উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা বা এইচএসসি পরীক্ষার একই খাতায় বিভিন্ন রকম হাতের লেখা পাওয়ায় যশোর শিক্ষা বোর্ডে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ অভিযোগে খুলনা ও সাতক্ষীরার তিনটি কলেজের ২৭ শিক্ষার্থীকে দু বছরের জন্যে বহিষ্কার করা হয়েছে। যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের এইচএসসি পরীক্ষার ফল স্থগিত থাকা খুলনার পাইকগাছা উপজেলার রাড়লী আরকেবিকে কলেজিয়েট স্কুল কেন্দ্রের তিন প্রতিষ্ঠানের ওই পরীক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। একই সাথে ওই কেন্দ্রটি স্থগিত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বোর্ডের শৃংখলা কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তদন্ত কমিটির সদস্য ও বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মাধব চন্দ্র রুদ্র দৈনিক শিক্ষাকে জানান, গত মে মাসে এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হয়। আর ফলাফল প্রকাশ হয় ১৭ জুলাই। ফল প্রকাশের সময় খুলনার রাড়লী স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রের খুলনার পাইকগাছার চাঁদখালী ও রাড়লী আরকেবিকে কলেজিয়েট স্কুল ও সাতক্ষীরার তালা উপজেলার শালিখা কলেজের ২৭ পরীক্ষার্থীর ফলাফল স্থগিত রাখা হয়। ওই তিন প্রতিষ্ঠানের ৯ জন করে মোট ২৭ পরীক্ষার্থীর ইংরেজি প্রথম পত্রের খাতা মূল্যায়নকালে পরীক্ষকরা দেখেন একই খাতায় বিভিন্ন হাতের লেখা। পরীক্ষকরা বিষয়টি বোর্ডকে জানান। গত ২২ আগস্ট বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর মোহাম্মদ আব্দুল আলিম বিষয়টি তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করেন। বোর্ডের সচিব প্রফেসর এএমএইচ আলী আর রাজাকে আহ্বায়ক ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মাধব চন্দ্র রুদ্র এবং কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর কে এম রব্বানীকে সদস্য করা হয়। কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার বোর্ডের শৃংখলা কমিটির সভায় ২৭ পরীক্ষার্থীকে দু বছরের জন্যে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে জানা যায়, পরীক্ষার নির্ধারিত সময়ের পরে কয়েকজন ভাড়াটে লোক ওই পরীক্ষার্থীদের খাতায় লিখে দেন। পাস করানোর চুক্তি হয় তাদের সাথে। এর সাথে জড়িত কেন্দ্র সচিব ও পরিদর্শকরাও। কিন্তু তাদের কোনও শাস্তি হচ্ছে না। কলেজের ভালো ফলালের জন্য রাজধানীর সামশুল হক খান স্কুল এন্ড কলেজ, ক্যামব্রিয়ানসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছরে অভিনব জালিয়াতি করে পাসের হার ও জিপিএ বাড়িয়েছে মর্মে অভিযোগ রয়েছে। অস্বাভাবিক কিছু ফলাফলের অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে মন্ত্রণালয়ের তদন্তে। কিন্তু শাস্তি পায়নি কেউ।
প্রফেসর মাধব চন্দ্র রুদ্র বলেন, পরীক্ষার্থীরা জানিয়েছেন তারা দু রকম হাতের লেখা করেননি। কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা শিক্ষক ও কর্মকর্তারাও অস্বীকার করেছেন। কিন্তু একই খাতায় দুরকম হাতের লেখার প্রমাণ মিলেছে। যেহেতু অপরাধ হয়েছে তাই ২৭ পরীক্ষার্থীকে দু বছরের জন্যে বহিষ্কার করা হয়েছে। একইসঙ্গে ওই কেন্দ্রটি স্থগিত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুল আলিমের সভাপতিত্বে শৃংখলা কমিটির সভায় আমরা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছিলাম। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বোর্ড কমিটি পরীক্ষার্থীদের বহিষ্কার ও কেন্দ্র স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন, বোর্ডের সচিব প্রফেসর এএমএইচ আলী আর রাজা, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাধব চন্দ্র রুদ্র, কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর কে এম রব্বানী, বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. বিশ্বাস শাহীন আহমেদ, সরকারি এম এম কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর আফসার আলী, প্রফেসর নমিতা রানী বিশ্বাস, প্রফেসর নুরুজ্জামান, খুলনার কপিলমুনি কলেজের প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ আফসার আলী, ঝিনাইদহ হাটবাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।