কর্মস্থলে যোগ দিয়েই নানা দুর্নীতি অনিয়ম ও এমপিও বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছেন ময়মনসিংহ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো: আক্তারুজ্জামান। এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রীকে অবগত করে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ক্ষুব্ধ শিক্ষকরা।
অভিযোগে বলা হয়, চলতি বছরের ১২ মার্চ ময়মনসিংহ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক হিসাবে যোগদান করেন আক্তারুজ্জামান। এ সময় জেলায় শিক্ষক এমপিওভুক্তির কাজ চলছিল। ৪৮৩ জন শিক্ষকের এমপিওভুক্তির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেন আক্তারুজ্জামান। যোগদানের পরই এমপিও বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
এ ব্যাপারে তাকে সহযোগিতা করছেন স্কুল পরিদর্শক রওশন আরা, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম এবং স্থানীয় শিক্ষা বিভাগের কাছে `মাফিয়া ডন` বলে পরিচিত এক ভুঁইফোড় নেতা। এদের নিয়ে কর্মক্ষেত্রে যোগদানের এক মাসের মধ্যেই শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক আক্তারুজ্জামান এমপিও বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এমপিওভুক্তির মত গুরুত্বপূর্ণ এবং গোপনীয় কাজ চলাকালে স্কুল পরিদর্শক রওশন আরাকে উপপরিচালকের কক্ষে পাশাপাশি চেয়ারে বসে থাকতে দেখে বিস্মিত হয়েছেন অনেকেই। এমপিওভুক্তির সময় রওশন আরার উপস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে আক্তারুজ্জামান বলেন, প্রশাসনিক কাজে সহায়তার জন্যই তাকে ডাকা হয়েছে।
জানা যায়, প্রায় ৫ শত শিক্ষকের এমপিওভুক্তিকরণের বেশিরভাগেরই চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে লেনদেন নিশ্চিত হবার পরে। এমপিওভুক্তিতে লেনদেনে টাকার পরিমাণ ছিল শিক্ষক প্রতি ৪ থেকে ৬ লাখ টাকা।
অভিযোগে জানানো হয়, ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার গাবতলী হাই স্কুলের মনোয়ারা পারভীন নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথমস্থান অধিকার করলেও তাকে এমপিওভুক্ত না করে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে ২য় স্থান অধিকার করা শায়লা ওসমান রূপাকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে।
এছাড়া জামালপুর জেলার ইসলামপুরের পঁচা বহলা জয়তুন নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইদুজ্জামান, টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুর টেপি বাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শওকত আলী এবং ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইলের বৈরাটি আলীম মাদ্রাসার সহকারী মৌলভি মাহফুজকে মাথাপিছু ৪ থেকে ৬ লাখ টাকার বিনিময়ে ২০ শতাংশ মহিলা কোটা পূরণ না করেই অবৈধভাবে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে বলে জানা যায়।
এ ব্যাপারে শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক আক্তারুজ্জামান বলেন, পৌর এলাকায় ৪০ শতাংশ ও পৌর এলাকার বাইরে ২০ শতাংশ মহিলা কোটাপূরণ সাপেক্ষে এমপিওভুক্ত হবার কথা শিক্ষকদের। এর বাইরে এমপিওভুক্তির কথায় বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, ব্যাপারটি খতিয়ে দেখা হবে।
অভিযোগে আরও জানানো হয়, শেরপুর জেলার শ্রীবর্দী ইন্দিলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক জান্নাতুল নাঈম ২০১১ খ্রিস্টাব্দের ২০ ডিসেম্বর নিয়োগ পেয়ে ওই বছরের ২৪ ডিসেম্বর কর্মস্থলে যোগদান করেন। অথচ বিদ্যালয়টির ওই শাখা খোলার অনুমোদন দেয়া হয়েছে ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের ৮ জুন। ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে জান্নাতুল নাঈমকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে।
শাখার অনুমোদনের আগেই নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে শেরপুর সদরের রামের চর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আজমেরী জান্নাত, শ্রীবর্দীর কাডকাহলি পরুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক খন্দকার মো. দিদারুল ইসলাম এবং নালিতাবাড়ি মুক্তিযুদ্ধ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মজনু মিয়া ও নুরুজ্জামানকে মাথাপিছু ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে বলেও অভিযোগটিতে জানানো হয়।
এ সব শিক্ষকের এমপিওভুক্তির ব্যাপারে জানতে চাইলে উপপরিচালক আক্তারুজ্জামান বলেন, এভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকের এমপিওভুক্ত হবার কথা নয়।
টাঙ্গাইল ধনবাড়ির পাঁচপটল ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক রফিকুল ইসলামের এমপিওভুক্তির সকল শর্ত পূরণ করা সত্ত্বেও তার এমপিওভুক্তির আবেদন প্রথমে বাতিল করা হয়। পরবর্তীতে চার লাখ টাকার বিনিময়ে রফিকুল ইসলামকে এমপিওভুক্ত করেন উপপরিচালক আক্তারুজ্জামান।
স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায়, ঠাকুরগাঁও জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্বপালনের সময় আক্তারুজ্জামানের প্রশাসনিক অদক্ষতার কারনে ছাত্ররা মাদক ও অস্ত্রবাজীতে জড়িয়ে পরেছিল।
এ অভিযোগগুলোর ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি এমপিওভুক্ত কোন শিক্ষক। উপপরিচালকের রেষানলের ভয়ে মুখ খুলতে চাননি অনেক ভুক্তভোগী শিক্ষকও। ভুক্তভোগী শিক্ষকরা মনে করেন দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করলেই অভিযোগের সত্যতা মিলবে তাদের অভিযোগের।