কেউ কিনছে নতুন স্কুলব্যাগ, কেউ কিনেছে ছাতা। কারো হাতে নতুন খাতা-কলম, কেউ বানিয়েছে নতুন স্কুলপোশাক। সরকার থেকে পাওয়া উপবৃত্তির টাকা দিয়ে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার গ্রামাঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীই শিক্ষোপকরণ কিনছে। এতে গ্রামীণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বেড়েছে, কমেছে শিক্ষোপকরণ সংকটও। এ উপবৃত্তির টাকা পেতে স্কুলমুখী হচ্ছে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা। প্রাথমিকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর হারও কমতে শুরু করেছে।
কলাপাড়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে প্রত্যন্ত পল্লীতে নির্মিত বিদ্যালয় আরামগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ গ্রামে এখনও স্কুলের চেয়ে মাদরাসাতেই ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী মাত্র ৭০ জন। উপবৃত্তি পায় প্রায় ৯৮ ভাগ শিক্ষার্থী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিধ্বস্ত স্কুলভবন, খেলার মাঠ সংকট, স্কুলের সামনে কর্দমাক্ত মেঠো পথ থাকলেও স্কুলে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। সব শিক্ষার্থীই যেন পরিপাটী। এদেরই কয়েকজন সাথী, মিতু, কারিমা, হিরামনি, মীম, সুলতানা, ঝুমুর ও জান্নাতী। এরা সবাই চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। শিক্ষাথী সাথী জানায়, ‘আগে আমার স্কুল ব্যাগ আছিলো না। হাতে কইর্যা বই আনতে আনতে চিইর্যা যাইতো। এইবার উপবৃত্তি পাইয়াই স্কুল ব্যাগ কিনছি।’ অপর শিক্ষার্থী মিতু জানায়, ছোডকালে একটা ব্যাগ কিইন্যা দিছিলো। হেইডায় বেশি বই ধরতো না। তাই আমিও টাহা পাইয়া (উপবৃত্তি) স্কুল ব্যাগ কিনছি।
অভিভাবক মো. আখতার হোসেন, সেলিনা বেগম জানান, মোবাইলের টাকা আসলেই ছেলে-মেয়েরা স্কুলের উপকরণ ক্রয়ের জন্য বায়না ধরে। আসলে সবার পক্ষে তো আর প্রতিবছর স্কুল পোশাক, ব্যাগ, ছাতা কিনে দেয়া সম্ভব না। এ উপবৃত্তির টাকা পাওয়ায় অনেক অভিভাবক সন্তানের আবদার পূরণ করতে পারছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আইয়ুব হোসেন জানান, প্রত্যেক শিক্ষার্থী মাসে একশ টাকা করে বছরে ১২শ টাকা পায়। অভিভাবকদের মোবাইল ফোনে শিওর ক্যাশের মাধ্যমে এ টাকা প্রদান করা হয়। উপবৃত্তির টাকা পেয়েই অধিকাংশ শিক্ষার্থী শিক্ষোপকরণ ক্রয় করতেই এ টাকা ব্যয় করে।
ধুলাসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান জানান, চলাঞ্চলের শিক্ষার্থীরাই এই স্কুলে বেশি আসে। স্কুলে মা সমাবেশ হয়, পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার সময় যখন অভিভাবকরা উপস্থিত হয় তখন উপবৃত্তির টাকা শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার কাজে ব্যয় করার জন্য অভিভাবকদের সচেতন করা হয়। গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ, শিক্ষার্থী উপবৃত্তির টাকা শিক্ষা উপকরণ ক্রয়ে ব্যয় করলেও শহরাঞ্চলের উচ্চবিত্ত পরিবারে এ টাকা ব্যয় হয় শিক্ষার্থী কিংবা অভিভাবকদের বিলাসিতায়। এ তথ্য জানালেন পৌর শহরের একাধিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
আরামগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সেলিনা নাসরিন জানান, সরকার উপবৃত্তি দেয়ায় এখন স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি এবং পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। কমেছে ঝরে পড়ার প্রবণতা।