এনটিআরসিএর শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া ও সাম্প্রতিক জটিলতা

সাধন সরকার |

অনেক জল্পনা-কল্পনা ও আলোচনা-সমালোচনার পর এনটিআরসিএ (বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ) গত ১০ জুলাই নিবন্ধিত শিক্ষকদের (১ থেকে ১৩ তম) ‘জাতীয় মেধা তালিকা’ প্রকাশ করেছেন। এতে সারা দেশের পাঁচ লাখের বেশি (স্কুল-কলেজ মিলিয়ে) নিবন্ধিত শিক্ষকের মধ্যে নিয়োগ পাওয়া নিয়ে আশার সঞ্চার হয়েছে। এর আগে এনটিআরসিএ-র একেক সময়ের একেক সিদ্ধান্তে নানা সমালোচনাসহ শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জটিলতা বাড়িয়ে দেয়। ২০০৫ সালে এনটিআরসিএ গঠনের পর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যোগ্য, উপযুক্ত ও দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ পাওয়ার কথা থাকলেও সে উদ্দেশ্য আদৌ পূরণ হয়েছে কি না সেটা এক বিরাট প্রশ্ন! ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রভাব বিস্তার ও টাকা-পয়সার লেনদেনে বহু অযোগ্য ব্যক্তি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন! শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা ম্যানেজিং কমিটির পরিবর্তে এনটিআরসিএ-র হাতে গেলেও সমস্যার পাহাড় টপকে যথাসময়ে শিক্ষক নিয়োগে অনিশ্চয়তা থেকেই গেছে। একদিকে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে শূন্য পদের চাহিদা কম আসা অন্যদিকে কর্তৃৃপক্ষের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত না নেওয়ার কারণে সমস্যার জটিলতা গভীর থেকে গভীরতর রূপ নিয়েছে।

এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে হাজার হাজার শূন্যপদ থাকলেও গত ৪ বছরে মাত্র ৬ হাজারের মতো শিক্ষক নিয়োগ (শুধু ২০১৬ সালে) দেওয়া হয়েছে। পদ শূন্য থাকায় পাঠদানসহ সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এবং পড়ছে। আবার যথাসময়ে নিয়োগ না হওয়ায় লাখ লাখ চাকরিপ্রত্যাশী নিবন্ধিত শিক্ষকরা হতাশায় দিন পার করছেন। ১ থেকে ১২ তম নিবন্ধিত শিক্ষকদের নিবন্ধন পরীক্ষা মোটামুটি একই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হলেও ১৩তম থেকে নিবন্ধন পরীক্ষা সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে বিসিএসের আদলে (প্রিলি, লিখিত, ভাইভা) অনুষ্ঠিত হয়। বলা হয়েছিল, ১৩তম নিবন্ধনধারীদের আলাদাভাবে সরাসরি নিয়োগ দেওয়া হবে। অথচ তাদের নিয়োগ সম্পন্ন হয়নি। গত ২-৩ বছর ধরে চলা নিবন্ধিত শিক্ষকদের নিয়োগের ব্যাপারে আর কোনো অজুহাত, খামখেয়ালি জাতি দেখতে চায় না। জাতীয় মেধা তালিকা প্রকাশের পরও কেউ-ই জানে না তাদের কবে, কোথায় ও কিভাবে নিয়োগ হবে। দ্রুত শূন্য পদের তালিকা প্রকাশ করে নিবন্ধনধারীদের মেধাক্রম অনুযায়ী নিয়োগের ব্যবস্থা করা হলে চাকরিপ্রত্যাশীদের হতাশা দূর হওয়ার পাশাপাশি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠদানসহ সামগ্রিক শিক্ষা কার্যক্রমে গতি আসবে।

এনটিআরসিএ-র বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন সিদ্ধান্তে হতাশা সৃষ্টি ও সময়মতো শিক্ষক নিয়োগে জটিলতা তৈরি হওয়ায় সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ‘সংসদীয় স্থায়ী কমিটি’ শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা আবার আগের মতো ম্যানেজিং কমিটিকে দেবার সুপারিশ করেছেন। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। একথা মোটামুটি সবাই জানে যে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রভাব ও টাকা লেনদেনের কারণে অনেক অযোগ্য ও মেধাহীন লোকও নিয়োগ পেয়ে যায়। হ্যাঁ, এনটিআরসিএ সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারেননি—একথা সত্য বটে। তবে এখনো সময় আছে জাতীয় মেধা তালিকা অনুযায়ী দ্রুত সময়ের মধ্যে নিয়োগ দিয়ে ও সৃষ্ট সমস্যার সমাধান করে আগামীর পথে এগিয়ে যাওয়ার। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা এনটিআরসিএ থেকে ম্যানেজিং কমিটির হাতে দেওয়া মানে আবার ক্ষমতার প্রভাব ও টাকা-পয়সার লেনদেনকে বৈধতা দেওয়া।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সৌজন্যে: দৈনিক ইত্তেফাক


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0097639560699463