রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাবে শিক্ষা ক্রমেই ব্যয়বহুল হয় উঠছে। বিশেষ করে মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থা বেসরকারি নির্ভর হয়ে পড়ছে। আড়াই লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর জন্য এখানে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাত্র দুটি। অভিভাবকদের আন্দোলনের মুখে চার বছর আগে দুটি বিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হলেও প্রস্তাব এখনো একনেক সভা ওঠেইনি। আগামী মঙ্গলবার এ সরকারের শেষ একনেক বৈঠকে প্রস্তাবটি উঠবে বলে আশা করছে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল উন্নয়ন অধিদপ্তর।
মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, রংপুর নগরীতে দুটি সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের মধ্যে একটি রংপুর জিলা স্কুল, অন্যটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। প্রথমটির বয়স প্রায় ২০০ বছর, অন্যটির শতাধিক বছর। শিক্ষার্থী ধারণক্ষমতা দুটি মিলিয়ে দুই হাজারের বেশি নয়। কিন্তু প্রতি বছর মাধ্যমিকে ভর্তিচ্ছু থাকে আড়াই লক্ষাধিক। এ সুযোগে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বেসরকারি স্কুল। যদিও অধিকাংশেরই মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
রংপুর জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু রায়হান মিজানুর রহমান জানান, তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি পরীক্ষায় ২৪০টি আসনের বিপরীতে প্রতি বছর গড়ে দুই হাজারের বেশি ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এ সংখ্যা দিন দিন আরো বাড়ছে। একই অবস্থা অন্য স্কুলটিতেও।
এ সংকট থেকে উত্তরণে ২০১৪ সালে গঠন করা হয় সৃজনশীল অভিভাবক সংগ্রাম কমিটি। এ কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন ফারুক আহমেদ। তিনি বলেন, নতুন মাধ্যমিক সরকারি স্কুল প্রতিষ্ঠা, পুরনো দুটি স্কুলে চারটি শাখা বাড়িয়ে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ ও প্রতিটি উপজেলায় একটি করে সরকারি মাধ্যমিক স্কুল প্রতিষ্ঠার দাবি দেয়া হয়েছিল। দুই বছর পর্যন্ত এ আন্দোলন চলে। দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মাধ্যমিক স্কুলকে সরকারি করা হলেও রংপুর সদর উপজেলা বঞ্চিত রয়েছে।
মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, অভিভাবকদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা উন্নয়ন অধিদপ্তরের তিন সদস্যের একটি দল গত বছর দুই দফা রংপুর আসে। তারা নগরীর উত্তমের পুরনো রেডিও সেন্টারের পরিত্যক্ত খাসজমি ও বোতলা এলাকায় দুই একর করে চার একর জায়গা পছন্দ করে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শরীফ মুহাম্মদ ফয়জুল আলম জানান, রেডিও সেন্টারের জায়গাটি বালক স্কুলের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। ওই জায়গাটি স্কুলের জন্য স্থায়ী বন্দোবস্ত নিতে প্রয়োজনীয় নথিপত্র ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। আর বালিকা বিদ্যালয়ের জন্য মনোনীত জায়গাটি ব্যক্তিমালিকানার। তা অধিগ্রহণের অপেক্ষায় রয়েছে।
এদিকে নতুন দুটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উন্নয়ন প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেয়া হয়েছে। এখন একনেক বৈঠকে উত্থাপনের অপেক্ষায় আছে বলে জানিয়েছে শিক্ষা অফিসের একটি সূত্র। জেলা প্রশাসক এনামুল হাবীবও এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার কথা নিশ্চিত করেছেন।