এমপিওভুক্তির ঘোষণায় দেরি হতে পারে, বিশেষ বিবেচনায় ৩০০

নিজস্ব প্রতিবেদক |

যোগ্যতার ভিত্তিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির পাশাপাশি ‘বিশেষ বিবেচনায়ও’ তিনশতাধিক প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আভাস পাওয়া যাচ্ছে। কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা তালিকা তৈরির কাজ করছেন। তালিকা চূড়ান্ত হলে তা অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হবে। সব মিলে ৩ হাজার প্রতিষ্ঠান এবার এমপিওভুক্ত হতে পারে বলে এরই মধ্যে সংসদে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

যোগ্যতার বাইরে এমপিও দেয়ার খবরে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের কাছে ভিড় করছেন অনেক শিক্ষক-কর্মচারী। এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাসহ রাজনৈতিক ও অন্য প্রভাবশালী এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘনিষ্ট ব্যক্তিদের কাছেও ধরনা ধরছেন কেউ কেউ। এ চাপের কারণে শেষ পর্যন্ত শর্ত পূরণ করা প্রতিষ্ঠানের অনেকটি বাদ পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের শঙ্কা, তেমনটি হলে অনেক শিক্ষক-কর্মচারী বঞ্চিত বা প্রতারিত হবেন।

দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের প্রতিষ্ঠান কিংবা ২০ কিলোমিটারে একমাত্র যে নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান- সেটি শর্তপূরণ না করলেও এমপিও পেতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। 

কেননা সেই এলাকার পাসের হার আর শহর এমনকি গ্রামের পাসের হারও সমান হবে না। এমন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা না হলে শিক্ষক-কর্মচারীরা নিরুৎসাহিত হয়ে যাবেন। মন্ত্রী বলেন, আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে চিঠি পাচ্ছি। সংসদ সদস্যরাও ডিও দিচ্ছেন। তবে নিয়মের মধ্যে থেকে যতটুকু সম্ভব সুবিচার করা হবে।

জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন শনিবার বলেন, নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির সব কাজ প্রায় গুছানো হয়ে গেছে। কাজ পুরোপুরি শেষ হলে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হবে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করা হবে। প্রায় একই কথা বলেছেন কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদ।

তিনি বলেন, এমপিওর তালিকা এখনও ফাইনাল (চূড়ান্ত) পর্যায়ে আসেনি। আমরা এখন প্রতিষ্ঠানের নাম যাচাই-বাছাই করছি। আশা করছি জুলাই মাসের মধ্যেই এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের নাম ঘোষণা করা হবে। তবে যেদিনই ঘোষণা করা হোক না কেন, ১ জুলাই থেকে এটি কার্যকরের সিদ্ধান্ত আছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পিছিয়ে পড়া অঞ্চল হিসেবে হাওর-বাঁওড়, পাহাড়ি এলাকা, চরাঞ্চল এবং দুর্গম এলাকা ও নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশেষ বিবেচনা পাবে। এছাড়া যোগ্যতা অনুসারে যেসব উপজেলার কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তালিকায় ঠাঁই পায়নি, সেসব উপজেলা থেকে বিশেষ বিবেচনায় এমপিওভুক্ত করা হবে। তবে এক্ষেত্রে ওই সব উপজেলায় সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো অগ্রাধিকার পাবে। এ তথ্য জানার পরই মূলত এমপিওপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। তাদের অনুরোধে অনেক সংসদ সদস্য এমপিও চেয়ে আধা-সরকারিপত্র (ডিও) পাঠাচ্ছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। তাতে উল্লেখ করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিও দেয়ার পক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরছেন তারা। এর মধ্যে আছে এমপিওভুক্তির নির্ধারিত শর্তপূরণ করতে না পারার বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতার কথা।

নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির লক্ষ্যে গত বছরের আগস্টে আবেদন নেয়া হয়েছিল। সে অনুযায়ী এমপিওভুক্তির চার শর্ত হচ্ছে- প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক স্বীকৃতি, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এবং পরীক্ষায় পাসের হার। প্রতিটি মানদণ্ডের জন্য ২৫ নম্বর রাখা হয়। প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে যোগ্যতা নির্ধারণ করতে গিয়ে দেখা যায়, অনেক উপজেলায় একটি প্রতিষ্ঠানও ফিটলিস্টে স্থান পায়নি। আবার একই উপজেলা থেকে ৮-১০টি প্রতিষ্ঠানও জায়গা পেয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নরসিংদীর এক সংসদ সদস্য ৩টি প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ বিবেচনায় এমপিওভুক্ত করতে ডিও লেটার দিয়েছেন। ওই প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ বিবেচনায় নেয়ার পক্ষে তিনি যুক্তি দিয়েছেন- প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে এলাকার শিক্ষায় বিশেষ করে নারী শিক্ষায় বিশেষ অবদান রাখছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক সংসদ সদস্য এক প্রতিষ্ঠানের নামে ডিও দিয়ে উল্লেখ করেন, প্রতিষ্ঠানটি হাওর-বাঁওড়, চরাঞ্চল নিয়ে গড়া বন্যাপ্রবণ ও পশ্চাৎপদ এলাকায়। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে কাজ করে যাচ্ছে।

এমপিওর তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম সংবলিত সার-সংক্ষেপ আলাদাভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ। এর মধ্যে কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগ দুই ভাগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা তুলে ধরেছে। সে অনুযায়ী এমপিওর জন্য সবধরনের (৪টি) শর্ত পূরণ করা মাদরাসা ৪৯৪টি।

যদি স্বীকৃতির মেয়াদ বিবেচনা না করা হয় তাহলে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৫১টি। অপরদিকে সব শর্ত বিবেচনায় নিলে এমপিওর জন্য বিবেচনায় আসা কারিগরি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৩৬টি। স্বীকৃতির মেয়াদের শর্ত শিথিল করলে এই সংখ্যা ৪৪৫টি। সার-সংক্ষেপে ৮ ধরনের মাদরাসা এবং ৬ ধরনের কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগও আলাদাভাবে এমপিওভুক্তির তালিকা তৈরি করছে।

এতে নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল ৬১৫টি, মাধ্যমিক স্কুল ৭৯৮টি, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ৯১টি ও ডিগ্রি কলেজ ৪৪টি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ তালিকায় আরও আছে দাখিল মাদরাসা ৩৬২টি, আলিম মাদরাসা ১২২টি, ফাজিল মাদরাসা ৩৮টি এবং কামিল ২৯টি। সবমিলে ২ হাজার ৭৬২টি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা এমপিওভুক্তির যোগ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত আছে। সর্বশেষ ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের জুনে ১ হাজার ৬২৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনোটি বাদ না গেলে আরও অন্তত আড়াইশ’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশেষ বিবেচনায় তালিকাভুক্ত করা হবে। গত আগস্টে বিজ্ঞপ্তি দিলে ৯ হাজার ৬১৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আবেদন করেছিল। এসব প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে লাগবে ৪ হাজার ৩৯০ কোটি ১২ লাখ ৫ হাজার টাকা।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028378963470459