মায়ের কোলে চেপে এইচএসসি পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন রিনা আক্তার। শারীরিক প্রতিবন্ধিতা রুখতে পারেনি রিনা আক্তারের লেখাপড়ার আগ্রহ। জন্ম থেকেই দুটি পা বিকলাঙ্গ। ইচ্ছে শক্তির জোরে শারীরিক প্রতিবন্ধিতাকে জয় করে এগিয়ে চলেছে সোনারগাঁ উপজেলার বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের দামোদরদী গ্রামের মেয়ে রিনা আক্তার।
মায়ের কোলে চেপে স্কুলে যাওয়া শুরু করেন রিনা আক্তার। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ-৪.৮৩ পেয়েছে। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে বৈদ্যেরবাজার এনএএম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৪.৯০ পেয়েছে। এতে লেখাপড়ার প্রতি তার উৎসাহ আরও বেড়ে যায়। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৪.৫৫ পেয়েছে। দরিদ্র বাবা-মায়ের পক্ষে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। সবার সহযোগিতায় সোনারগাঁ ফজলুল হক উইমেন্স কলেজে আইকম ভর্তি হয়। এই কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন রিনা।
এ প্রসঙ্গে রিনা আক্তার বলেন, আমার দুই পা অচল। কিন্তু বাবা-মা আমাকে ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়া করতে উৎসাহ দিতেন। আমি লেখাপড়া শিখে অনেক দূর এগিয়ে যেতে চাই। অনার্স, মাস্টার্স করে চাকরি করে স্বাবলম্বী হতে চাই। দরিদ্র বাবা-মায়ের পক্ষে আমার লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
রিনার বাবা আবদুল সোবহান ছিলেন একজন শরবত বিক্রেতা। শরবত বিক্রির টাকায় তার সংসার চলত। তিন মেয়ে ফারজানা, পান্না আক্তার, রিনা আক্তার এবং ছেলে মহিউদ্দীনের লেখাপড়ার খরচ চালাতেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে তার বাবা চলে যান না ফেরার দেশে। লেখাপড়া বাদ দিয়ে সংসারের হাল ধরতে বাবার পেশা বেছে নেন বড় ভাই মহিউদ্দীন।
চার চাকার ভ্যানগাড়িতে রাস্তায় রাস্তায় শরবত বিক্রি করে রোজগার করেন। সামান্য এই রোজগারে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। বড় বোন ফারজানার বিয়ে হয়েছে। ধার-দেনা করে মেজ বোন পান্নাকে বিয়ে দেন মা। বসতভিটা ছাড়া সহায়সম্বল বলতে আর কিছু নেই। তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে রিনা সবার ছোট। রিনার লেখাপড়ার প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহ। কিন্তু ভাইয়ের রোজগারের আয়ে লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে যাওয়া দুঃসাধ্য হয়ে পড়ছে। তার ঘরে পড়ার একটি টেবিলও নেই।