চার হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তনএইচএসসির খাতা পুনর্নিরীক্ষণেও অসংখ্য ভুল

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

মাধ্যমিকের মতো উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার খাতা পুনর্নিরীক্ষণেও সকল বোর্ডেই অসংখ্য ভুল ধরা পড়েছে। পুনর্নিরীক্ষণে পরিবর্তন হয়েছে বহু পরীক্ষার্থীর ফল। ১০টি শিক্ষাবোর্ডে চার হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে প্রায় এক হাজার। ফেল করার পর খাতা চ্যালেঞ্জ করে প্রতিটি বোর্ডেই পাস করেছে বহু শিক্ষার্থী। বাকিদের বিভিন্ন গ্রেডে ফল পরিবর্তন হয়েছে। যথারীতি এবারও সবচেয়ে বেশি ফল পরিবর্তন হয়েছে ঢাকা বোর্ডে। শনিবার (১৭ আগস্ট) জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন বিভাষ বাড়ৈ।

গত ১৭ জুলাই প্রকাশ করা হয়েছিল উচ্চ মাধ্যমিক অর্থাৎ এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল। পাসের হার ছিল ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ, জিপিএ-৫ পায় ৪৭ হাজার ২৮৬ জন। ফল প্রকাশের পরদিন থেকেই ফলাফলে আপত্তি থাকলে খাতা পুনর্নিরীক্ষণের জন্য অনলাইনে আবেদনের সুযোগ পায় শিক্ষার্থীরা। পুনর্নিরীক্ষণ শেষে শুক্রবার থেকেই পৃথক পৃথকভাবে শিক্ষা বোর্ডগুলো নিজেদের ফল জানানো শুরু করেছে। যেখানে ফলাফলের ব্যাপক পরিবর্তনের চিত্রই ধরা পড়েছে। শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিসে আলাদা আলাদাভাবে টেলিফোনে যোগাযোগ করে ফল পরিবর্তনের তথ্য পাওয়া গেছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও স্ব স্ব বোর্ডে গিয়ে নিজেদের ফল জানতে পারছেন।

কিন্তু কেন ফলাফলে বিশাল এই সংখ্যা পরিবর্তন? এই প্রশ্নের উত্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সকলেই বলছেন, দ্রুত ফল প্রকাশের কারণে তাড়াহুড়াই এই অবস্থার কারণ। এসএসসির মতো এখানেও তিন ধরনের ভুল ধরা পড়েছে। এক, কিছু খাতায় নম্বরের যোগ ফল ঠিক ছিল না। দুই, কিছু উত্তরের নম্বর যোগ করা হয়নি। আর তিন, ওএমআর ফরমে বৃত্ত ভরাটেও বেশ কিছু ভুল পাওয়া গেছে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি পরীক্ষায় নতুন করে ২৩৭ পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিল। ফেল থেকে পাস করেছিল ১৪২ জন পরীক্ষার্থী। মোট ৫৭ হাজার ৫৫৫ পরীক্ষার্থী পুনর্নিরীক্ষণের জন্য আবেদন করেছিল ওই পরীক্ষায়। এইচএসসিতেও চিত্র মোটামুটি একই। পুনর্নিরীক্ষণের জন্য আবেদন করেছিল ৫২ হাজার ৯৮৪ জন পরীক্ষার্থী। গ্রেড পরিবর্তন হয়েছে এক হাজার ৫৮৬ জনের, আগে ফেল করলেও আবেদন করে পাস করেছে এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৮৯ । নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৪৫ পরীক্ষার্থী।

অন্যান্য শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম হলেও ফল পরিবর্তনের হার কম নয়। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে পুনর্নিরীক্ষায় ফল পরিবর্তন হয়েছে ৩৬৫ পরীক্ষার্থীর। ২৪ জন নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে। গ্রেড পরিবর্তন হয়েছে ২৯৭ জনের। ফেল থেকে পাস করেছে ৪৭ পরীক্ষার্থী।

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহবুব হাসান বলেন, ১৬ হাজার ৬৭৬ শিক্ষার্থী ৫৪ হাজার ২৭৫টি উত্তরপত্র পুনর্নিরীক্ষার আবেদন করেছিল। নিয়মানুযায়ী উত্তরপত্র নিরীক্ষা শেষে ফল প্রকাশ করা হয়েছে। অকৃতকার্যদের মধ্যে ২১ পরীক্ষার্থী নম্বর পরিবর্তন হলেও তারা উত্তীর্ণ হতে পারেনি।

