‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো, এমপিও নীতিমালা ২০১৮’ সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র জাতীয় পত্রিকা দৈনিক শিক্ষা ধারাবাহিকভাবে মতামত প্রকাশ করে আসছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে কিছু বিষয় পরিমার্জন ও সংযোজনের প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলো।
মাধ্যমিক (৬ষ্ঠ-১০ম) বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে:
(ক) সহকারী শিক্ষক (বাংলা)- ১ জন, সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি)- ১ জন, সহকারী শিক্ষক (গণিত)- ১ জনকে এমপিও প্রদানের বিধান বিদ্যমান। কিন্তু যেহেতু বাংলা (দুইপত্র), ইংরেজি (দুইপত্র) ও গণিত বিষয়ে শিক্ষার্থী অকৃতকার্যের হার বেশি বিধায় অতিরিক্ত ক্লাসের প্রয়োজন হয়; সেহেতু প্রতি বিষয়ে একাধিক শিক্ষককে এমপিও প্রদানের বিধান করা প্রয়োজন।
(খ) সহকারী শিক্ষক (ভৌতবিজ্ঞান)- ১ জন ও সহকারী শিক্ষক (জীববিজ্ঞান)-১ জনকে এমপিও প্রদানের বিধান বিদ্যমান। কিন্তু যেহেতু ভৌতবিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞান বিষয়ে ব্যবহারিক আছে সেহেতু এ দুটি বিষয় মিলে ১ জন ল্যাব সহকারিকেও এমপিও প্রদানের বিধান করা প্রয়োজন।
(গ) অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর-১ জনকে এমপিও প্রদানের বিধান বিদ্যমান। কিন্তু অফিস সহকারিকে যেহেতু নিজেদের অফিসিয়াল কাজ ও আর্থিক হিসাব ঠিক রেখে অনেক সময়ই অন্যান্য অফিসে যেতে হয় সেহেতু এই ১ জনের পাশাপাশি আরও ১ জন অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারীকে এমপিও প্রদানের বিধান করা প্রয়োজন।
(ঘ) নিরাপত্তাকর্মী- ১ জন, নৈশপ্রহরী- ১ জন এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মী- ১ জনকে এমপিও প্রদানের বিধান বিদ্যমান। কিন্তু নিরাপত্তাকর্মী/নৈশপ্রহরী ২ জনের স্থলে ৩ জনকে এবং শ্রেণি শাখা/ শিক্ষার্থীর সংখ্যানুপাতে ১ বা একাধিক পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পাশাপাশি ১ বা একাধিক পিয়ন/ অফিস সহায়কে এমপিও প্রদানের বিধান করা প্রয়োজন।
উচ্চ মাধ্যমিক (৬ষ্ঠ-১২শ) বিদ্যালয়/কলেজের ক্ষেত্রে:
(ক) সহকারী শিক্ষক (বাংলা)- ১ জন, সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি)- ১ জন ও সহকারী শিক্ষক (গণিত)- ১ জনকে এমপিও প্রদানের বিধান বিদ্যমান। কিন্তু যেহেতু বাংলা (দুইপত্র), ইংরেজি (দুইপত্র) ও গণিত বিষয়ে শিক্ষার্থী অকৃতকার্যের হার বেশি বিধায় অতিরিক্ত ক্লাসের প্রয়োজন হয়; সেহেতু প্রতি বিষয়ে একাধিক শিক্ষককে এমপিও প্রদানের বিধান করা প্রয়োজন।
(খ) প্রদর্শক (পদার্থ, রসায়ন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ও উদ্ভিদবিজ্ঞান/ প্রাণিবিজ্ঞান বিষয়ে ল্যাব চালু থাকলে প্রতি বিষয়ে- ১ জন করে) এমপিও প্রদানের বিধান বিদ্যমান। কিন্তু বাস্তবে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী না থাকায় অনেক বিষয়ে/প্রতিষ্ঠানেই এত বেশি সংখ্যক প্রদর্শক রাখা আর্থিক অপচয়। তাই পদার্থ, রসায়ন, উদ্ভিদবিজ্ঞান/ প্রাণীবিজ্ঞান ৩টি বিষয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যানুপাতে ১/২ জন এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে ১ জন = মোট ২/৩ জন প্রদর্শককে এমপিও প্রদানের বিধান করা প্রয়োজন। যা স্নাতক পাস কলেজের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
