উত্তরপত্র জালিয়াতির কথা স্বীকার রৌমারীর শিক্ষা কর্মকর্তার

রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি |

টাকা নিয়ে পরীক্ষার্থীদের বেশি নম্বর পাইয়ে দিতে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার উত্তরপত্র জালিয়াতি করেছেন সাহেদুল ইসলাম নামের সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা। তিন বছর ধরে তিনি এই অপকর্ম করে মোটা অঙ্কের টাকা  কামিয়েছেন কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য দিয়েছেন বলে জানিয়েছে থানা পুলিশ। গ্রেফতারের পর বুধবার (১৬ জানুয়ারি) তাকে আদালত থেকে সাত দিনের রিমান্ডে নেয় রৌমারী থানা পুলিশ।

সাহেদুল ইসলাম 

রৌমারী থানা সূত্র জানায়, উপজেলার গোয়াল গ্রামের সৃজন মডেল স্কুল ও সাকসেস মডেল স্কুলের সাত পরীক্ষার্থীকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাইয়ে দিতে মোটা অঙ্কের টাকা নেন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সাহেদুল ইসলাম। এরপর বাইরে লেখা সাত পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্র গোপনে অফিস কার্যালয়ে থাকা উত্তরপত্রের প্যাকেটে সংযুক্ত করে দেন। আর পরীক্ষাকেন্দ্রে লেখা সাত পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্র সরিয়ে ফেলেন।

আরও পড়ুন: রাতের আঁধারে সমাপনীর খাতায় উত্তর লিখলেন শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষক

উপজেলা শিক্ষা অফিস জানায়, সাত পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্র জালিয়াতিতে সাহেদুল ইসলামের সঙ্গে জড়িত অফিসের পিয়ন সাদ্দাম হোসেন, সৃজন মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন ওরফে আবু শাহিন ও সাকসেস মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু মুছা। জালিয়াতি করে বাইরে থেকে লেখা উত্তরপত্রগুলো ধরা পড়ে মূল্যায়নকারী পরীক্ষকদের হাতে। পরে ওই সাত পরীক্ষার্থীর হাতের লেখা পরীক্ষা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপঙ্কর রায়। এতে জালিয়াতির বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ার পর অভিযুক্ত চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। পরে থানা পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে।

রৌমারী থানার ওসি দেলোওয়ার মো. হাসান ইমাম জানান, মামলায় সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাকে রিমান্ডে আনা হয় থানায়। তিনি উত্তরপত্র জালিয়াতির সব অভিযোগ স্বীকার করেন।

সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সাহেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনিয়ম, শিক্ষকদের অত্যাচার ও ঘুষ নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। গত বছর ১৫ জানুয়ারি উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৮০ জন প্রধান শিক্ষক প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর এসব অভিযোগ করেন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশে লালমনিরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মবেজ উদ্দিন সরেজমিনে অভিযোগ তদন্ত করেন। তদন্ত শেষে মবেজ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘অভিযোগের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সতত্যা পাওয়া গেছে। আমি তথ্য-প্রমাণসহ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছি।’

অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, সাহেদুল ইসলাম সাব-ক্লাস্টার প্রশিক্ষণ না দিয়ে বরাদ্দকৃত টাকা ভুয়া বিল-ভাউচারে আত্মসাৎ ও ক্লাস্টারের আওতায় শিক্ষকদের ডেকে নিয়ে তারিখ ও শিডিউলবিহীন কাগজে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করেন। শিক্ষকদের নৈমিত্তিক, চিকিৎসার জন্য ছুটিতে ঘুষ নেন, বিদ্যালয়ে উপস্থিত না হয়ে ভুয়া পরিদর্শন প্রতিবেদন দেন, শ্রেণি পাঠদানে কোনো পরামর্শ না দিয়ে বদলি ও ডেপুটেশন (প্রেষণ) দেওয়ার ভয় দেখিয়ে এবং চাকরিচ্যুতির ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা নেন। এ ছাড়া উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে স্লিপ কার্যক্রমের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার সময় দুর্নীতি করেন। কাব স্কাউট প্রতিজ্ঞা আইন ও মটো ব্যানার প্রতি ১০০ টাকা খরচ করে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে নেন এক হাজার টাকা করে। বিদ্যালয়ে এসএমসি (শিক্ষার্থী নেতৃত্ব) গঠনের ব্যয়ভার বহনের নামে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছ থেকে ঘুষ নেন ওই অভিযুক্ত শিক্ষা কর্মকর্তা সাহেদুল ইসলাম।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0059850215911865