টাকার বিনিময়ে এমপিওভুক্ত করিয়ে ফেঁসে যাচ্ছেন একজন উপসচিবসহ তিনজন কর্মকর্তা। অভিযুক্ত তিনজনই বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা। বৃহস্পতিবার (২২ নভেম্বর) দিনভর এই তিনজন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন কর্মকর্তা।
জানা গেছে, এমপিওভুক্তির পক্ষে তিন কর্মকর্তা যথাযথ কাগজপত্র ও বিধিবিধান হাজির করতে ব্যর্থ হয়েছেন। দুদক কর্মকর্তাকে দেখানো কাগজপত্র এমপিওভুক্তির জন্য যথেষ্ট নয়, টাকার বিনিময়ে বিধান চেপে রেখে এমপিওভুক্ত করানোর তথ্য-প্রমাণ মিলেছে।
অভিযুক্ত তিনজনের মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমিক শাখার অবসরপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক মো: জাকির হোসেন বর্তমানে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। অপর একজন শিক্ষা অধিদপ্তরের মাদ্রাসা শাখার সাবেক উপপরিচালক মো: আবুল হোসেন। তিনি দুইবছর আগে শিক্ষা ক্যাডার থেকে সরকারের উপসচিব হয়ে অন্যত্র বদলি হয়েছেন। অপরজন অধিদপ্তরের মাদ্রাসা শাখার সাবেক সহকারি পরিচালক সিদ্দিকুর রহমান যিনি বর্তমানে ঢাকার দুয়ারীপাড়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ পদে রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে দৈনিক শিক্ষার এক প্রশ্নের জবাবে জাকির হোসেন বলেন, ‘কবে এমপিওভুক্ত হয়েছিলো তা মনে নেই কিন্তু এখন জবাবদিহি করতে হচ্ছে।’ সাবেক ডিডি আবুল হোসেন অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেতে নানা দুয়ারে তদবির করছেন বলে জানা গেছে। দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে এমপিওভুক্তির পক্ষে যথাযথ কাগজ দেখাতে না পেরে মন খারাপ অবস্থায় শিক্ষা ভবন ছেড়েছেন সিদ্দিকুর রহমান।
অবশ্য এবিষয়ে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা কোনও মন্তব্য করতে রাজী হননি।
টাকার বিনিময়ে যাদের এমপিওভুক্ত করা হয় সেই তিন শিক্ষক এবং যারা এই এমপিওভুক্তির সাথে জড়িত ছিলেন সেই তিন কর্মকর্তাকে আগেই কাগজপত্র নিয়ে হাজির থাকতে বলা হয়েছিলো।
টাকা দিয়ে এমপিওভুক্ত হওয়া তিন শিক্ষক হলেন রাজবাড়ী জেলার আবুল হোসেন ডিগ্রি কলেজের কম্পিউটার বিষয়ের প্রভাষক কাজী বদরুল আলম, একই জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার জামতলা দাখিল মাদরাসার কম্পিউটার বিষয়ের সহকারী শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মামুন এবং কুরনিয়ারচর কাদেরিয়া হাসনাবাদ দাখিল মাদরাসার কম্পিউটার বিষয়ের সহকারী শিক্ষক আলী আহমেদ।
দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজবাড়ীর আবুল হোসেন ডিগ্রি কলেজের কম্পিউটার বিষয়ের প্রভাষক কাজী বদরুল আলম নিয়োগ পেয়েছেন ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে। আর এমপিওভুক্ত হয়েছেন ২০০০ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরে।
জানা যায়, ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে কম্পিউটার বিষয়ের সহকারী শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মামুন রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার জামতলা দাখিল মাদরাসায় নিয়োগ পান। ২০১০ খ্রিস্টাব্দে এমপিওভুক্ত হন তিনি। গোয়ালন্দ উপজেলার কুরনিয়ারচর কাদেরিয়া হাসনাবাদ দাখিল মাদরাসার কম্পিউটার বিষয়ের সহকারী শিক্ষক আলী আহমেদ নিয়োগ পেয়েছেন ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে। তিনি এমপিওভুক্ত হয়েছেন ২০১০ খ্রিস্টাব্দে। এ সময় এমপিওভুক্তির বিষয়টি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের হাতে ছিল।