(গ) গবেষণাগার/ ল্যাব সহকারী (পদার্থ, রসায়ন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ও উদ্ভিদবিজ্ঞান/ প্রাণিবিজ্ঞান বিষয়ে ল্যাব চালু থাকলে প্রতি বিষয়ে-১ জন করে) এমপিও প্রদানের বিধান বিদ্যমান। কিন্তু বাস্তনে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী না থাকায় অনেক বিষয়ে/ প্রতিষ্ঠানেই এত বেশি সংখ্যক ‘গবেষণাগার/ ল্যাব সহকারী’ রাখা আর্থিক অপচয়। তাই পদার্থ, রসায়ন, উদ্ভিদবিজ্ঞান/ প্রাণীবিজ্ঞান ৩টি বিষয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যানুপাতে ১/২ জন এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে ১ জন = মোট ২/৩ জন ল্যাব সহকারীকে এমপিও প্রদানের বিধান করা প্রয়োজন। যা স্নাতক পাস কলেজের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
(ঘ) নিরাপত্তাকর্মী- ১ জন, নৈশপ্রহরী- ১ এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মী- ১ জনকে এমপিও প্রদানের বিধান বিদ্যমান। কিন্তু মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতার আলোকে নিরাপত্তাকর্মী/নৈশপ্রহরী ২ জনের স্থলে ৩ জন এবং শ্রেণি শাখা/ শিক্ষার্থীর সংখ্যানুপাতে ১ বা একাধিক পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পাশাপাশি ১ বা একাধিক পিয়ন/ অফিস সহায়ককে এমপিও প্রদানের বিধান করা প্রয়োজন।
(ঙ) শুধু উচ্চ মাধ্যমিক (১১শ-১২শ) কলেজে অফিস সহাকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর- ২ জনকে এমপিও প্রদানের বিধান বিদ্যমান। বাস্তবে ২টি মাত্র শ্রেণি (১১শ-১২শ) বিদ্যমান থাকায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম হলে বা অতিরিক্ত শ্রেণি/শাখা বিদ্যমান না থাকলে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর ২ জনের স্থলে ১ জন করা উচিত। অপরদিকে হিসাব রক্ষণ কাজের জন্য ১ জন ‘হিসাব সহকারি কাম কম্পিউটার অপারেটর’কে এমপিও প্রদানের বিধান করা প্রয়োজন।
অতিরিক্ত শ্রেণি/শাখা খোলার ও চালু রাখার ক্ষেত্রে:
নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একক শ্রেণির/শাখার শিক্ষার্থীর সংখ্যা হবে ৫০ জন। তবে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০ জনের অধিক হলে পরবর্তী ৪০ জনের জন্য ২য় শাখা খোলার বিধান বিদ্যমান। বাস্তবে যেহেতু এত অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে ক্লাস ফলপ্রসু হয় না। সেহেতু ৪০ জন পর্যন্ত একক শ্রেণি/শাখা এবং ৫০ – ৮০ জন হলে ২য় শাখা, ৯০ – ১২০ জন হলে ৩য় শাখা এইরূপভাবে অতিরিক্ত শ্রেণি শাখা/ বিষয়/ বিভাগ খোলার ও চালু রাখার বিধান করা প্রয়োজন।
নতুন বিষয় খোলার ক্ষেত্রে:
‘উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে সাধারণত প্রতি বিভাগে চারটি বিষয় (Subject) থাকবে, তবে ৫ম বা ততোধিক বিষয় খুলতে হলে ঐ বিষয়ে কমপক্ষে ২৫ জন শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগে মোট শিক্ষার্থী ১০০ জন হতে হবে’ -এইরূপ বিধান বিদ্যমান। বাস্তবে অনেক প্রতিষ্ঠানেই নতুন বিষয়ে ২০/২৫ জন আগ্রহী শিক্ষার্থী পাওয়া গেলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগে মোট শিক্ষার্থী ১০০ জন থাকে না বিধায় নতুন বিষয় খুলা যায় না। ফলে আগ্রহীরা ঐ বিষয় পড়ার সুযোগ পায় না। তাই ৫ম বা ততোধিক বিষয় খুলতে হলে কমপক্ষে ২০ জন শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগে মোট শিক্ষার্থী ৬০ জন নির্ধারণ করা উচিত।
