত্তর, 'শুধু এই একটি দিনের জন্যই নয়, আমি এতটুকু বলতে পারি, প্রত্যেক বাবাই সারাবছর চান তার সন্তানটি ভালো থাকুক। সফল হোক। তাদের মনের ভাষাটা এমনই।'
বাবাদের মনের ভাষা যেমন পড়তে পেরেছেন, তেমনি আজ টনটনের উইকেটের ভাষাটিও সঠিকভাবে পড়ে নিতে চায় টাইগাররা। টনটনের এই মাঠে বিশ্বকাপেই শুধু ওয়ানডে খেলা হয়ে থাকে। শেষবার ১৯৯৯ বিশ্বকাপের পর এবারের বিশ্বকাপ। আজ এখানে ষষ্ঠ ওয়ানডে খেলা হবে, যেখানে এর আগে কখনোই খেলতে নামেননি মাশরাফি। শুধু লোকমুখে শুনেছেন, অনেক রান ওঠে এখানে। কাল কাছে গিয়ে সেখানে ঘাসের উপস্থিতিও দেখতে পেয়েছেন। তাই এই পিচ নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্ত গোটা দল। তিনশ' নাকি দুইশ' আশি- কোন স্কোরটি ধরে কৌশল ঠিক করবে। শেষবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওভালে পিচের ভাষা বুঝতে না পেরেই ভুল করেছিল বাংলাদেশ। অন্তত মাশরাফি তেমনই মনে করেন, 'এ ধরনের ম্যাচে যে দল পিচের ভাষা আগে বুঝতে পারবে, তারাই এগিয়ে যাবে। রেজাল্টও তাদের দিকেই ঝুঁকবে। কেননা, পিচের চরিত্র বুঝতে না পেরে আমরা অনেক সময় তাড়াহুড়া করে উইকেট দিয়ে আসি।' তবে উইকেটের এই ভাষা পড়ে নেওয়ার ব্যাপারে অভিজ্ঞতা একটি বড় শক্তি। মাশরাফি মনে করেন, বাইশ গজে গিয়ে ব্যাটসম্যানকেই বুঝতে হবে সেখানকার পরিস্থিতি কী। বাইরে থেকে ধারাভাষ্যকার কিংবা অন্য কেউ কে কী বলল, তা কানে নিয়ে লাভ নেই।
টনটনের পিচের মতো এখানকার বাউন্ডারি নিয়েও প্রচুর কৌতূহল সবার। ছোট্ট মাঠে ক্যারিবীয় হার্ডহিটাররা তো টোকা মারলেই ছক্কা! আর একবার যদি মাথায় খুনে মেজাজটা চড়ে বসে গেইলদের, তাহলে সব অনুমানই মিথ্যা হয়ে যেতে পারে। এটা মাশরাফি নিজেও জানেন, 'এটা ঠিক যে মাঠটির বাউন্ডারি একদিক থেকে ছোট; কিন্তু ছক্কা তো আর বার হয়ে যাবে না। ছক্কা তো ছক্কাই; বরং ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে যদি কোনো একটি মিস হয়, তাহলে আমাদেরই সুবিধা। ওদের শুরুতেই আক্রমণ করতে হবে। কারণ আমরা দেখেছি, ওরা যে কোনো পরিস্থিতিতেই চালিয়ে খেলতে পছন্দ করে। ওদের ড্যামেজ করতে দেওয়া যাবে না।' ক্যারিবীয় যে হার্ডহিটারকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক সেই আন্দ্রে রাসেল কিন্তু হাঁটুর ব্যথায় ভুগছেন। স্বদেশি সাংবাদিকদের কাছ থেকেই মাশরাফি জেনে নিয়েছেন, এদিন অনুশীলন করেননি রাসেল। আজ খেলবেন কি-না, সেটাও। তবে মাশরাফির আলাদা কৌতূহল ছিল শাই হোপকে নিয়ে। বাংলাদেশকে পেলেই সুপারম্যান হয়ে যান তিনি!
তবে এদের সঙ্গে এত এত বেশি খেলা হয়েছে গত কয়েক মাসে যে টাইগাররা জানে, কখন কোথায় আঁচড় কাটতে হবে আর কখনই বা হুঙ্কার ছাড়তে হবে। তাই এই ম্যাচটির স্নায়ুর লড়াইয়ে অন্তত বেশ এগিয়ে বাংলাদেশ। এখন চ্যালেঞ্জটা শুধু টনটনের বাইশ গজের মনের কথা পড়ে নেওয়ার। সারাবছর নিঃস্বার্থভাবে খেটে যাওয়া বাবার মতোই টনটনেরও একটা চাপা কষ্ট আছে। ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দের পুরনো মাঠ, ৩৬ বছর আগে ওয়ানডে অভিষেক হয়েও আজ মাত্র সেখানে ছয় নম্বর ম্যাচ হবে! পিচের বুকে সে কী লিখে রেখেছে, আজ তা মস্তিস্ক দিয়েই পড়ে নিতে হবে টাইগারদের।