এবার মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার ইংরেজি প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে নিহত বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদকে নিয়ে। প্রশ্নপত্রে আবারারের ওপর একটি প্যাসেজ দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সে আলোকে প্রশ্নের উত্তর দিতে বলা হয়েছে।
প্যাসেজে লেখা হয়েছে, আবরার ফাহাদ ১৯৯৯ সালে কুষ্টিয়ার রায়ডাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম বরকতুল্লাহ এবং মাতা রোকেয়া খাতুন। তার ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ।
তিনি বাবার-মায়ের প্রতি কর্তব্যপরায়ণ ছিলেন। ছাত্র হিসেবেও ছিলেন খুব মেধাবী এবং বুদ্ধিমান। তিনি এসএসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
এতে বলা হয়েছে, আবরার তার স্বপ্ন পূরণের জন্য বুয়েটে ভর্তি হন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির শেরাবাংলা হলে থাকতেন। ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর তিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।
প্যাসেজে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, শৈশব থেকেই আবরার ফাহাদ নম্র-ভদ্র ও ধর্মীয় জীবন যাপন করতেন।
৬ অক্টোবর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদ নির্মম নির্যাতনে মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনায় বুয়েট থেকে ২৬ শিক্ষার্থীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়।
আবরার হত্যার ঘটনায় বুয়েটের করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বুয়েটের বোর্ড অব রেসিডেন্স এন্ড ডিসিপ্লিনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২১ নভেম্বর মধ্যরাতে ২৬ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ।
বহিষ্কৃতরা হচ্ছেন মেহেদী হাসান রবিন, মো. অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মনিরুজ্জামান মনির, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, মো. মুজাহিদুর রহমান, মেহেদী হাসান রাসেল, এহতেশামুল রাব্বী, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম, মুনতাসির আল জেমি, এ এস এম নাজমুস সাদাত, মো. শামীম বিল্লাহ, মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম, হোসাইন মোহাম্মদ তোহা, মুজতবা রাফিদ, মো. মিজানুর রহমান, মো. আশিকুল ইসলাম, এস এম মাহমুদ, ইশতিয়াক আহমেদ মুন্না, অমিত সাহা, মাজেদুর রহমান, শামসুল আরেফিন, মোয়াজ আবু হোরায়রা, মো. আকাশ হোসেন, মোর্শেদ উজ জামান ও মুহতাসিম ফুয়াদ।
বহিষ্কৃত ২৬ জনের মধ্যে ২৫ জন পুলিশের অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। সেইসঙ্গে আবু নওশাদ সাকিব, সাইফুল ইসলাম, মোহাম্মদ গালিব, শাওন মিয়া, সাখাওয়াত ইকবাল অভি ও মো. ইসমাইলকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেয়া হয়।
চার্জশিটের ভিত্তিতে আবরার হত্যার অভিযুক্তদের স্থায়ী বহিষ্কার ছাড়াও আন্দোলনকারীদের দাবি হলো আহসান উল্লাহ, তিতুমীর এবং সোহরাওয়ার্দী হলের র্যাগিংয়ের ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তি বাস্তবায়ন করা, সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি এবং র্যাগিংয়ের বিভিন্ন ক্যাটাগরির শাস্তির নীতিমালা প্রস্তুত করে সাধারণ ছাত্রদের নিয়ে প্রশাসনের আলোচনা, আলোচনার ভিত্তিতে বুয়েট একাডেমিক কাউন্সিল এবং সিন্ডিকেট থেকে অনুমোদিত হয়ে প্রস্তাবিত একাডেমিক কার্যক্রম রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
অর্থাৎ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাবিত নীতিমালা পাঠানোর আগ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে যা যা করা প্রয়োজন তার সবকিছু নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নেবেন না এবং ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করবেন।
হলগুলোতে ইতোপূর্বে র্যাগিংয়ে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করা ও অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তির বিধান স্পষ্ট করার দা?বি পূর?ণে প্রশাসনের চেয়ে নেয়া তিন সপ্তাহ সময়ের শেষমুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এদিকে বুয়েটে আন্দোলনের নেপথ্যে বিএনপি-জামায়াতের ইন্ধন দেখছেন কেউ কেউ। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অন্তরা তিথির বাবা সাবেক বিএনপি এবং বর্তমান গণফোরামের নেতা আইনজীবী মো. ইসমাইলের বিরুদ্ধে এই আন্দোলনে উসকানি দেয়ার অভিযোগ করেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হক চৌধুরী নওফেল।
সময়মতো তাদের ধরা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। তবে বুয়েট ছাত্রলীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের নবনিযুক্ত পরিচালককে অপসারণসহ ১৬ দফা দাবিতে করা আন্দোলনসহ বুয়েটে সংগঠিত প্রত্যেকটি আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন তিথি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বুয়েটের এক শিক্ষক এ প্রতিবেদককে জানান, বুয়েটে বিএনপি-জামায়াত অনেক শক্তিশালী ও তৎপর। আবরার হত্যার পর ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার সুযোগে এ ধরনের অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে কাজ করতে অভ্যস্ত জামায়াত-শিবির আরো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এরা বিএনপি ও সমমনাদের সঙ্গে মিলে আন্দোলনের কর্তৃত্ব নিজেদের কব্জায় রেখেছে। এই চক্রই ক্যাম্পাসে অচলাবস্থা জিঁইয়ে রাখতে আন্দোলনকারীদের উসকানি দিচ্ছে।
অন্যদিকে আবরার হত্যাকাণ্ডকে পুঁজি করে কেউ যেন তাদের স্বার্থ হাসিল করতে না পারে এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, এই ঘটনা নৃশংস ও ন্যক্কারজনক। প্রশ্ন হলো দাবি মেনে নেয়ার পরও কেন তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা। বুয়েটে ছাত্র আন্দোলনকে পুঁজি করে বিএনপি এবং তাদের মিত্ররা দেশকে অশান্ত করতে চায়। ছাত্রদল ও শিবির আড়ালে বুয়েটে ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।