পদোন্নতির ক্ষেত্রে:
‘এমপিও ভুক্ত প্রভাষকগণ প্রভাষক পদে এমপিও ভুক্তির ০৮ (আট) বছর পূর্তিতে ৫:২ অনুপাতে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাবেন। এতে মোট পদসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে না’ –এইরূপ বিধান বিদ্যমান। প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক এই অনুপাত প্রথার কারণে অনেক অনেক প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র প্রভাষক পদোন্নতি পাচ্ছেন না। আবার অন্য প্রতিষ্ঠানের জুনিয়র প্রভাষক পদোন্নতি পাচ্ছেন। তাও মাত্র সারা জীবনে একটি। এমতাবস্থায় এমন বিধান করা উচিত যে, কাম্য যোগ্যতা, অভিজ্ঞতার ও প্রশিক্ষণের ভিত্তিতে প্রভাষকদের মধ্য থেকে ১ঃ১ অনুপাতে সহকারি অধ্যাপক হবেন। অতপর সহকারি অধ্যাপকদের মধ্য থেকে কাম্য যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, প্রশিক্ষণ, প্রকাশনা ও বিভাগীয় পরীক্ষার ভিত্তিতে ১:১ অনুপাতে সহযোগী অধ্যাপক হবেন এবং একইভাবে সহযোগী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক হবেন। অপরদিকে স্কুল পর্যায়েও সিনিয়র শিক্ষক পদ থাকা উচিত।
অতিরিক্ত শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োজিত রাখা:
‘কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুমোদিত জনবলকাঠামোর অতিরিক্ত শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োজিত রাখলে অতিরিক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি ও আনুষভ্গিক সুবিধাদি ১০০% সংশিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বহন করতে হবে’ –এইরূপ বিধান বিদ্যমান। এই বিধানের পাশাপাশি এমন বিধান করা উচিত যে, প্রাতিষ্ঠানিক বেতন/ ভাতায় নিয়োগকৃত অতিরিক্ত শিক্ষকদের (নিয়মিত ও চুক্তিভিত্তিক) যোগ্যতা অবশ্যই এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে কাম্য যোগ্যর অনুরূপ হতে হবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিবর্তন:
‘ইনডেক্সধারী শিক্ষক/ কর্মচারী এক ধরনের প্রতিষ্ঠান হতে অন্য ধরনের প্রতিষ্ঠানে সমপদে/ সমস্কেলে চাকরিতে যোগদান করলে পূর্ব অভিজ্ঞতা গণনাযোগ্য হবে’ –এইরূপ বিধান বিদ্যমান। এক্ষেত্রে-
(ক) ইনডেক্সধারী শিক্ষক/ কর্মচারী এক প্রতিষ্ঠান হতে অন্য প্রতিষ্ঠানে যোগদান করলে অভিজ্ঞতা গণনার পাশাপাশি পূর্ববর্তী প্রতিষ্ঠানের ছুটির হিসাব ও এসিআর বর্তমান প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরের বিধান থাকা উচিত।
(খ) পরিবর্তীত প্রতিষ্ঠানে যোগদানের ক্ষেত্রে শিক্ষানবিশকাল থাকা অনুউচিত। বিশেষ করে প্রশাসনিক পদের ক্ষেত্রে।
(গ) পরিবর্তীত প্রতিষ্ঠানে তার জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বেতন-ভাতা ফিক্সেশনের বিধান উল্লেখ থাকা উচিত।
(ঘ) পূর্ববর্তী প্রতিষ্ঠানের বা পদের কোন বকেয়া অর্থ পরিবর্তীত প্রতিষ্ঠানে বা পদে এসে দাবি করতে পারবেন না। এইরূপ বিধান থাকা উচিত।
আরো পড়ুন: এমপিও নীতিমালা সংশোধন প্রসঙ্গে
একই সাথে একাধিক কর্মে নিয়োজিত থাকা বন্ধ:
