একই মামলায় কারাগারে তিন ক্যান্টিনবয়, গ্রেফতার হয়নি ছাত্রনেতা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

 তামার তার চুরির অপরাধে ১৮ দিন আগে গ্রেফতার হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ক্যান্টিনবয়। ওই মামলায় আসামি হিসেবে রয়েছে ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক নাহিদ হাসান সুজনের নামও। এই ১৮ দিন ক্যান্টিন বয়রা জেল খেটেছে, রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছিল তাদের। কিন্তু গ্রেফতার হননি নাহিদ হাসান সুজন।

গ্রেফতার হওয়া ক্যান্টিন বয়রা হলো সেলিম হোসেন, দুলাল হোসেন ও মিজান রহমান। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের এস এম হলের ক্যান্টিনে কাজ করত। ছাত্রলীগ নেতা নাহিদ হাসান সুজনের নির্দেশেই তারা চুরি করা ক্যাবল সরাতে গিয়েছিল বলে জানিয়েছিল।

ক্যান্টিন বয়দের বরাত দিয়ে এস এম হল ক্যান্টিন সূত্র জানায়, নাহিদ হাসান সুজনের হুকুমেই গত ১৯ অক্টোবর দুর্গাপূজার দশমীর ভোর ৪টায় কিশোর ওই তিন ক্যান্টিন বয় ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে চুরি করা তামার তার পিকআপে তুলতে যায়। ওই সময় তারা হাতেনাতে পুলিশের কাছে ধরা পড়ে। পরে পুলিশ বাদি হয়ে ওই ছাত্রলীগ নেতাসহ তাদের নামে মামলা করে।

নাহিদ হাসান সুজন

জানা যায়, দুর্গাপূজার দশমীর রাতে তিন ক্যান্টিন বয় এক সঙ্গে ঢাকেশ্বরী মন্দির ও ঢাবির জগন্নাথ হলের মন্দির ঘুরে আনুমানিক রাত দেড়টার দিকে হলে ফিরে আসে। ফেরার পর তিনজনই হলের মাঠে বসে আড্ডা দিচ্ছিল রাত আনুমানিক আড়াইটা পর্যন্ত।

আড্ডা শেষ করে ঘুমানোর উদ্দেশ্যে তারা যখন ক্যান্টিনে ফিরছিল, ঠিক তখনি মোটরসাইকেল নিয়ে মাঠে উপস্থিত হন নাহিদ হাসান সুজন। মোটরসাইকেল থেকে নেমে তাদের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন ছাত্রলীগের এই নেতা।

ওই সময় নাহিদের মুঠোফোন বেজে ওঠে। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে কী বলা হচ্ছে সেটা শোনা না গেলেও, সুজনের উত্তরে প্রকৃত ঘটনা বুঝতে পারে তিনবন্ধু। ফোনে নাহিদ বলেন, ‘তোরা কাজটি তাড়াতাড়ি শেষ কর, দেরি হলে আবার সমস্যা হবে।’

এর কয়েক সেকেন্ড পর নাহিদ আবার ফোনে বলেন, ‘ঠিক আছে আমি তিনটা ছেলে পাঠাচ্ছি, তাদের নিয়ে কাজটা দ্রুত শেষ করে ফেল।’

তারপর ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে নাহিদ তাদের বলেন, ‘কিছু ক্যাবল ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পাশে রাখা আছে। তোরা গিয়ে একটি ট্রাকে তুলে ক্যাবলগুলো নিয়ে আসবি। সেখানে আরো কয়েকটা ছেলে আছে। ভয়ের কোনো কারণ নেই।’

ক্যান্টিন সূত্র জানায়, নাহিদের কথা শুনে ভয় পেয়ে যায় তারা। এরপর তারা যেতে না চাইলেও বিভিন্ন ধরনের ভয় দেখিয়ে তাদের বাধ্য করা হয়। যদি না যায় তাহলে তাদের চুরি করা বা গাঁজা খাওয়ার কথা বলে হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকিও দেন নাহিদ। একপর্যায়ে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে যাওয়ার জন্য একটা রিকশা ভাড়া করে দেন তিনি।

পরে সেখানে গিয়ে শাহবাগ থানা পুলিশের কাছে হাতেনাতে ধরা পড়ে তিন ক্যান্টিন বয়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা নাহিদ হাসান সুজনের নাম বলে দেয়।

পরে মামলার এজাহারে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয় তিন ক্যান্টিন বয়, পিকআপ ড্রাইভার, পিকআপের সহকারী ও ছাত্রলীগ নেতা সুজনকে। এই  মামলার নম্বর ৪১, শাহবাগ থানা।

এ বিষয়ে নাহিদ হাসান সুজন বলেন, ‘ও ছেলেগুলোর সাথে আমার কোনো কথাই হয়নি। আমি যখন শুনতে পেলাম তিনজন ছেলেকে ধরছে, তখন আমাকে ওখানকার ঠিকাদার আহাদুজ্জামান চুন্নু ফোন দেন। পরে শুনি মামলায় আমার নামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এখন আমার নাম কেন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে আমি জানি না।’

এর আগে একই জায়গায় দুইবার ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওই সময় নাহিদ হাসান সুজন সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলে স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সাথে ঠিকাদারের পরিচয় হলে তিনি আমার নম্বর নেন। তারপরে চুরি হলে তিনি আমাদের কল দিলে আমরা সেখানে আসি। আটককৃতদের একজন ক্যান্টিন বালক ও অন্য দুজনকে চিনি না।’

আহাদুজ্জামান চুন্নু একই সঙ্গে ওই মামলার সাক্ষী ও এই কাজের ঠিকাদার। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এর আগেও একই জায়গা থেকে দুইবার ডাকাতি হয়েছে। তৃতীয়বার ডাকাতি করতে গিয়ে ওই তিনজন ধরা পড়ে। তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা নাহিদ হাসান সুজনের নাম বলেন। পরে আমি সুজনকে ফোন দেই। কিন্তু সুজন এসে আটক ওই তিনজনকে ছেড়ে দেওয়ার সুপারিশ করে। পরে পুলিশ তাদের থানায় নিয়ে যায়।’

নাহিদ হাসান সুজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১২-১৩ সেশনের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি বর্তমানে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে রাজনীতি করেন।

এ বিষয়ে কথা বলতে গোলাম রাব্বানীকে কয়েকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বলেন,  ‘মামলাটি এখনো চলমান রয়েছে। আমরা আটককৃতদের চালান করে দিয়েছি।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0042941570281982