উচ্চ শিক্ষায় বছরে বিদেশ যাচ্ছে ৬০ হাজার শিক্ষার্থী

নিজামুল হক |

বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এখন মালয়েশিয়া, নিউজিল্যান্ড, জাপান বা দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশও। এমনকি পাশের দেশ ভারতও এখন দেশের শিক্ষার্থীদের অন্যতম গন্তব্য। দেশে মানসম্মত উচ্চশিক্ষার সুযোগ কম। তাছাড়া  সর্বাধুনিক শিক্ষা ও বৈশ্বিক সুবিধা লাভের জন্য শিক্ষার্থীরা বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনেস্কোর ‘গ্লোবাল ফ্লো অব টারশিয়ারি লেভেল স্টুডেন্টস’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৬ সালে বাংলাদেশ থেকে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে ৬০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। ২০১৫ সালে এ সংখ্যা ছিল ৩৩ হাজার ১৩৯। একবছরের ব্যবধানে এ সংখ্যা বেড়েছে ৮২ শতাংশ। বিদেশ যাওয়া শিক্ষার্থীদের হার বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৭ সালে এ সংখ্যা এক লাখ ছাড়াতে পারে।

তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে শুধু মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছে ৩৪ হাজার ১৫৫ জন।  এছাড়া কানাডায় ২ হাজার ২৮ জন, ভারতে ১ হাজার ৯৯ জন, জাপানে ৮১০ জন, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৪৫৫ জন গেছেন। থাকার খরচ, আবহাওয়া, খাবারের অভ্যাস ও সামাজিক রীতিনীতি অনেকটা বাংলাদেশের মতো হওয়ায় মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন এ খাতের সংশ্লিষ্টরা।

এছাড়া তুরস্কে ২৫৫ জন, কাতারে ২৪০ জন, ওমানে ১০৩ জন ও পোল্যান্ডে ১০৩ জন, নিউজিল্যান্ড ৩২৬ জন, সাউথ আফ্রিকায় ৩৯ জন, শ্রীলংকায় ২৩ জন, জর্দানে ৯ জন, ইরানে ১৪ জন, লিথুয়ানিয়া ১২ জন ও মরিসাসে গেছে ৬ জনের মতো বাংলাদেশি শিক্ষার্থী।

সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ৬০ হাজার শিক্ষার্থী বিদেশে যাওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে গেছে ৬ হাজার কোটি টাকা। বিদেশ যাওয়ার মাধ্যমে একদিকে বাংলাদেশি টাকাও বিদেশে চলে যাচ্ছে। অন্যদিকে এসব শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষা শেষে আর দেশে ফিরে আসছে না। এভাবে অর্থ ও মেধা উভয় পাচার হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নানও এ কথার সঙ্গে একমত পোষণ করে  বলেন, বিদেশ যাওয়ার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা বিদেশ চলে যাচ্ছে। অথচ আমরা বিদেশ যাওয়া শিক্ষার্থীদের ফেরাতে পারি। কিন্তু আমরা সেটা করছি না। বাংলাদেশে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা পরিচালনার জন্য আমরা আইন করছি। কিন্তু আইন বাস্তবায়ন করছি না।

দেশে ৪০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি নয়। অথচ উচ্চ শিক্ষার জন্য স্বপ্ন দেশের ৮ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীর। আসন সংখ্যা কম থাকায় অনেকেরই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন পূরণ হয় না। এসব শিক্ষার্থীকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি-বেসরকারি কলেজ অথবা বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে সে স্বপ্ন পূরণ করতে হচ্ছে।

এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে সাড়ে ৮ লাখ শিক্ষার্থী। এদের প্রায় সকলেই উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন দেখছে। শর্ত থাকায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্ধেকের মতো শিক্ষার্থী আবেদনই করতে পারে না। আবার আবেদনের যোগ্যতা থাকলেও তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। গত শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭ হাজার ১২৩ আসনের বিপরীতে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৭১৫ জন শিক্ষার্থী আবেদন করে। প্রতিটি আসনের বিপরীতে আবেদনকারী ছিল ৩৯ জন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষে ৪ হাজার ৯২৪টি আসনে ভর্তির জন্য চূড়ান্তভাবে মোট আবেদন জমা পড়ে ১ লাখ ২৬ হাজার ৫৭টি। ফলে ওই বছর প্রতি আসনের বিপরীতে লড়ে ২৬ শিক্ষার্থী। একই বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান) ৪ হাজার ১১৯টি আসনের বিপরীতে ৩ লাখ ১৬ হাজার ১২০ জন ভর্তিচ্ছু আবেদন করে। প্রতি আসনে লড়ে ৭৭ জন শিক্ষার্থী। ফলে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে বাদ পড়ছে অধিকাংশ শিক্ষার্থী। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে।

অন্যদিকে দেশে ১০৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও একাডেমিক কার্যক্রম চলছে ৯৫টিতে। এর মধ্যে ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। যা আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। ৩টি বিশ্ববিদ্যালয় অননুমোদিত ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে। চলমান ৯১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৫টিতে উপাচার্য নেই, ১৭টিতে উপ-উপাচার্য ৫০টিতে আইন অনুযায়ী কোষাধ্যক্ষ নেই। স্থায়ী ক্যাম্পাসে যায়নি বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়।

হাতে গোনা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি না করে মালিকরা টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়ে যায়। ফলে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া বলতে কিছুই হচ্ছে না।

যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে মান ভালো সেখানে উচ্চমাত্রায় টিউশন ফি। অভিভাবকরা বলেন, বিদেশ গিয়ে লেখাপড়া করতে যে টাকা প্রয়োজন তার চেয়ে আমাদের দেশে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় বেশি টিউশন ফি আদায় করছে। ফলে মান ভালো হলেও সামর্থ্যের কারণে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার আগ্রহ কমছে অনেক শিক্ষার্থীর। এ কারণে এইচএসসি উত্তীর্ণদের মধ্যে একটি অংশের বিদেশে গিয়ে উচ্চ শিক্ষার আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। তাছাড়া বিদেশে গিয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি চাকরিরও সুযোগ মেলে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, উচ্চ শিক্ষার সুযোগ তাদের জন্য একেবারেই সীমিত। বিদেশে গিয়ে খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেই কেবল উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন পূরণ হবে এমনই ধারণা তাদের।

 

সৌজন্যে: ইত্তেফাক


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030040740966797