গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার শ্যামপুর নাসির উদ্দিন প্রধান দাখিল মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তিতে অনিয়মের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলেছেন প্রতিষ্ঠানটির সুপার ও সভাপতি। গত ৪ জুন বিভিন্ন অভিযোগ এনে সুপার কাজী মাহফুজুল হান্নানকে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার নুরন্নবী প্রধান। এদিকে পাল্টা সভাপতির বিরুদ্ধে অনিয়ম, এমপিওভুক্তিতে ঘুষ লেনদেন এবং পুরাতন শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করার অভিযোগ এনেছেন সুপার। এনিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে।
সুপার কাজী মাহফুজুল হান্নানের অভিযোগ, সভাপতি পুরাতন শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করতে টাকা দাবি করেন। সে টাকা না দেয়ায় অনিয়ম করে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। এতে বাধা দেয়ায় সুপারকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। অপরদিকে সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার নুরন্নবী প্রধানের দাবি, চাকরি দেয়ার নামে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে ৩৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ, সভাপতি স্বাক্ষর জাল করা ইত্যাদি অভিযোগে সুপারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
অভিযোগ করে সুপার কাজী মাহফুজুল হান্নান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, প্রতিষ্ঠানের ১৫ জন শিক্ষক ৩ জন কর্মচারীসহ মোট ১৮ জন গত ২২ বছর ধরে বিনা বেতনে চাকরি করছেন। সম্প্রতি মাদ্রাসাটি এমপিওভুক্ত হলে সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার নুরন্নবী প্রধান, শিক্ষকেদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। বেশিরভাগ শিক্ষক টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তখন সভাপতি নতুন শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে আমাকে চাপ প্রয়োগ করে। এতে অস্বীকৃতি জানালে পরবর্তী সময়ে সাঘাটা বোনারপাড়া কলেজ রোডে একটি মার্কেটে সভাপতির অফিস রুমে আটকিয়ে জোর করে সিল, মাদরাসার কাগজপত্র ও স্বাক্ষর নেয়া হয়। পুলিশের সহযোগিতায় সেখান থেকে মুক্ত হয়। এ ঘটনায় সাঘাটা থানায় সাধারণ ডায়েরি করে হয়েছে।
তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে আরও জানান, বিধি বহির্ভূতভাবে সহকারী মৌলভী মো. হামিদুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্ব দেখিয়ে টাকার বিনিময়ে নতুন শিক্ষকদের নিয়োগ দিয়ে এমপিওভুক্তির আবেদন করা হয়েছে। এসব জানিয়ে রংপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালক ও মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। আগের ৮ জন শিক্ষক (সুপারসহ) বাদ দিয়ে ঘুষ নিয়ে নতুন শিক্ষক বিধি বহির্ভূতভাবে নিয়োগ দিয়েছেন সভাপতি। তাই নতুন ৮ জন বাদ দিয়ে ব্যানবেইজের তালিকায় থাকা ১৮ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে এমপিওভুক্ত করার আবেদন জানান সুপার।
এদিকে শ্যামপুর নাসির উদ্দিন প্রধান দাখিল মাদরাসার সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার নুরন্নবী প্রধান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, শিক্ষক পদে চাকরি দেয়ার নামে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে ৩৩ লাখ টাকা নিয়ে আত্মসাৎ এবং সভাপতি স্বাক্ষর জাল করাসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগে সুপারকে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। আর মোটা অঙ্কের টাকার শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য এবং সুপারকে আটক রেখে সিল, মাদরাসার কাগজপত্র ও স্বাক্ষর নেয়ার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।
সাঘাটা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আহসান হাবীব দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে যেসব শিক্ষক মাদরাসায় কর্মরত তাদের বাদ দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। নতুন করে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ও সুযোগ নাই। তবে সুপারের এবং সভাপতির টাকা আত্মসাতের ব্যাপারে জানেন না বলেও দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান তিনি।