আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত নতুন এমপিওভুক্তির জন্য নির্বাচিত ৫২০টি কারিগরি প্রতিষ্ঠানে তথ্য যাচাই-বাছাই করা হবে। এসব প্রতিষ্ঠানের তথ্য যাচাইয়ে স্তরভিত্তিক সময়সূচি নির্ধারণ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি। আর তথ্য যাচাইয়ে যেসব কাগজপত্র লাগবে তাও জানানো হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোতে। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এতথ্য নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, এমপিওভুক্ত কারিগরি তথ্য যাইয়ে দুইটি সাবকমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ সাব কমিটি দুটি আগামী ১৮ থেকে ২৪ ডিসেম্বর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে এমপিওভুক্তির জন্য নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য যাচাই করবে। বোর্ড সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানায়, আগামী ১৮ ডিসেম্বর ১১০টি ভোকেশনাল প্রতিষ্ঠানের, ১৯ ডিসেম্বর আরও ৬৫টি ভোকেশনাল প্রতিষ্ঠান ও ৪৬টি বিএম কলেজের, ২২ ডিসেম্বের আরও ১০১টি বিএম কলেজের, ২৩ ডিসেম্বর ১০৩টি বিএম কলেজের তথ্য যাচাই করা হবে। আর আগামী ২৪ ডিসেম্বর বাকি থাকা ৩০টি বিএম কলেজ ও ৬২টি কৃষি প্রতিষ্ঠানের তথ্য যাচাই করা হবে।
জানা গেছে, এমপিওভুক্ত ভোকেশোনাল প্রতিষ্ঠানের তথ্য যাচাইয়ে ১ম স্বীকৃতি ও ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের স্বীকৃতির প্রমাণক, ভর্তির প্রমাণক, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ও ফলাফল জমা দিতে হবে। বিএম কলেজগুলোর তথ্য যাচাইয়ে ১ম স্বীকৃতি ও ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের স্বীকৃতির প্রমাণক, ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যা,পরীক্ষার্থীর সংখ্যা, ফলাফল জমা দিতে হবে।
কৃষি ডিপ্লোমা ইন্সটিটিউটের তথ্য যাচাইয়ে ১ম স্বীকৃতি ও ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের স্বীকৃতির প্রমাণক, ২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যার প্রমাণক, ২০১৫, ২০১৬, ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের পরীক্ষার্থীর গড় সংখ্যার প্রমাণক ও ২০১৫, ২০১৬, ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ফলাফল জমা দিতে হবে।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, নতুন এমপিওভুক্তির তালিকায় স্থান পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানকে এমপিওভুক্তি তথ্য যাচাইয়ে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হয়ে এসব কাগজপত্রের মূলকপি ও ১সেট ফটোকপি জমা দিতে হবে। এজন্য প্রতিষ্ঠান প্রধানদের একজন উপযুক্ত শিক্ষকসহ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে আসতে বলা হয়েছে।
গত ১৪ নভেম্বর নতুন এমপিওভুক্ত হওয়া মাদরাসা, কারিগরি প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা কলেজগুলোর তথ্য যাচাই-বাছাই করতে ১০ সদস্যের কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মাদরাসা, কারিগরি প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা কলেজগুলোর দেয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করতে কমিটির আহবায়ক করা হয় কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অতিরিক্ত সচিব রওনক মাহমুদকে। গত ২৩ অক্টোবর প্রকাশিত এমপিও তালিকায় স্থান পাওয়া ১ হাজার ৭৬টি মাদরাসা, কারিগরি প্রতিষ্ঠান ও বিএম কলেজের তথ্য যাচাই করবে এই কমিটি। কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালককে (পিআইডাব্লিউ)। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন উপযুক্ত প্রতিনিধিকেও রাখা হয়েছে কমিটিতে।
কমিটি সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানায়, এমপিওভুক্তির জন্য নির্বাচিত ১ হাজার ৭৬টি প্রতিষ্ঠানের তথ্য যাচাইয়ে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, মাদারাসা শিক্ষা বোর্ড এবং ব্যানবেইসের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে চারটি সাব-কমিটি গঠন করা হবে। চারটির মধ্যে দুইটি সাবকমিটি কারিগরি প্রতিষ্ঠানের তথ্য এবং দুইটি সাবকমিটি মাদরাসার তথ্য যাচাই-বাছাই করবে।
সুত্র আরও জানায়, তথ্য যাচাই-বাছাই সুবিধার্থে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সাব-কমিটির দুটি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে এবং মাদরাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সাব-কমিটির দুটি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে এমপিওভুক্তির জন্য নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য যাচাই-বাছাই করবে। আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট পাঁচ দিন নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য যাচাই বাছাই করা হবে। তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের সিডিউল কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, জেলা প্রশাসক ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোকে জানিয়ে দেয়া হবে। সাবকমিটি নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানের তথ্য যাচাই করে এমপিওভুক্তির যথার্থতা নিরুপন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দেবেন।
সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে আরও জানায়, ব্যানবেইসের সফটওয়্যারের মাধ্যমে সরবরাহ করা তথ্যের যেসব প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমপিওর তালিকা প্রকাশ করেছে সেগুলোও যাচাই করে দেখা হবে।
প্রসঙ্গত, নতুন এমপিওভুক্তির জন্য নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানের তালিকায় দাখিল মাদরাসা সংখ্যা ৩৫৮টি, আলিম মাদরাসার সংখ্যা ১২৮টি, ফাযিল মাদরাসা ৪২টি ও কামিল মাদরাসা ২৯টি স্থান পায়। এছাড়া ৬২টি কৃষি ডিপ্লোমা প্রতিষ্ঠান, ১৭৫টি ভোকেশনাল প্রতিষ্ঠান ও ২৮৩টি বিএম কলেজ এমপিওভুক্তির জন্য নির্বাচিত হয়।
জানা যায়, এর আগে নতুন এমপিওভুক্তির জন্য গত বছরের আগস্টে আবেদন করে নয় হাজার ৬১৫ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এগুলোর মধ্যে দুই হাজার ৭৩০টি প্রতিষ্ঠানকে ২৩ অক্টোবর এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেয়া হয়। তালিকা প্রকাশের পর বিভিন্ন রকমের প্রতিক্রিয়া দেখা যায় বঞ্চিত ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে।
নীতিমালা অনুযায়ী চার শর্ত পূরণকারী প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দেয়া হয়েছে। শর্তগুলো হলো- প্রতিষ্ঠানের বয়স বা স্বীকৃতির মেয়াদ, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ও পাসের হার। প্রতিটি পয়েন্টে ২৫ করে নম্বর থাকে। কাম্য শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এবং স্বীকৃতির বয়স পূরণ করলে শতভাগ নম্বর দেয়া হয়। সর্বনিম্ন ৭০ নম্বর পাওয়া প্রতিষ্ঠানও এমপিওভুক্তির জন্য বিবেচিত হয়।
গত ২৩ অক্টোবর প্রকাশিত এমপিওভুক্তির তালিকায় প্রায় অস্তিত্বহীন, যুদ্ধাপরাধের আসামি প্রতিষ্ঠিত, সরকারিকৃত এবং আংশিক এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে।