এমপিওভুক্ত শিক্ষক বাদ দিয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকের জ্যেষ্ঠতা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ) শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদির সরকারি অংশ প্রদান এবং জনবল কাঠামো সম্পর্কিত নির্দেশিকার ধারা-১৩-এতে শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা ও অভিজ্ঞতা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে বলা আছে, 'শিক্ষকদের পারস্পরিক জ্যেষ্ঠতা ও অভিজ্ঞতা তাদের প্রথম এমপিওভুক্তির তারিখ হতে গণনা করা হবে। আর এমপিওভুক্ত একই তারিখে হলে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণের জন্য যোগদানের তারিখ বিবেচনা করা হবে। এই জ্যেষ্ঠতা ও অভিজ্ঞতা নির্ধারণ শুধু শিক্ষকদের জন্য প্রযোজ্য হবে। খণ্ডকালীন শিক্ষকদের জন্য এই ধারা প্রযোজ্য নয়।' আজ মঙ্গলবার (২১ মে) সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শৈবাল আচার্য্য।
 
কাগজে-কলমে এমন নিয়ম থাকলেও সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করা হচ্ছে নগরীর বেসরকারি ওমরগণি এমইএস কলেজে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ডিঙিয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমন অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করায় একপর্যায়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ভাতাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভাতা ছাড়া বেতন নিতে অস্বীকৃতি জানানোয় কয়েক মাস ধরে সব শিক্ষকের কলেজ প্রদেয় বেতন বন্ধ। সেই সঙ্গে বন্ধ রয়েছে এমপিওর টাকাও। এমন সাংঘর্ষিক সিদ্ধান্তের কারণে কলেজটিতে সৃষ্টি হয়েছে অচলাবস্থা। কলেজটিতে এমপিওভুক্ত ও খণ্ডকালীন মিলিয়ে ৫৪ জন শিক্ষক রয়েছেন।
 
জানা গেছে, কলেজটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারের সুপারিশে খণ্ডকালীন শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে এতে 'নোট অব ডিসেন্ট' দেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। অভিযোগ আছে, এর আগেও একাধিকবার সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে খণ্ডকালীন শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল কলেজটির পরিচালনা কমিটি। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অভিযোগ, সভার আলোচ্যসূচিতে বিষয়টি না থাকলেও 'বিবিধ' বিষয় হিসেবে দেখিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেয় কলেজ পরিচালনা কমিটি। ২০১৮ সালে কলেজের সাত খণ্ডকালীন শিক্ষককে পূর্ণকালীন দেখিয়ে এমপিওভুক্তির আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু ওই বছরের ২৬ নভেম্বর মাউশির সহকারী পরিচালক ফারহানা আক্তার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ওই আবেদন নাকচ করা হয়। এর কারণ হিসেবে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, 'যাদের এমপিওভুক্ত করার আবেদন করা হয়েছে তারা খণ্ডকালীন হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন।' কলেজ পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করায় গত ২ এপ্রিল থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভাতা বন্ধ করে দেওয়ার পর শিক্ষকরা বেতন নিতে অস্বীকৃতি জানান। গত প্রায় চার মাস ধরে কলেজ প্রদত্ত বেতনও দেওয়া হচ্ছে না। মার্চ ও এপ্রিল মাসের এমপিও বেতনও বাকি। কলেজ কমিটির এমন সিদ্ধান্তের কারণে শিক্ষকদের বৈশাখী ভাতাও আটকে আছে। গত ৩ এপ্রিল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে ওমরগণি এমইএস কলেজ, চট্টগ্রাম-এ বিভিন্ন অনিয়মের সুরাহা চেয়ে একটি চিঠি দিয়েছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা।
 
'বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের চাকরির শর্তাবলি রেজ্যুলেশন ১৯৯৪'-এর ১০ ধারায় খণ্ডকালীন শিক্ষকদের সম্মানী ও ভাতা পূর্বনির্ধারিত হবে এবং নিয়োগপত্রে উল্লেখ থাকবে বলে নির্দেশিত আছে। ওই নির্দেশনা অনুসারে এই কলেজে খণ্ডকালীন হিসেবে যোগ দেওয়া শিক্ষকদের নিয়োগপত্রে বেতন-ভাতা বাবদ মোট কত টাকা করে পাবেন তাও উল্লেখ করা আছে। বেতন নিয়ে জটিলতায় খণ্ডকালীন শিক্ষকদের কয়েকজন গত ২৫ এপ্রিল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কক্ষে গিয়ে অশোভন আচরণও করেছেন। যার বিস্তারিত বিবরণ উল্লেখ করে অধ্যক্ষ ওইদিনই খুলশী থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেছেন বলে জানা গেছে। এদিকে বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্নিষ্ট শাখা তদারকি করছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। বিষয়টি চট্টগ্রামের সাবেক প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ ছেলে ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের নজরেও এসেছে বলে জানা গেছে।
 
এমইএস কলেজের কয়েকজন এমপিওভুক্ত শিক্ষক  বলেন, ২০১৫ সালের ২৮ জুন কলেজ পরিচালনা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এমপিওভুক্ত এবং নন-এমপিওভুক্ত সবাই কলেজের পূর্ণকালীন শিক্ষক; যা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালার পরিপন্থী। সেই সিদ্ধান্তের জের ধরে সর্বশেষ কমিটির সভায় যোগদানের তারিখের ভিত্তিতে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া
 
হয়। যেখানে সরকারি নির্দেশনায় সুস্পষ্টভাবে শুধু এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতার বিধান দেওয়া আছে। সেখানে কিভাবে খণ্ডকালীন শিক্ষকদের এক কাতারে এনে যোগদানের তারিখের ভিত্তিতে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণের সিদ্ধানক নেওয়া হয়? এমন সিদ্ধান্ত পুরোপুরি অযৌক্তিক। কমিটির সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক বলেই এর আগে খণ্ডকালীনদের অনৈতিক সুবিধা দিতে আগেও তাদের পূর্ণকালীন দেখিয়ে এমপিওভুক্তির করা আবেদন মাউশি প্রত্যাখ্যান করেছিল। 
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের একজন শিক্ষক বলেন, 'অতীতে এমপিওভুক্তির পরীক্ষায় অংশ নিয়ে খণ্ডকালীন এসব শিক্ষকদের অনেকে অনুত্তীর্ণ হয়েছেন। অনুত্তীর্ণ শিক্ষকরা কিভাবে জ্যেষ্ঠতা পাবেন? তাদের যদি জ্যেষ্ঠতা দেওয়া হয়, তাহলে এনটিআরসিএ কর্তৃক মেধাতালিকা অনুসারে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা তাদের জুনিয়র হবেন। অথচ এসব খণ্ডকালীন শিক্ষকদের মধ্যে কয়েকজনের নিবন্ধনই নেই। কলেজ কমিটির নেয়া এমন সিদ্ধান্ত পুরোপুরি ভিত্তিহীন। এই সিদ্ধান্ত কোনোভাবে মেনে নেবে না এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। 
 
এ বিষয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তাহমিনা আক্তার বলেন, 'খণ্ডকালীন শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা দেওয়ার বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে সেটি এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। সাড়ে তিন মাস ধরে সবারই বেতন বন্ধ থাকায় কলেজে এক ধরনের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গত ১৬ মে কলেজ কমিটি একজনকে স্থায়ী অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। আশা করছি নতুন অধ্যক্ষ দায়িত্ব নিয়ে সমস্যার সমাধান করবেন। এ বিষয়ে আমি আমার বক্তব্য ও মতামত নতুন অধ্যক্ষ জানতে চাইলে দেব।' 

পাঠকের মন্তব্য দেখুন
মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি - dainik shiksha মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! - dainik shiksha খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ - dainik shiksha এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.004450798034668