উপজেলা পর্যায়ে টেকনিক্যাল স্কুল-কলেজ স্থাপনের প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক |

প্রথম পর্যায়ের ১০০টি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মাণে বিরাজ করছে ধীরগতি। মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই মাস বাকি থাকলেও প্রকল্পটির বাস্তবায়ন অগ্রগতি মাত্র ১৫ দশনিক ৬ শতাংশ। এ অবস্থায় উপজেলা পর্যায়ে আরও ৩৮৯টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপনের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।

প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায় বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৫০১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। কিন্তু এই প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। কারণ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকের নির্দেশনা অনুযায়ী যথাযথভাবে জরিপ পরিচালনা না করে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ থেকে দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে।

তবে ভেটো দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন) অজিত কুমার ঘোষ। বুধবার তিনি বলেন, বিষয়টি সেরকম নয়। একনেকে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া নির্দেশনা মেনে জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে। সেটি হয়তো মানের দিক থেকে কম বা বেশি হতে পারে।

তবে পরিকল্পনা কমিশন থেকে ফেরত দেয়া উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) এখনও আমাদের হাতে আসেনি। তবে শুনেছি অনেক বিষয় জানতে চাওয়া হয়েছে। ডিপিপি হাতে পেলে ২১ দিনের মধ্যেই আমরা তা সংশোধন করে পাঠাতে পারব।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে প্রথম পর্যায় প্রকল্পটির বাস্তবায়ন অগ্রগতি কম। কেননা ১০০টির মধ্যে এখনও ৭টি উপজেলায় জায়গার সংস্থান করা সম্ভব হয়নি।

সূত্র জানায়, ভোকেশনাল শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিস্তারের লক্ষ্যে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত একটি কারিগরি বিষয়, মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ভোকেশনাল কোর্স এবং স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স চালুর উদ্দেশ্যে শিক্ষার অবকাঠামোগত সুবিধা বৃদ্ধির জন্য উপজেলা পর্যায় ৩৮৯টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন (দ্বিতীয় পর্যায়) নামে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

অনুমোদন পেলে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ থেকে প্রকল্পটির দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রস্তাব পাওয়ার পর গত ১৩ সেপ্টেম্বর একনেকে অনুমোদন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার কার্যবিবরণী সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, ‘একনেকে নির্দেশনা থাকলে সেটি মানতে হবে। বিষয়টি আমার নলেজে নেই। তবে নির্দেশনা যথাযথভাবে না মেনে প্রকল্প প্রস্তাব করা হলে খতিয়ে দেখা হবে।’ সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, প্রথম পর্যায়ে ১০০টি উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপনের লক্ষ্যে ২ হাজার ২৮১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় একনেক। ২০১৮ সালের (চলতি বছরের) ডিসেম্বরের মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য ২০১৬ সালের ২৮ জুন একনেক অনুমোদন দেয়া হয়। ওই একনেক সভায় নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়েছিল, দেশের প্রতিটি উপজেলায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে কারিগরি শিক্ষা, ভোকেশনাল ট্রেনিং সংক্রান্ত স্কুলসহ কতগুলো স্কুল ও কলেজ রয়েছে (সাধারণ ও ভকেশনাল), কতজন শিক্ষার্থী, কী কী বিষয়ে পড়ানো হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রকৃত জমির পরিমাণ কত এবং তার মধ্যে অব্যবহৃত জমির পরিমাণ ইত্যাদি তথ্যভিত্তিক একটি জরিপ পরিচালনা করতে হবে। সেই জরিপের প্রতিবেদন দ্রুত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট সেক্টরে সরবরাহ করতে হবে। আর ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে বাকি উপজেলাগুলোয় (টেকনিক্যাল বা সাধারণ) স্কুল ও কলেজ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু ওই সিদ্ধান্ত মোতাবেক যথাযথ প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।

এ প্রসঙ্গে পিইসি বৈঠকে প্রশ্ন তোলা হলে সেখানে উপস্থিত থাকা কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের একজন প্রতিনিধি সভাকে জানান, যথাযথভাবে প্রতিবেদন তৈরি করে প্রেরণ করা হবে। সভায় প্রস্তাবিত প্রকল্পটির বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। বলা হয়, চলমান প্রকল্পে একটি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের জন্য বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ২২ কোটি ৮২ লাখ টাকা। কিন্তু প্রস্তাবিত প্রকল্পে প্রতিটি স্কুল ও কলেজের জন্য গড়ে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ৪৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এর উত্তরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি জানান, প্রথম পর্যায়ে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য ১ দশমিক ৫ একর জমির সংস্থান ছিল, কিন্তু প্রস্তাবিত প্রকল্পে ৫ একর জমির সংস্থান রাখা হয়েছে। এছাড়া নতুন করে ছাত্রী হেস্টেল ও টিসার্স ডরমেটরির সংস্থান রাখা হয়েছে। তবে আলোচনার পর তিন একর করে জমির সংস্থান রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

প্রকল্পটি অনুমোদন পর অর্থায়নের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এক্ষেত্রে বলা হয়, চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) অননুমোদিত নতুন প্রকল্পের জন্য কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অনুকূলে সরকারি তহবিলের থোক বরাদ্দ রয়েছে মাত্র ৮ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।

পরে সভায় উপস্থিত বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিনিধি প্রস্তাবিত প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করে নিড বেইজড ডিজাইন তৈরির তাগিদ দেন। এছাড়া সভায় প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত পরামর্শক খাতের ব্যয় বাদ দিতে বলা হয়েছে। প্রস্তাবিত ৫ সেটের পরিবর্তে ৩ সেট কম্পিউটার ক্রয়, ল্যাপটপ আইডি প্রিন্টার ইত্যাদির মূল্য যৌক্তিকভাবে নির্ধারণসহ বেশকিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032339096069336