একজন এমপিওভুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুইটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। খয়ের আহমদ নামের ওই শিক্ষক সিলেটের উত্তর বিশ্বনাথ আমজদ উল্লাহ ডিগ্রি কলেজে হিসাববিজ্ঞানের এমপিওভুক্ত প্রভাষক। একইসাথে তিনি সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার নূরজাহান মেমোরিয়াল মহিলা ডিগ্রি কলেজে শিক্ষকতা করেন । দৈনিক শিক্ষাডটকমের এক প্রশ্নের জবাবে বিষয়টি নিশ্চিতও করেছেন নূরজাহান মেমোরিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ নিজাম উদ্দিন তরফদার। যদিও একই সাথে দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার বিষয়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রভাষক খয়ের আহমদ ২০১০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে উত্তর বিশ্বনাথ আমজদ উল্লাহ ডিগ্রি কলেজে হিসাববিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। এ প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক তিনি। অপরদিকে নূরজাহান মেমোরিয়াল মহিলা ডিগ্রি কলেজে হিসাববিজ্ঞান বিষয়ের নন-এমপিও প্রভাষক হিসেবেও কর্মরত। ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ নভেম্বর নূরজাহান মেমোরিয়াল মহিলা ডিগ্রি কলেজে নিয়োগ পান প্রভাষক খয়ের আহমদ।
এদিকে একই সাথে দুই কলেজে চাকুরি করায় কোনো কলেজেই খয়ের আহমদ নিয়মিত ক্লাস করান না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। এদিকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও নীতিমালার ১৩ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বেতন ভাতাদির সরকারি অংশ প্রাপ্তির জন্য শিক্ষক-কর্মচারিরা একই সাথে একাধিক চাকরিতে বা আর্থিকভাবে লাভজনক কোন পদে নিয়োজিত থাকতে পারেননা। অথচ, সরকারি বিধিবিধান উপেক্ষা করেই আর্থিক সুবিধা লাভের আশায় দুইটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন প্রভাষক খয়ের আহমদ।
স্থানীয় কয়েকটি বিশস্ত সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানায়, ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে উত্তর বিশ্বনাথ আমজদ উল্লাহ ডিগ্রি কলেজে যোগদানের আগে ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর থেকে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার নূরজাহান মেমোরিয়াল মহিলা ডিগ্রি কলেজে হিসাববিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন খয়ের আহমদ। সেখানে এমপিওভুক্ত না হলেও কলেজের নিজস্ব ফান্ড থেকে বেতনভাতা নিচ্ছেন এ শিক্ষক। আগামীতে তিনি নূরজাহান মেমোরিয়াল মহিলা ডিগ্রি কলেজ থেকে এমপিওভুক্ত হবারও পরিকল্পনা করছেন জানা যায়। এমপিওভুক্ত হতে পারলে তিনি প্রায় ১৫ বছরের বকেয়া এমপিও পাওয়ার চেষ্টা করবেন বলে জানা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রভাষক খয়ের আহমদ প্রতি রোববার ও বুধবার নূরজাহান মেমোরিয়াল মহিলা ডিগ্রি কলেজে ক্লাস নেন। এই দুইদিন উত্তর বিশ্বনাথ আমজদ উল্লাহ ডিগ্রি কলেজে অনুপস্থিত থাকেন।
স্থানীয়রা জানান, সিলেটের মদন মোহন কলেজের সাবেক ছাত্রশিবির নেতা খয়ের আহমদ। সপ্তাহে দুইদিন প্রতিষ্ঠানে এসেও নূরজাহান মেমোরিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ নিজাম উদ্দিন তরফদারকে ম্যানেজ করে খয়ের বছরের পর বছর চাকরি টিকিয়ে রাখছেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হয় নূরজাহান মেমোরিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ নিজাম উদ্দিন তরফদারের কাছে। তাঁর কলেজে খয়ের আহমদ নামের কোন শিক্ষক কর্মরত আছে কিনা এমন প্রশ্নে জবাবে সত্যতা নিশ্চিত করেন অধ্যক্ষ। তবে খয়ের আহমদকে এমপিওভুক্ত করার জন্য কোন আবেদন বা সুপারিশ তিনি পাঠাননি বলেও জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত প্রভাষক খয়ের আহমেদ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, 'অভিযোগটি সঠিক নয়। আমি দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি না। আগে ওই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতাম। কিন্তু এখন যাই না।' তবে, কবে পদত্যাগ করেছেন প্রশ্নটি একাধিকবার করা হলেও এর কোনো উত্তর দেননি তিনি।
উত্তর বিশ্বনাথ আমজদ উল্লাহ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ নেছার আহমদ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, 'খয়ের আহমদ অন্য কোথাও চাকরি করেন কিনা তা আমি জানি না। তবে, কলেজের হাজিরা খাতা প্রতিদিনই তার স্বাক্ষর রয়েছে।'