‘বেতন-ভাতাদির সরকারি অংশ প্রাপ্তির জন্য আবেদনকারী শিক্ষক-কর্মচারীগণ একই সাথে একাধিক পদে চাকরিতে বা আর্থিক লাভজনক কোন পদে নিয়োজিত থাকতে পারবেন না’ –এইরূপ কথা বিদ্যমান। এ ক্ষেত্রে এমন কথা লেখা উচিত যে, এমপিওভুক্ত/ নিয়মিত কোন শিক্ষক-কর্মচারী একইসাথে একাধিক পদে চাকরিতে বা আর্থিক লাভজনক কোনপদে নিয়োজিত থাকতে পারবেন না এবং কোন ব্যবসাবাণিজ্য, বেতনভুক্ত সংবাদাতা বা প্রাইভেট টিউশনি/ কোচিংয়ের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পারবেন না। কোন খন্ডকালীন কাজে নিয়োজিত থাকতে হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে। জন প্রতিনিধি নির্বাচিত হলে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে হবে।
শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে:
‘বেসরকারী স্কুল ও কলেজে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত শিক্ষাগত যোগ্যতার মধ্যে সমগ্র শিক্ষাজীবনে “পরিশিষ্ট-ঘ” মোতাবেক একটি তৃতীয় বিভাগ/ সমমান গ্রহণযোগ্য হবে’ –এরূপ বিধান বিদ্যমান। বর্তমানে যেহেতু অধিক শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন লোকের ঘাটতি নেই এবং যেহেতু অধিক যোগ্য শিক্ষক অত্যন্ত প্রয়োজন; সেহেতু কোন ৩য় বিভাগ/ সমমান আর গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত নয়। তবে ইনডেক্সধারীদের ক্ষেত্রে শিথিলযোগ্য হতে পারে।
বদলির প্রসঙ্গে:
‘সরকার এমপিওভুক্ত শিক্ষক/ কর্মচারীদের প্রয়োজনবোধে নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে এক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানে বদলি করেত পারবে’ –একথা বিদ্যমান। এক্ষেত্রে বদলি নীতিমালাটি হতে পারে-
(ক) পারস্পরিক বদলি (মিউচুয়াল ট্রেন্সফার): সমজাতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সমপদে ও একই বিষয়ে কর্মরত সমঅভিজ্ঞ ইন্ডেক্সধারী শিক্ষকগণ যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এনটিআরসিএ এর বরাবরে যেকোন সময় আবেদন করে মিউচুয়াল ট্রান্সফার নিতে পারবে।
(খ) স্বেচ্ছায় বদলি: বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিদ্যমান শূন্য আসনে নতুন নিয়োগের পূর্বে সেচ্ছায় বদলির আবেদন চেয়ে এনটিআরসিএ প্রয়োজনমত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে। বিজ্ঞপ্তি অনুসারে সমজাতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সমপদে ও একই বিষয়ে কর্মরত সমঅভিজ্ঞ ইন্ডেক্সধারী আগ্রহী শিক্ষকগণ যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অনলাইনে চয়েজ দিয়ে আবেদন করতে পারবেন। তবে কোন প্রতিষ্ঠানে কারো চাকরি নিরবিচ্ছিন্ন ও সন্তোষজনক ভাবে ৫ বছর পূর্ণ না হলে তিনি বদলির/ পুনঃবদলির জন্য আবেদন করতে পারবেন না। একই প্রতিষ্ঠানের একই বিষয়ে ও পদে একাধিক আবেদনকারীর মধ্যে শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, প্রশিক্ষণ, সহশিক্ষা ইত্যাদি (জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচনের নীতি অনুসারে) বিবেচনা করে অধিক পয়েন্ট প্রাপ্ত শিক্ষক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বদলির সুযোগ পাবেন। এভাবে বদলি কার্যকর হবার পর যেসকল প্রতিষ্ঠানে শূন্য আসন সৃষ্টি হবে সেগুলোতে বিধিমোতাবেক নতুন নিয়োগ প্রদান করা হবে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গ্রেডিং এর ক্ষেত্রে:
