এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা নিয়ে কিছু কথা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি গঠনে চাই নতুন নীতিমালা’ শীর্ষক গত ৩ জুলাই দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি গঠনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি নীতিমালার একটি খসড়া তৈরির জন্য চার সদস্য বিশিষ্ট একটি উপ কমিটি গঠন করেছেন।

প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, গত ২ মে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। বোধকরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় মানসম্মত পরিচালনা কমিটি গঠনের জন্যই কমিটির সদস্যদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। শনিবার (০৩ আগস্ট ) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধনটি  লিখেছেন মাহবুবুল হক ইকবাল।

প্রসঙ্গক্রমে বলতেই হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির বিবর্ণ চিত্রের জন্য শুধু নিরক্ষর অথবা অর্ধশিক্ষিত কমিটির সদস্যবৃন্দ দায়ী নন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির আজকের অন্তহীন সমস্যা একদিনে তৈরি হয়নি। শিক্ষার সুযোগ ও বিস্তার নয়, বাণিজ্যিক মোহে এবং দুর্নীতির নতুন একটি ক্ষেত্র তৈরির জন্য যখন থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার হিড়িক পড়ে, তখন থেকেই এদেশের শিক্ষাক্ষেত্রের চিত্রটি দ্রুত পালটে যায়।

শিক্ষাগত যোগ্যতা বিহীন লোক মানেই জ্ঞানহীন কিংবা অ-বিদ্যোত্সাহী তা ভাবার সুযোগ কোথায়? এদেশের শতবর্ষী-অর্ধশতবর্ষী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির প্রতিষ্ঠাতা বা সদস্যদের অধিকাংশেরই কোনো সনদ ছিল না। তাঁরা নিজেদের পকেটের টাকায়, পকেটের টাকায় না কুলোলে দ্বারে দ্বারে চেয়ে, উদয়স্ত পরিশ্রম করে স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন।

নিজেদের ব্যক্তিগত ও সাংসারিক জীবনকে তুচ্ছজ্ঞান করে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেছেন। এইসব প্রতিষ্ঠাতা কিংবা সদস্যদের অনেকেরই অর্থ-বিত্ত ছিল না। ছিল শুধুমাত্র একটা সাদা মন, আর সমাজকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার তীব্র বাসনা। প্রতিষ্ঠান থেকে দু’পয়সা রোজগার করা যায় এমন ভাবনা তাঁদের মাথায়ও আসেনি। আর আসেনি বলে প্রতিষ্ঠানে সভাপতি কিংবা সদস্য হিসেবে ঢোকার জন্য বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার একটি মাদ্রাসার অধ্যক্ষের মাথায় প্রকাশ্যে মানবমল ঢেলে দেওয়ার মতো ঘটনা তখন ঘটেনি।

নারায়ণগঞ্জের প্রধানশিক্ষকের মতো কারোর কান ধরে ওঠবস করতে হয়নি। কুমিল্লার একটি কলেজের সভাপতি কর্তৃক কারণ দর্শানো ছাড়া একজন অধ্যক্ষকে সাময়িক বরখাস্তের মতো ঘটনাও তখন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়নি। ঐ সময় দৈনিক ইত্তেফাকে ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাই সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক সম্পাদকীয় লেখারও প্রয়োজন হয়নি।

বিগত ১৪ জুন ২০১৫ তারিখে প্রকাশিত সম্পাদকীয়র শুরুটা এভাবে—‘শিক্ষাখাতের নানান সংকটের মধ্যে ইত্তেফাকে সংবাদ প্রকাশিত হইয়াছে যে, রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে বেশ কিছু এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্ষতিগ্রস্ত হইতেছে শিক্ষা কার্যক্রম। প্রতিষ্ঠানগুলির গভর্নিংবডির সহিত যুক্ত রাজনীতিবিদদের অনৈতিক কার্যক্রমে শিক্ষা উন্নয়ন ব্যাহত হইতেছে।’ সম্পাদকীয়টি বোধকরি পরিচালনা কমিটি কর্তৃক দুরারোগ্য ব্যাধিতে শিক্ষা কার্যক্রম আক্রান্ত হওয়ার কারণ নির্ণয়ে প্যাথলজিক্যাল কিংবা বায়োকেমিক্যাল টেস্ট রিপোর্ট।

পরিচালনা কমিটি অর্থাত্ স্কুলের ক্ষেত্রে ১২ সদস্য বিশিষ্ট ‘ম্যানেজিং কমিটি’ আর কলেজের ক্ষেত্রে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট ‘গভর্নিংবডি’ নামে অভিহিত। আইনের ফাঁক-ফোকর গলে, রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে, পরিচালনা কমিটিতে এমন সব ব্যক্তির দেখা মিলছে যাঁদের একটি বড় অংশ কমিটিতে ঢুকেছেন নিয়োগ ও ভর্তি বাণিজ্য করতে! ভর্তি আর পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় আদায়কৃত অর্থে ভাগ বসাতে এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের নামে প্রতিষ্ঠানের বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিতে।

তাদের না আছে মনুষ্যত্ব, না আছে ভদ্রতাজ্ঞান, না আছে শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য দুটি কথা বলার মতো সক্ষমতা। এদের সঙ্গে স্কুল-কলেজের কর্মরত শিক্ষকদের একটা মানসিক দূরত্ব স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তৈরি হয়। আবার পরিচালনা কমিটি গঠনও একটি জটিল প্রক্রিয়া। কে আসবে, কাকে আনা হবে বা আনতে হবে তা নিয়ে প্রতিষ্ঠানপ্রধানকে ভীষণ চাপের মুখে থাকতে হয়। কমিটিতে ঢুকতে পারা এবং না পারাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট দ্বন্দ্বের কারণে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আজ শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নেই।

কাজেই নতুন নীতিমালার আলোকে গঠিত পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে এই জায়গা থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে বের করে আনতে হবে। যদি বের করে আনা না যায় তাহলে নতুন কোনো কর্তৃপক্ষ সৃষ্টির কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। উল্লেখ্য, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষাবোর্ড, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর, ব্যানবেইস, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় (স্নাতক স্তরের জন্য) কর্তৃপক্ষের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। প্রকারান্তরে এইসব কর্তৃপক্ষই শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করেন।

এইসব কর্তৃপক্ষের আদেশ, নির্দেশ ও শর্ত পালনে ব্যর্থ হলে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এইসব কর্তৃপক্ষ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। প্রতিষ্ঠানের অধিভুক্তি বা স্বীকৃতির নবায়ন হয় না। এমনকি এমপিও স্থগিত, কর্তন এবং বাতিলও করা হয়। তাই প্রয়োজনে জনবল বাড়িয়ে এইসব কর্তৃপক্ষের কাছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির নিয়ন্ত্রণভার পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়াও যেতে পারে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.010656118392944