পুনর্নিরীক্ষণে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের ৬৬ পরীক্ষার্থী ফেল থেকে পাস করেছে। ফল পুনর্নিরীক্ষণে নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৪ শিক্ষার্থী। গত ১৭ জুলাই উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। রাজশাহী বোর্ডে পাসের হার ছিল ৭৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এ বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৬ হাজার ৭২৯।

পুনর্নিরীক্ষণে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের ১৬ পরীক্ষার্থী ফেল থেকে পাস করেছে। নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ছয় শিক্ষার্থী।

পুনর্নিরীক্ষণে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের ৮ পরীক্ষার্থী ফেল থেকে পাস করেছে। নতুন জিপিএ-৫ পেয়েছে চারজন পরীক্ষার্থী। এ বোর্ডে পাঁচ হাজার ৩৯০ পরীক্ষার্থী ১৬ হাজার ৭৮৫টি পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করেছিলেন। যার মধ্যে ৪৮ জনের ফলাফলে পরিবর্তন হয়েছে।

দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করে ২৯ পরীক্ষার্থী ফেল থেকে পাস করেছে। পুনর্নিরীক্ষণে নতুন জিপিএ-৫ পেয়েছে ছয় শিক্ষার্থী। এ বোর্ডে ১৩৬ পরীক্ষার্থীর ১৪৩টি খাতার নম্বর পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে ফেল করা ২৯ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে।

কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে ৬২ পরীক্ষার্থী ফেল থেকে পাস করেছে। নতুন জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৬ শিক্ষার্থী। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের আলিম পরীক্ষায়ও ১৫ পরীক্ষার্থী ফেল থেকে পাস করেছে। নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯ পরীক্ষার্থী। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. কামাল উদ্দিন জানান, পুনর্নিরীক্ষণ শেষে গ্রেড পরিবর্তন হয়েছে ৬৩ শিক্ষার্থীর। এর মধ্যে ফেল থেকে পাস করেছে ১৫, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯ এবং গ্রেড বেড়েছে ৩৩ পরীক্ষার্থীর। এ বছর আলিম পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর তিন হাজার ২০৪ পরীক্ষার্থী ৭ হাজার ৪০৫টি খাতা পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করেছিল।

প্রায় একই হারে পরিবর্তন এসেছে যশোর ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ফলাফলেও। পরীক্ষার খাতা পুনর্নিরীক্ষণের কাজে সম্পৃক্ত বোর্ড কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পুনর্নিরীক্ষণে সাধারণত মোট ৪টি দিক দেখা হয়। এগুলো হলো উত্তরপত্রে সব প্রশ্নের সঠিকভাবে নম্বর দেয়া হয়েছে কিনা, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক রয়েছে কিনা, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে উঠানো হয়েছে কিনা, এবং প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটে বৃত্ত ভরাট ঠিক আছে কিনা। এসব বিষয় পরীক্ষা করেই পুনর্নিরীক্ষার ফল দেয়া হয়েছে।
 
ফল পরিবর্তন নিয়ে অনেক সময় ক্ষুব্ধ ব্যক্তি ও অভিভাবকরা খাতা পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করেন। কখানও কখানও চলে যান আদালতে। কিন্তু লাখ লাখ পরীক্ষার্থীর খাতা পুনর্মূল্যায়ন করতে গেলে পুরো ফলাফল প্রকাশে কয়েক মাস লেগে যাবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ ও বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও বর্তমানে সরকারী নাজিম উদ্দিন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সৈয়দ সাদিক জাহিদুল ইসলাম বলেছিলেন, আসলে পরীক্ষা ও ফল প্রকাশের নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে সরকার একটি যুগান্তকারী কাজ করেছে। এর ফলে একটি দিনেই পরীক্ষা হচ্ছে প্রতিবছর, ফল প্রকাশ হচ্ছে লিখিত পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে। ফলাফলে শিক্ষায় শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। এখন লাখ লাখ খাতা মূল্যায়ন করতে গিয়ে কখনও কখনও কিছু ভুল ধরা পরে। তবে সেই হারও ধীরে ধীরে কমে আসছে।

তিনি আরও বলেন, অনলাইনে আবেদনের ভালো ব্যবস্থা থাকায় আবেদনের সংখ্যাও বাড়ছে। এখন কেউ কেউ মনে করেন খাতা নতুন করে দেখা বা পুনর্মূল্যায়ন করলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। কিন্তু এটা আসলে সম্ভব নয়। এটা করতে গেলে পুরো ফল প্রকাশই অনিশ্চিত হয়ে পরবে। মাসের পর মাস লেগে যেতে পারে ফল প্রকাশ করতে। তারপরেও যখন ফল প্রকাশ হবে দেখা যাবে তখনও অনেকে ফল নিয়ে আপত্তি করবেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027451515197754