চলতি বছর উচ্চ মাধ্যমিক এবং সমমানের পরীক্ষায় পাস ও জিপিএ ৫ কমে যাওয়ায় বেড়ে গেছে খাতা পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা। কাঙ্ক্ষিত ফল না পাওয়ায় এবার সোয়া লাখ শিক্ষার্থী খাতা চ্যালেঞ্জ করেছেন। যদিও কয়েক বছর ধরে আবেদন করার হার বেড়েই চলেছে। শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন, গতবার থেকে শিক্ষার্থীরা জিপিএর সঙ্গে নম্বরপত্র বা কোন বিষয়ে কত নম্বর পেয়েছেন, তা দেখার সুযোগ পেয়েছেন। এ কারণেই পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করার সংখ্যা বেড়েছে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের তথ্যমতে, ১৯ জুলাই প্রকাশিত ২০১৮ খ্ররিস্টাব্দের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় খাতা পুনর্নিরীক্ষণের রেকর্ড হয়েছে। এবার ১০ শিক্ষা বোর্ডে এক লাখ ২৫ হাজার ২৩৮ শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিষয়ে অন্তত তিন লাখ আবেদন করেছেন। যদিও বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বর পরিবর্তন হবে না বলে জানিয়েছেন বোর্ড কর্মকর্তারা। গত বছরের তুলনার এবার আবেদনকারী বেড়েছে প্রায় ১৫ হাজার। আর আবেদনের সংখ্যা বেড়েছে ৩৩ হাজারের বেশি। ১০টি শিক্ষা বোর্ড থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এত বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থীর খাতা পুনর্নিরীক্ষণকে পাবলিক পরীক্ষায় খাতা মূল্যায়নের প্রতি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনাস্থা বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা। ২২ আগস্ট এই খাতা পুনঃনিরীক্ষণের ফল প্রকাশ করবে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড।
৮টি সাধারণ বোর্ড ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রাপ্ত তথ্যমতে, সারাদেশের মোট আবেদন করা পরীক্ষার্থীর মধ্যে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে ৪৬ হাজার ৩৭০ পরীক্ষার্থী এক লাখ ৩৪ হাজার খাতা পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করেছেন। চট্টগ্রাম বোর্ডে ১৭ হাজার ৭৪০ আবেদনকারী ৬১ হাজার ৬৯৯টি আবেদন করেছেন। বরিশাল বোর্ডে ৩ হাজার ৭৮৩ পরীক্ষার্থী ১৪ হাজার ৬৮২টি খাতা পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করেছেন। যশোর বোর্ডে ১৩ হাজার ১৫৪ পরীক্ষার্থী আবেদন করেছেন। বিভিন্ন বিষয়ে মোট ৩৩ হাজার ৫৫৮টি আবেদন পড়েছে। রাজশাহী বোর্ডে ১৩ হাজার ৪২৮ পরীক্ষার্থী ৩৪ হাজার ৪৬৮টি আবেদন করেছেন। দিনাজপুর বোর্ডে ৮ হাজার ৮৫৭ পরীক্ষার্থী ২৩ হাজার ৫৪২টি আবেদন করেছেন। সিলেট বোর্ডে ৭ হাজার ৬২৯ পরীক্ষার্থী মোট ১৮ হাজার ৩২২টি আবেদন করেছেন। কুমিল্লায় ৯ হাজার ৩৫৫ শিক্ষার্থী মোট ২৮ হাজার ৭৬৮টি আবেদন করেছেন। কারিগরি বোর্ডের তথ্য পাওয়া যায়নি।
সারাদেশে এত বেশি আবেদনের কারণ ব্যাখ্যা দিয়ে আন্তঃবোর্ড ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার সরকার বলেন, চলতি বছর অন্য বছরের চেয়ে ফল খারাপ হয়েছে। এ জন্য ফল পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করার সংখ্যা বেড়েছে। এবার ইংরেজি, আইসিটি, পদার্থবিজ্ঞানের পরীক্ষা কঠিন হওয়ায় অনেকেই কাঙ্ক্ষিত ফল পায়নি। এ তিন বিষয়ের আবেদন সবচেয়ে বেশি জমা পড়েছে।
বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, পুনর্মূল্যায়নে খাতার মোট ৪টি দিক দেখা হয়। এগুলো হলো- উত্তরপত্রে সব প্রশ্নের সঠিকভাবে নম্বর দেওয়া হয়েছে কি-না, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক রয়েছে কি-না, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে ওঠানো হয়েছে কি-না এবং প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটে বৃত্ত ভরাট ঠিক আছে কি-না। এভাবেই অতীতে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার সরকার আরও বলেন, আইসিটি বিষয়টি নতুন যুক্ত হওয়ায় এখনও অনেক শিক্ষার্থীর বুঝতে সমস্যা হচ্ছে। পাশাপাশি অনেক কলেজে ভালো মানের আইসিটি শিক্ষক না থাকায় ভালো ফল পাচ্ছে না। বিশেষ করে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ সমস্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। এ কারণে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীর আইসিটি বিষয়ের ফল পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন বেশি এসেছে।
বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, ফেল থেকে পাস নয়, বরং পাস করেছে কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ফল পায়নি এমন আবেদনের সংখ্যাই বেশি। তারপরও শিক্ষার্থীরা ফল পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করছেন, এটি উদ্বেগের কারণ।