মাসুদুল হক নামে এইচএসসি পাস এক ব্যক্তির এমবিবিএস চিকিৎসক পরিচয়ে অস্ত্রোপচারসহ নানা চিকিৎসা কার্যক্রমের প্রতিবাদ জানিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছে মাগুরা ক্লিনিক মালিক সমিতি। রোববার (১৬ জুন) দুপুরে তারা এ স্মারকলিপি দেন।
মাগুরা ক্লিনিক মালিক সমিতির সভাপতি মনিরুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ আহমেদের অভিযোগ, মাসুদুল হক নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন যাবত মাগুরায় অস্ত্রোপচারসহ নানা অপচিকিৎসা চালিয়ে আসছেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি চিকিৎসক নন।
তিনি নিজেকে এমবিবিএস ডিগ্রিধারী হিসেবে পরিচয় দেবার পাশাপাশি পিজিটি, সিডিডি সার্জন বলে দাবি করেন। আসলে তিনি মানবিক বিভাগে এইচএসসি পাস। পরে ১৫ বছর রাশিয়ায় থেকে একটি ডিপ্লোমা সনদ জোগাড় করেছেন। দেশে ফিরে এমবিবিএস ডাক্তার পরিচয়ে অস্ত্রোপচারসহ নানা প্রকার চিকিৎসা শুরু করেন। তার ভুল অস্ত্রোপচারে অনেক রোগী মারা গেছে। অনেকে জটিল অসুস্থায় ভুগছেন।
২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে ঝিনাইদহের কালিগঞ্জে এক রোগীর খাদ্য নালিতে অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে তার একটি নাড়ি কেটে গেলে ক্ষত স্থান পলিথিন পেপার দিয়ে বেধে দেয়া হয়। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। ডাক্তাররা আবার অস্ত্রোপচার করে ওই পলিথিন উদ্ধার করেন। এ সময় মাসুদুল হককে পলিথিন ডাক্তার হিসেবে উল্লেখ করে পত্র-পত্রিকায় ব্যাপক লেখালেখি হয়।
যার সূত্র ধরে স্থানীয় প্রশাসন তার বিরুদ্ধে তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে তাকে জেল হাজতে পাঠায়। পরে জামিনে মুক্ত পেয়ে ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ড্যাবের সদস্য পদ নেন ও বিএমডিএস ঢাকায় চিকিৎসক হিসেবে নিবন্ধিত হন। যার নম্বর-এ-৪৩২১৪ তাং ১২.০৯.০৬।
মনিরুজ্জামান ও ফরহাদ আহমেদের আরও অভিযোগ, এই নিবন্ধনের পর মাগুরায় এসে মাগুরা ডায়াবেটিক হাসপাতালের চিকিৎসক হিসাবে যোগদান করে মাসুদুল হক। এখনো সেখানেই কর্মরত আছেন। পাশাপাশি মাগুরা সদর হাসপাতালের পূর্বদিকে ১০তলা ভবন নির্মাণ করে বানিয়েছেন নিজস্ব ক্লিনিক, ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ও চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট।
ক্লিনিক মালিক সমিতির অভিযোগ, ২০১২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে শুরু করে বিগত ৭ বছরে তারা মাসুদুল হকের ভুয়া চিকিৎসক পরিচয় তুলে ধরে জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন, ঢাকার উর্ধ্বতন কতৃপক্ষ বরাবর একাধিক চিঠি দিয়েছে। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। বরং ডাক্তার মাসুদুল হকের অপচিকিৎসা ক্রমশ বাড়ছে।
ক্লিনিক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন জানান, গত ১৩ জুন একটি টেলিভিশনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে মাসুদুল হকের সব অবৈধ পরিচয়ের তথ্য প্রমাণ উঠে আসে। সেখানে তিনি এমবিবিএস ডিগ্রিধারী নন এ কথা নিজেই স্বীকার করেছেন।
ক্লিনিক মালিক সমিতির অভিযোগ প্রাপ্তি স্বীকার করে মাগুরা জেলা প্রশাসক মো. আলী আকবর বলেন, ‘এ ব্যাপারে মাগুরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ফরিদ হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া পৃথক তদন্ত টিম গঠন করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সিভিল সার্জনকে বলা হয়েছে।’
অভিযুক্ত মাসুদুল হক বলেন, ‘আমি বিএমডিএস থেকে নিবন্ধন নিয়ে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত আছি। আমি সংবাদ সম্মেলন করে সব তথ্য উপস্থাপন করব।’