ফেনীতে উচ্চ মাধ্যমিকে শিক্ষার্থীর পছন্দমতো প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য প্রশংসাপত্র দিতে চাইছে না স্কুল অ্যান্ড কলেজগুলো। ফলে একাদশে পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে গিয়ে নানা বিপত্তির শিকার হচ্ছে এসব স্কুল সংযুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এমনকি নিজেদের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কৌশলে চাপ প্রয়োগ করছে এসব প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ।
ভুক্তভোগী একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, এসএসসি পরীক্ষার আগে থেকেই তারা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে কোন প্রতিষ্ঠানে পড়বে, তা ঠিক করে রেখেছিল। এসএসসির ফলের পর তারা সে অনুযায়ী অনলাইন আবেদনে কলেজও পছন্দ করে। কিন্তু ফেনীর যেসব স্কুলের সঙ্গে কলেজ সংযুক্ত রয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য কলেজে ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় প্রশংসাপত্র দেয়া হচ্ছে না। চাপে পড়ে দু-একজনকে প্রশংসাপত্র দেয়া হলেও শুনতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের ভর্ত্সনা। গুনতে হচ্ছে মোটা অংকের টাকা। তবে অধিকাংশই স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে ধরনা দিয়েও প্রশংসাপত্র পাচ্ছে না। অথচ সব শিক্ষার্থীরই নিজেদের পছন্দের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির অধিকার রয়েছে। এক্ষেত্রে তাদের এভাবে জিম্মি করা বে-আইনি।
ফেনী শাহীন একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আবুল হাসেম জানান, তিনি কয়েক দিন ধরে চেষ্টা করেও তার সন্তানের প্রশংসাপত্র নিতে পারেননি। একই অভিযোগ করেন অভিভাবক নুরের জামান। তাদের অভিযোগ, এসএসসি পাসের পর তাদের সন্তানরা অনলাইনে ভর্তির আবেদন করে। এতে তাদের ভালো কলেজে ভর্তির সুযোগ আসে। কিন্তু আগের প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশংসাপত্র না দিয়ে অন্য কলেজে তাদের ভর্তি হওয়া আটকে দেয়া হয়েছে, যা অন্যায় ও অনৈতিক। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আবার মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে প্রশংসাপত্র দেয়া হচ্ছে।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফেনীর একটি স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা কমিটির সদস্য বলেন, এখন ফেনীতে সরকারি-বেসরকারি অনেক ভালো কলেজ রয়েছে। সবাই এসএসসির পর এসব কলেজে ভর্তি হতে চায়। এতে তাদের অতিরিক্ত অর্থ ও সময় ব্যয় হয়। তাছাড়া নতুন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মানিয়ে নিতেও সময় লাগে। এতে ওই শিক্ষার্থীর পড়ালেখার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা আগের প্রতিষ্ঠানে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হলে এসব সমস্যা হয় না। তাছাড়া যে প্রতিষ্ঠানে তারা দীর্ঘসময় ধরে পড়াশুনা করেছে, তাদের ওপর সে প্রতিষ্ঠানের দাবি তো থাকতেই পারে। এজন্যই মূলত স্কুল অ্যান্ড কলেজগুলো প্রশংসাপত্র দিতে চায় না।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী সলিমুল্লাহ জানান, ফেনীতে ১২টি স্কুল সংযুক্ত কলেজ রয়েছে। একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির ব্যাপারে শিক্ষা বোর্ড থেকে সব প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও নীতিমালা দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা ভালো রেজাল্ট নিয়ে ভালো কলেজে পড়াশোনা করবে, এটি স্বাভাবিক বিষয়। এক্ষেত্রে কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে জোর করে আটকে রাখার চেষ্টার অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে ফেনী জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজজামান বলেন, মূলত দুই কারণে পুরনো প্রতিষ্ঠান তাদের শিক্ষার্থীদের ছাড়তে চায় না। প্রথমত কলেজ পর্যায়ে তাদের শিক্ষার্থী কম থাকা ও দ্বিতীয়ত ভালো ছাত্রদের হাতছাড়া করতে না চাওয়ায় তারা এ কাজ করে। তারপরও আইনগতভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের এভাবে আটকে রাখতে পারে না। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।