‘একাডেমিক স্কীকৃতির তারিখ ২৫ (প্রতি ২ বছরের জন্য ৫, ১০ বা তদু্র্ধব বছর হলে ২৫)’ নম্বর দেওয়া হবে এরূপ লেখা আছে। এখানে হওয়া উচিত- একাডেমি স্বীকৃতির প্রতি ২ বছরের জন্য ৫ নম্বর হারে অনধিক ২৫ নম্বর।
তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে:
‘অসত্য তথ্য প্রদান, তথ্য গোপন করা, ভুয়া বা জাল কাগজপত্র দাখিল, প্রাপ্যতা না থাকা সত্ত্বেও আবেদনপত্র প্রেরণ করার কারণে বেতন-ভাতাদির সরকারি অংশ ছাড়করণে অনিয়মের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধান/ শিক্ষক-কর্মচারী/প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটি-গভর্নিং বডি দায়ী থাকবেন এবং তাদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ –এইরূপ বিধান বিদ্যমান। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাকর্মকর্তাদেরও দায় থাকা উচিত।
নতুন প্রতিষ্ঠান স্থাপনের ক্ষেত্রে:
ভৌগলিক দূরত্বভিত্তিক প্রাপ্যতা ও জনসংখ্যা ভিত্তিক প্রাপ্যতা নির্ধারণের সময় সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসা এই তিন ধরনের প্রতিষ্ঠানকে পৃথকভাবে বিবেচনা না করে সমন্বিতভাবে বিবেচনা করা উচিত। যাতে
কোন প্রতিষ্ঠানই শিক্ষার্থীর অভাব না হয়।
অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে:
উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে/কলেজে অধ্যক্ষ পদের জন্য ‘কলেজে উপাধ্যক্ষ/ সহকারী অধ্যাপক পদে ০৩ বছরে অভিজ্ঞাতাসহ প্রভাষক/ সহকারী অধ্যাপক পদে ১২ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা’ থাকার বিধান বিদ্যমান। বিষয়টি খুবই অষ্পস্ট। এক্ষেত্রে লেখা উচিত- কলেজ পর্যায়ে উপাধ্যক্ষ/ সহকারী অধ্যাপক পদে ৩ বছরসহ সর্বমোট ১২ বছরের শিক্ষকতা।
বিদ্যমান বিধান বহির্ভূত কিছু অতিরিক্ত প্রস্তাব:
(ক) প্রশাসনিক পদে নিয়োগের দায়িত্ব এনটিআরসিএ –এর উপর ন্যস্ত করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে পৃথক বাছাই প্রকৃয়া প্রণয়ন করা আবশ্যক যা এন্ট্রি পোস্টে নিয়োগের বাছাই প্রকৃয়া থেকে সম্পুর্ণ আলাদা হবে। (জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে শ্রেষ্ঠ
শিক্ষক নির্বাচনের নীতি অনুসারে হতে পারে।
(খ) সংযুক্ত প্রাথমিক শাখা (৫ম শ্রেণি পর্যন্ত) থেকে যেহেতু প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটিতে প্রতিনিধি নিয়োজিত থাকে; সেহেতু এই স্তরে পাঠদানকারী শিক্ষকদের যোগ্যতা ও স্টাফ প্যাটার্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনুরূপ নির্ধারণ করা এবং তাদের এমপিওভুক্ত করা উচিত।
(গ) যেহেতু এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকার থেকে শতভাগ বেতন ও আংশিক ভাতাদি পান এবং যেকোন সময় জাতীয়করণের সম্ভাবনা থাকে সেহেতু সর্বক্ষেত্রে নিয়োগের পূর্বে পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট দেখে নেওয়া উচিত।
(ঘ) যেকোন স্তরের শিক্ষক পদে প্রথম নিয়োগ লাভের পরবর্তী ৫ বছরে (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) পিটিআই/ বিএড/ এমএড ডিগ্রি অর্জন করতে হবে। ৫ বছরে ব্যর্থ হলে আরো ২ বছর সময় পাবেন। ৭ বছরে ব্যর্থ হলে অযোগ্যতার কারণে চাকরিচ্যুত হবেন। এমপিও নীতিমালা সংশোধনে সংশ্লিষ্টরা উল্লিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করবেন আশাকরি।
মো. রহমত উল্লাহ্, শিক্ষাবিদ এবং অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।