সরকারের কঠোর অবস্থানের মধ্যেই একাদশ শ্রেণির নকল বইয়ে সয়লাব হয়ে গেছে বিভিন্ন জেলার পুস্তক বাজার। ভুলে ভরা এসব বই কিনে বিপাকে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। নকল বই বিক্রির অভিযোগে বিভিন্ন জেলায় ৭টি মামলাও করেছে পুলিশ। এরপরও থামছে না নকল বই বিক্রি। নিষিদ্ধ নোট-গাইড বইয়ের একটি সিন্ডিকেট নকল বই ছেপে সারাদেশে বাজারজাতকরণ করছে। এতে সরকার মোটা অঙ্কের ‘রয়্যালিটি’ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে; আবার সরকার অনুমোদিত প্রকাশকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। অসাধু ব্যবসায়ীরা নকল বই বাজারজাত করবে বিষয়টি আগেই ধারণা করেছিল এনসিটিবি। এজন্য নকল বই বাজারজাতকারী প্রকাশকদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সব বিভাগের কমিশনার, ৬৪ জেলার ডিসি, জেলা পুলিশ সুপার, র্যাব ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে চিঠি দেয়া হয় এনসিটিবির পক্ষ থেকে।
নকল বই ছাপার সঙ্গে জড়িত প্রকাশকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সারাদেশের জেলা প্রশাসকের (ডিসি) সহায়তা চেয়েছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানা গেছে। গতকাল বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় একাদশ শ্রেণির নকল ও অননুমোদিত বই বিক্রির বিষয়টি তুলে ধরেন এনসিটিবির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রফেসর ফরহাদুল ইসলাম। সংস্থার চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা বর্তমানে শ্রীলঙ্কা সফরে আছেন। তিনিও কিছুদিন আগে নকল বইয়ের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গত শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণির পাঠ্যবই বাজারজাতকরণের কাজ পাওয়া পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির নেতারা দাবি, ২০২৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের বিপুল সংখ্যক বই এখনও ব্যবসায়ীদের কাছে রয়েছে গেছে; এগুলো তো তারা পুড়িয়ে ফেলবে না। এসব পুরানো বই বিক্রি হতেই পারে। আর কেউ যদি এনসিটিবি অনুমোদিত বই নকল করে বিক্রি করে সেটা দেখার দায়িত্ব এনসিটিবি’র। এ বিষয়ে পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির কিছু করার নেই। কারণ সমিতির সদস্যদের কেউ নকল বই ছাপায় না।
এ ব্যাপারে এনসিটিবির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘পুরনো বই কেনাবেচা অপরাধ। ইতোমধ্যে রাজধানীর বাংলাবাজার ও সূত্রাপুর, সিলেট, বগুড়ায় নকল বই উদ্ধারে অভিযোগ চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বাংলাবাজারের ফাইভ স্টার প্রকাশনী, অয়ন প্রিন্টিং প্রেস এবং বগুড়ার একটি প্রেসের তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অন্যান্য জেলায়ও অভিযান চলছে। কেউ রেহাই পাবে না।’
চট্টগ্রাম এবং রাজধানীর কোতয়ালী, নীলক্ষেতসহ বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলোতে কঠোর নজরদারির অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন এনসিটিবির কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, এবার উন্মুক্ত দরপত্রে অংশ নিয়ে ‘২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের উচ্চমাধ্যমিকের বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা (বাণিজ্য) ও মানবিক শাখার শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক বাংলা, বাংলা সহপাঠ ও ইংরেজি বই ছাপা ও বিতরণ-বিক্রয়ের কাজ পেয়েছে ‘অগ্রণী প্রিন্টার্স’। এই প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে সারাদেশে প্রায় ৩০ লাখ কপি বই বাজারজাত করেছে। গত ১ জুলাই থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের নতুন বই একযোগে বাজারে এসেছে।