এক বছরেও সরকারি হয়নি শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

প্রতিষ্ঠান সরকারি হওয়ার পর এক বছর পার হলেও দেশের ৩০১টি কলেজের কমবেশি প্রায় ১৬ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর চাকরি এখনো সরকারি হয়নি। যাচাইয়ের কাজ শেষ না হওয়ার কারণে তাঁরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। দেরি হওয়ায় সুবিধাবঞ্চিত হয়েই অনেক শিক্ষককে অবসরে যেতে হচ্ছে।

সরকারি হওয়া এসব কলেজের শিক্ষকেরা চাচ্ছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন তাঁদের সরকারি করা হয়। অবশ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁরাও সেই চেষ্টা করছেন। কিন্তু যাচাইয়ে দেখা যাচ্ছে, বেসরকারি থেকে সরকারি হওয়া এসব কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের একটি বড় অংশের নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ঘাটতি রয়েছে। শুক্রবার (১৬ আগস্ট) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন মোশতাক আহমেদ।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, অনেক শিক্ষক-কর্মচারী অবসরে যাচ্ছেন এই তথ্য তিনিও পেয়েছেন। এ জন্য যত দ্রুত সম্ভব এসব  কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের সরকারি করার কাজটি শেষ করার চেষ্টা চলছে। 

দেশের যেসব উপজেলায় কোনো সরকারি কলেজ ছিল না , সেগুলোতে একটি করে কলেজ জাতীয়করণ করা হয়েছে। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে প্রক্রিয়া শুরু হলেও চূড়ান্তভাবে গত বছরের ১২ আগস্ট দেশের ২৭১টি বেসরকারি কলেজকে জাতীয়করণ করা হয় । এর আগে-পরে আরও ৩০টি কলেজ জাতীয়করণ হয়। মাউশির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, এসব কলেজে শিক্ষক ও কর্মচারী আছেন কমবেশি প্রায় ১৬ হাজার। এর মধ্যে ১০ হাজারের বেশি শিক্ষক। 

নিয়মানুযায়ী কলেজ সরকারি ঘোষণার পর কলেজে বৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক ও কর্মচারীদের শিক্ষা, জনপ্রশাসন এবং সরকারি কর্ম কমিশনসহ(পিএসসি) সংশ্লিষ্ট কয়েকটি দপ্তরের প্রয়োজনীয় অনুমোদন নিতে হয়। 

সরকারি করার জন্য এসব কলেজের শিক্ষকদের তথ্য যাচাই করে শিক্ষা মন্তণালয়ে প্রস্তাব পাঠানোর কাজটি করছে মাউশি। অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিদিন তিনটি কলেজ করে মোট ১০০ দিনের মধ্যে সবগুলো  কলেজের তথ্য যাচাইয়ের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ জন্য বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের ২১ জন কর্মকর্তাকে শুধু এই কাজের জন্য যুক্ত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ১২৬টি কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের তথ্য যাচাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ৫৩টির তথ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কাজটি করতে গিয়ে তাঁরা দেখেছেন, প্রায় ২০ শতাংশ শিক্ষক-কর্মচারীর প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে ঘাটতি রয়েছে। এসব কাগজ পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কলেজ কর্তৃপক্ষকে বলা হলেও অনেকে দিতে পারছেন না । এসব কাগজপত্র ছাড়া সরকারি করাও কঠিন।

মাউশির পরিচালক(কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক মো. শাহেদুল খরীর বলেন, তাঁরা চেষ্টা করেছেন মন্ত্রণালয়ে যেন একেবারে নির্ভুলভাবে কাগজগুলো যায়। আশা করছেন তাঁদের পর্যায়ের কাজটি সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ হবে।

সরকারি হওয়া কলেজের শিক্ষকদের দাবি, অনেকে ২০-২৫ বছর আগে নিয়োগ পেয়েছেন নিয়ম মেনেই। এই দীর্ঘ সময়ে কিছু কাগজপত্র হারিয়ে যাওয়া বা নষ্ট হওয়া অসম্ভব নয়। তাই বাস্তবতা বিবেচনা করে কাজটি দ্রুত শেষ করা উচিত।

নিয়মনুযায়ী চাকরিতে থাকা শিক্ষকেরাই কেবল সরকারি সুবিধা পাবেন। কিন্ত জাতীয়করণ হওয়া এসব কলেজের শিক্ষকরা নিয়মিত অবসরে যাচ্ছেন। গত বছরের আগস্ট থেকে গত জুন পর্যন্ত ৩৩৮ জন শিক্ষক অবসরে গেছেন। আর আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ১৬৯ জন শিক্ষক অবসরে যাবেন। কিন্তু সরকারি না হওয়ায় সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অবশ্য এখন কেবল এসব কলেজের এমপিওভুক্ত শিক্ষকেরা আগের মতো শুধু মূল বেতনটি পাচ্ছেন।

জাতীয়করণ হওয়া কলেজগুলোর শিক্ষকদের সংগঠন সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি জহুরুল ইসলাম বলেন, আমাদের এখন একটাই চাওয়া, সমন্বিতভাবে দ্রুত পদ সৃষ্টি করে শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি যেন সরকারি করা হয়। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
রোজায় স্কুল: শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম, নজরদারিও ঢিলেঢালা - dainik shiksha রোজায় স্কুল: শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম, নজরদারিও ঢিলেঢালা পেনশন প্রজ্ঞাপনে উদ্বিগ্ন ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha পেনশন প্রজ্ঞাপনে উদ্বিগ্ন ঢাবি উপাচার্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা অনুদান করমুক্ত - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা অনুদান করমুক্ত ব্রাজিলে তীব্র গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ - dainik shiksha ব্রাজিলে তীব্র গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের নামে প্রতারণা, সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের নামে প্রতারণা, সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উচ্চ মাধ্যমিকের সমমান পেলো ‘হেট’ - dainik shiksha উচ্চ মাধ্যমিকের সমমান পেলো ‘হেট’ আটকের ১৩ দিন পরেও বরখাস্ত হননি অধ্যক্ষ - dainik shiksha আটকের ১৩ দিন পরেও বরখাস্ত হননি অধ্যক্ষ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0065598487854004