উচ্চ শিক্ষার নামে পাচার ব্যবসা!

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক |

goon college mag

রাজধানীর কারওয়ানবাজারের ঢাকা ট্রেড সেন্টারে পাইওনিয়ার ট্রেডিং চেইন (পিটিসি) নামে যে প্রতিষ্ঠানটি রয়েছে, সেটি বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থী পাচার করছে মালয়েশিয়ায়। প্রথমবার পাচারের পর এসব শিক্ষার্থীকে আবারো অস্ট্রেলিয়ায় বা পোল্যান্ডে পাচার করেন সেখানকার ভিসা ব্যবসায়ীরা।

সম্প্রতি মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের জালান তুন এইচ এস লি’তে ঘুরে দেখা যায়, উইসমা ঈগল আই ভবনের ৫ তলায় কয়েকটি কক্ষ নিয়ে গড়ে উঠেছে ‘গুন ইন্টারন্যশনাল কলেজ’। সেখানে রয়েছে কয়েক হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী।

সূত্র জানায়, এই কলেজটিকে ইতিমধ্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে আর কোন শিক্ষার্থী না আনার। তবে দুই মাস আগেও যেসব শিক্ষার্থীর ডকুমেন্টস প্রসেস করা হয়েছে, তারা এখনো আসছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানে কোন রকমে শুধু স্বাক্ষর সংগ্রহের ক্লাস চলে। এখানে ২০টিরও বেশি বিষয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়।

বাংলাদেশ থেকে গুন কলেজে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী পাঠাচ্ছে কারওয়ানবাজারের ঢাকা ট্রেড সেন্টারের এজেন্ট প্রতিষ্ঠান পিটিসি। এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে রয়েছেন আব্দুল কাদের ভূঁইয়া শিশির।  তিনি বর্তমানে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন।

জামালপুর থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে মালয়েশিয়ায় গেছেন সজীব আহমেদ। তিনি বলেন, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে পিটিসি’তে যাই। সেখানে বলা হয়, গুন কলেজের ডিপ্লোমা কোর্সের কথা। একই সঙ্গে পার্ট টাইম চাকরি করে আয় করা যাবে বলেও জানায় পিটিসি।

সবমিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা খরচ করে এই শিক্ষার্থী মালয়েশিয়া যান। সেখানে তার কাছ থেকে শিশির পাসপোর্ট নিয়ে কলেজে জমা দেন। প্রায় ৪ মাস পর হাতে পাসপোর্ট পান এই শিক্ষার্থী। এরই মধ্যে পুলিশ ধরে তার কাছ থেকে ৮০০ রিঙ্গিত হাতিয়ে নেয়।

সূত্র বলছে, বেশিরভাগ সময়ই শিশির কলেজে ভর্তি ফি জমা দেয় না শিক্ষার্থীদের। এর ফলে অনেক শিক্ষার্থীই কুয়ালালামপুর পৌছে পড়েন বিপাকে। এয়ারপোর্ট থেকে শিক্ষার্থীদের আনার জন্যে কলেজ থেকে লোক পাঠানোর কথা থাকলেও যাচ্ছে না।  এভাবেই কাজের লোভ দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থী পাচার করছে গুন কলেজ।

সম্প্রতি কুয়ালালামপুরে কলেজের ৪ জন শিক্ষার্থী তাদের অভিযোগ জানিয়ে বলেন, এখান থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের পোল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়া পাঠানোর চেষ্টা করছে। এ জন্য টাকাও চাওয়া হচ্ছে।

শরীয়তপুরের একজন শিক্ষার্থী জানান, মালয়েশিয়ায় ভবিষ্যত নেই। আমরা বুঝতে পেরেছি। দালালদের প্রলোভনে পড়ে এখানে এসেছি। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কলেজে ফ্রি থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। অথচ এখন দেখি সেখানে অনেক টাকা দিয়ে থাকতে হবে। আর এখানে ক্লাস হচ্ছে লোক দেখানো। এখন কলেজের প্রিন্সিপালই বলছেন, তোমরা অস্ট্রেলিয়া বা পোল্যান্ড চলে যাও। আমি ব্যবস্থা করে দেবো। এজন্য এখন আবার ২০ হাজার রিঙ্গিত (৫ লাখ টাকা) চাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া এবং পোল্যান্ডের কলেজগুলোর শিক্ষার্থী প্রদানের চুক্তি রয়েছে। যে কোন সেমিস্টারেই যাওয়া যাবে।  তবে আমার মালয়েশিয়া আসার খরচ এখনো শোধ করতে পারেনি পরিবার। কিন্তু এখানে থাকলেও কিছু হবে না। কাজের সুযোগ নেই। আবার প্রতি বছর ৬ হাজার রিঙ্গিত দিয়ে ভিসা নবায়ন করতে হবে। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া বা পোল্যান্ডে যাওয়ার পয়সা পাবো কই! আর এর আগে অনেকেই টাকা দিয়েও অস্ট্রেলিয়া বা পোল্যান্ড যেতে পারেনি। দুই বছর হয়েছে টাকা জমা দিয়েছে। আর এখানে আমাদের টাকা ফেরত না দিলেও বিদেশের মাটিতে আমাদের জন্য কোন বিচার নেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গুন কলেজের পাশাপাশি আরো দুটি ভিসা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী পাঠান পিটিসি’র আব্দুল কাদের। পাইওনিয়ার ট্রেডিং চেইন ছাড়াও অপটিমা কলেজে শিক্ষার্থী ব্যবসা করেন তিনি।

কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতারা জানান, এ ধরনের কলেজে শিক্ষার্থীদের পাচার করে বাংলাদেশি দালালরা। আর এসব ভিসা কলেজগুলো আবারো শিক্ষার্থীদের পাচার করে ইউরোপ বা অস্ট্রেলিয়ায়। এ চক্রে সর্বস্ব হারাতে হয় শিক্ষার্থীর পরিবারকে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0054090023040771