বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (আইআর) বিভাগের চেয়ারম্যান খোন্দকার মাহমুদ পারভেজের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষার্থীরা। আগের ভিসি নাসিরউদ্দিনের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিতে নিয়োগ পাওয়া চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সাথে স্বৈরাচারী আচরণ এবং অনৈতিকভাবে তাদের ক্যারিয়ার ধ্বংসের চক্রান্তের অভিযোগ তুলে রোববার (১৩ অক্টোবর) সকালে ক্লাস বর্জন করে বিভাগের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছে তারা।
বিদায়ী ভিসি নাসির বিরোধী অন্দোলনের সময় অবৈধ নিয়োগের অভিযোগে খোন্দকার মাহমুদ পারভেজের নাম আলোচনায় আসে। ভিসি নাসির পদত্যাগের পর সম্প্রতি ৩৫জন শিক্ষার্থীকে ইচ্ছাকৃতভাবে শূন্য দেয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
আইআর বিভাগের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, খোন্দকার পারভেজ সাবেক উপাচার্য খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের ভাতিজা। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম সেকশন অফিসার হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিতে যোগদান করেন। কিন্তু অনার্স ও মাস্টার্সে দ্বিতীয় শ্রেণি থাকা সত্বেও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগ দেন সদ্য বিদায়ী ভিসি নাসির। এসময় শিক্ষার্থীরা আরও জানান, পরে মাত্র দেড় বছরেই সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্রথমদিকে শিক্ষার্থীদের প্রতি স্নেহপূর্ণ আচরণ করলেও চেয়ারম্যান হওয়ার পর স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠেন ওই শিক্ষক। কথায় কথায় শিক্ষাজীবন নষ্ট করে দেয়ার হুমকি দিতে শুরু করেন তিনি। নিজের ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য অ্যাসাইনমেন্ট ও পরীক্ষায় অযৌক্তিকভাবে কম নম্বর দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, "খোন্দকার মাহমুদ পারভেজে সম্প্রতি একটি কোর্সের অ্যাসাইনমেন্টে ৩৫ জনকে শূন্য দিয়েছেন। আমরা যখন কারণ জানতে চেয়েছি, তিনি বলেছেন তার ইচ্ছে হয়েছে তাই শূন্য দিয়েছে। একজন শিক্ষক কীভাবে এমন হতে পারে! তার আচরণে মনে হয়েছে আমরা তার খেলার পুতুল।"
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আই আর বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, "তিনি ভিসি নাসিরের ভাতিজা হিসেবে অবৈধভাবে নিয়োগ পেয়েছেন। ক্লাসেও ঠিকভাবে পড়াতে পারেন না। উইকিপিডিয়া দেখে দেখে বানান করে পড়ান। এছাড়া কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করলেই রেগে যান, হুমকি দেন শিক্ষা জীবন-ক্যারিয়ার নষ্ট করে দেয়ার।"
এদিকে সব অভিযোগ অস্বীকার করেন খোন্দকার মাহমুদ পারভেজ। তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, তার অনার্স-মাস্টার্সে দ্বিতীয় শ্রেণি রয়েছে সত্যি কিন্তু তার নিয়োগ অবৈধ নয়। "বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ অধিকতর যোগ্য প্রার্থীদের ক্ষেত্রে দুটি শর্ত শিথিলযোগ্য" নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত এ শর্তে চাকরি পেয়েছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, নিয়োগের ক্ষেত্রে বশেমুরবিপ্রবিতে তার পিএইচডি চলমান থাকায় এবং রবীন্দ্র জার্নালে ৪টি প্রকাশনা থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় তাকে অধিকতর যোগ্যপ্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করেছে বলে দাবি করেন খোন্দকার মাহমুদ পারভেজ।
নিয়োগ ছাড়া অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে বলেন, "আমি শিক্ষার্থীদের খুব ভালোবাসি, অন্যায় হলে শিক্ষক হিসেবে একটু বকাবকি করি কিন্তু কখনো হুমকি দেইনি। সবসময় চেষ্টা করেছি ওদের সহযোগিতা করতে।" কিন্তু সহযোগিতা করলে শিক্ষার্থীরা কেন এসব অভিযোগ করছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "ওদের বেশি ভালোবাসিতো, তাই আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করছে।"
এদিকে সকাল সোয়া ১০টার দিকে আন্দোলন স্থলে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রক্টর ড. রাজিউর। তিনি শিক্ষার্থীদের বলেন, তোমরা অভিযোগগুলো লিখিতভাবে জমা দাও। "আমরা তোমাদের সব অভিযোগ এবং দাবি দাওয়া অবশ্যই শুনবো কিন্তু সবকিছুর একটা আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে। তোমাদের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।"
এবিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর ড. রাজিউর দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগ জমা দিয়ে ক্লাসে ফিরতে বলা হয়েছে।
এদিকে প্রক্টরের আশ্বাসেও আন্দোলন প্রত্যাহার করেন শিক্ষার্থীরা। তারা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, আজকের মধ্যেই চেয়ারম্যানের পদ থেকে মাহমুদ পারভেজ পদত্যাগ না করলে তারা আরও কঠোর আন্দোলনে যাবেন।